ছুটিবারে ঘুরে আসুন কাশফুলে-আনোয়ার হোসেন মিছবাহ্

প্রকাশিত: ১২:০৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২, ২০২৪

ছুটিবারে ঘুরে আসুন কাশফুলে-আনোয়ার হোসেন মিছবাহ্

জিরো থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান নেওয়া যে স্থানটি বৈকালিক বেড়ানোর জন্য অনন্য হয়ে উঠতে পারে-তার নাম পূর্ব শাপলাবাগের মিরাপাড়া।দু এক আবাসিক প্লট কে ঘিরে গ্রীণসিটির বুক বরাবর পা নামালেই অনাবিল আনন্দে নেচে ওঠবে মন। আকাশ- মাটি মিলে কাশফুল এদিক ওদিক থেকে যখন ডেকে যাবে-

“আয় তবে সহচরী , হাতে হাতে ধরি ধরি
নাচিবি ঘিরি ঘিরি, গাহিবি গান।
আন্ তবে বীণা–
সপ্তম সুরে বাঁধ্ তবে তান॥
পাশরিব ভাবনা, পাশরিব যাতনা,
রাখিব প্রমোদে ভরি দিবানিশি মনপ্রাণ।
আন্ তবে বীণা–
সপ্তম সুরে বাঁধ্ তবে তান॥
ঢালো ঢালো শশধর, ঢালো ঢালো জোছনা।
সমীরণ, বহে যা রে ফুলে ফুলে ঢলি ঢলি।
উলসিত তটিনী,
উথলিত গীতরবে খুলে দে রে মনপ্রাণ॥”

মনে হবে না তখন- এ ডাক তো ছোটবেলার ই ডাক।তুকুৎ,বলে লুকিয়ে যাবার ডাক।এ ডাক ঝা! বলে বেরিয়ে আসার ডাক। মনে হবে; আহা! কতোদিন- কতোদিন,শোনা হয় না এ ডাক। আপনাকে আপনার কাছে মনে হবে; নিজেকে নিয়ে সেই ছোটকালেই চলে গেছেন।কাশের বন আপনাকে আকূল হয়ে টানবে। আপনি তার বুক ছোঁবেন।পেট ছোঁবেন।আংগুল জল থেকে জুতা বাঁচাবেন।সাঁই করে উড়িয়ে দেবেন জুতা মোজা।আপনার মনে হবে,দেহ বসন আলগা করে রঙিন হয়ে সাজার।আপনি আঁড়াল খুঁজবেন।একটুকু সামান্য আঁড়াল।তারপর মনে মাখবেন শাদার ভালে সবুজাব টিপ।মনোরঙে রঙ্গীন হয়ে গাল ছোঁয়াবেন; কাশের গায়ে-গায়ে।