একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না?ও বন্ধু..-আনোয়ার হোসেন মিছবাহ্

প্রকাশিত: ৩:৩০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৪

একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না?ও বন্ধু..-আনোয়ার হোসেন মিছবাহ্

ভারতের ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের অতিবৃষ্টির অভিশাপে পানিতে প্রাণ ওষ্ঠাগত বাংলাদেশের ১২ টি জেলায়।শরতের আবহাওয়ায়ও বাংলাদেশের নদনদীতে পানি বাড়তে পারে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র থেকে এমন সতর্কবার্তা গত ১৮ আগস্ট ২০২৪ খ্রস্টাব্দে দেওয়া থাকলেও বন্যার তলানিতে তলিয়ে যাবে প্রানীর প্রাণ ও মানুষের জান,এমন তথ্য পাওয়া যায় নি।যৌথ নদী কমিশনের ৫টি প্রধান কর্তব্য পূর্বাভাস হলেও প্রতিবেশী দেশ তাও দিতে না পারায় স্মরণকালের মধ্যে ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হলো বাংলাদেশ।আজ দেশের পূর্বাঞ্চলের ১২ জেলায় ৩৬ লক্ষ ৪৫ হাজার লোক পানি বন্দি।মারা যাচ্ছে মানুষ।ডুবে যাচ্ছে শিশু।তলিয়ে যাচ্ছে নারী।বাসাবাড়িতে ছাদের উপরে জল ওঠে তলে নিয়ে গেছে মানুষের সহায় সম্বল।দিন গতে ভরে উঠছে নিখুঁজের তালিকা।তলিয়ে যাওয়া পানিতে ভেসে গেছে পুকুরে জিয়ানো মাছের সম্বল।গোলার ধান।মাঠের ফসল।বিদ্যুৎহীন ঘুটঘুটে অন্ধকার।বিচ্ছিন্ন মোবাইলের নেটওয়ার্ক।সড়ক বন্ধ।যানবাহন বন্ধ।যোগাযোগ ভীতিকর।
এমন কঠিন মৌশুমে বিশেষজ্ঞরা এর কারন চিন্তিত করলেন-দু দেশের অতিবৃষ্টি।লঘুচাপের কারণে ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার বিলোনিয়া নদীতে গত ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টির রেকর্ড দাঁড়ালো ১৪৬ মিলিমিটার। সাথে যুক্ত হলো বাংলাদেশের ১৯ আগস্ট ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু হওয়া অতিবৃষ্টি।এই অতিবৃষ্টি আবার ২০ আগস্ট ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মাত্রা বৃদ্ধি নেয়-১৫০ থেকে ৩০৪ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ডে। এরমধ্যে কুমিল্লায় ১৮৮ মিলিমিটার,যা গত ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের পর এমন ঘটনা দেখতে পেলো কুমিল্লার মানুষ।আবার ফেনীর পরশুরামে ৩০৪ মিলিমিটারের সাথে নতুন ইতিহাস যুক্ত হলো ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের পর।ইতিহাসে বন্যায় আক্রান্ত হওয়ার পর ৩৬ বছরে অনেক বন্যা হলেও ফেনীবাসীকে হঠাৎ এমন দুর্যোগ ভয়ানক কাবু করবে কেউ ভাবে নি। তাছাড়া ১৯ আগস্ট ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু হওয়া অতিবৃষ্টি ফেনীর জন্য বিগত ৫৩ বছরের ইতিহাস অতিক্রম করবে জানা ছিলো না।
বিশেষজ্ঞরা বলেন;ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাতের পানিতে যদি বাংলাদেশের উজানের অভিশাপ তিস্তা,ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা ফুলে উঠে,তবে বাংলাদেশের নদীর অববাহিকায় গড়াতে সময় নেয়-প্রায় ৩ থেকে ৭ দিন।কিন্তু ত্রিপুরার পানি সময় দিতে না রাজি।উজানে বৃষ্টি হয়েছে তো বাংলাদেশে ৫ থেকে ৮ ঘন্টার মধ্যে গড়িয়ে আসা তার নেশা।আগাম কোন বার্তার তোয়াক্কা না করেই ৮ ঘন্টার মধ্যেই ভাসিয়ে বাড়ি ছাড়া করে ফেনী নোয়াখালী এবং চট্টগ্রামবাসীকে।যা বর্ষার বিদায়কালেও অসহ্য প্রমাণ।
তাছাড়া বৃষ্টির দায়দায়িত্ব পুঁজি করে বন্যার অন্য অভিযোগও প্রতিবেশীর বেলায় আগে বাড়ায় সাহাদাৎ আঙ্গুল!সোস্যাল মিডিয়ার অতি কল্যাণে আমরা দেখি-১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের পর আবারও গেইট খুলে যাচ্ছে ত্রিপুরার ধলাই জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরের প্রায় ৪১ বর্গকিলোমিটারের বিশাল জলাধার।ও প্রায় ৩০ মিটার নিম্ন উচ্চতার ‘ডুম্বুর’ বাঁধে ‘স্ন্যাপ গেটের’ ৩ পাল্লার মধ্যে ১ টি।জানানো হয়,ত্রিপুরার অতিবৃষ্টিতে নাকি গোমতী নদীর জলস্তর বেড়ে ‘ডুম্বুর’ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধের জলস্তর পৌঁছে যাওয়া তার কারণ!কিন্তু তাও নয়,অতীত ঘেঁটে আমরা দেখেছি,গঙ্গা বা তিস্তার পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পেলে ভারত আগেভাগে আবাস দিতে পারলেও গোমতী ও মাতা মূহুরীর আগাম আভাস দিতে পারে না।হয়তো কী না জানি না।পানি প্রবাহ কালের সময় অতি কম হওয়ার জন্য হলেও হয়তো হতে পারে।আবার হয়তো না ও হতে পারে।তবুও প্রতিবেশী বন্ধুর ভাবনায় বহন জরুরি ছিলো;তাঁদের থেকে ছেড়ে দেওয়া পানির এমন করাল প্রবাহের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত আছে কী না!সে দেশ তো নীচুভূমির জন্য বড়ো পড়োপড়ো।তার মাঝে তাঁর অভ্যন্তরের নদীর অববাহিকাও ধারণ ক্ষমতার চেয়েও ছোট।বাংলাদেশের জন্য এমন নাসিক্য মায়া সহনের অতীত!

তবুও ভারত বাংলাদেশের মধ্যে ৫৪ টি যৌথ নদীর পানি ও বন্যার তথ্য বিনিময় সঠিক ও দ্রুত সময়ে পাওয়া গেলে অন্তত একটা প্রস্তুতি রাখা যেতো।কিন্তু তা না করে হঠাৎ খুলে দেওয়া গেটের জন্য আন্তর্জাতিক নীতির খেলাপি হয়েছে বলে প্রতিবেশী কে বলতে হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের মতামত থেকে।কেনো না এমন মতামতের জন্য সোস্যাল মিডিয়া বহুধায় আগুয়ান।

উঁচুভূমির দেশ ভারত থেকে গড়িয়ে যাওয়া পানির জন্য নীচুভূমির বাংলাদেশ কে বার বার দুঃখের সাগরে চোখের জল নিলাম দিতে হয়।তবুও পিঠ সোজা করতে পারে মানুষ।দুঃসময়ে দূর থেকে এক দৌঁড়ে কাছে এসে যায়।হাতের আঁজলায় মুছে দেয় দুঃখভাগীর চোখের জল।কাঁধে তুলে নেয় খাবারের বস্তা।পানি সাঁতরে পার করে আনতে পারে মানুষের শরীর।কাঁধে নিতে পারে অসহায় পশুপাখির ভয়ের কায়া।বুকের অ দেখা মখমল বিছিয়ে শিশুকে দিতে পারে সাহস।নারীকে দিতে পারে ভরসার জ্যোতি।পোকামাকড় বা সাপের ভয়কে তাড়াতে পারে কার্বোলিক বা ফিনাইলে।এমন সহনীয় কাজে বরাবর জেগে ওঠে দেশের মানুষ।জেলার জমিদার এমন কী ইউনিয়নের শুকনোয় বা ভিজে থাকা মানুষ।কেউ বরবাদ থাকে না।সজতনে বেরোয়।বেরিয়ে আসে সাহায্যের হাতে।

আসুন,অফিস বা শ্রমের পাড়ায় প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা কে বলি;দূর্গতের জন্য অন্তত এক দিনের বেতন কেটে নিন।পাশের মানুষের কাছে হাত পেতে নিয়ে যাই,অন্ততঃ স্টমাকের এক বেলার যোগান।একান্ত অপারগে একটি প্যারাসিটামলের পয়সা।একটা দেশলাই।একলা কলাগাছের ভেলা।পারলে একটা নৌকা।একটা হাতাগাড়ি।আলনার পেছনের হলেও পড়ে থাকা না ব্যবহারের একটি জামা।দিই;একটু একটু করে বহুজনে পাহারা।একচিলতের জমি হলেও একটুখানি আশ্রয়।দিই;শৌচাগারের নিরাপদ সংস্থান।অর্থাৎ যে যা পারি।যা আছে মনজ সম্বল।

কেনো না দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আহবানের সাথে সাধারণ মানুষ সবসময়ের মতো এখনও উদ্ধার ও সামান্য সংস্থানে মশগুল।তবুও আরও আরও চাওয়া দূর্গত মানুষের।কিন্তু পর্যাপ্ততার অভাবে এখনও হাহাকার সর্বত্র। আসুন,এগিয়ে যাই।আর কাজের ফাঁকে ফাঁকে গুনগুন করে বলি-
“মানুষ মানুষের জন্যে,
জীবন জীবনের জন্যে।
একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না?
ও বন্ধু..
.

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।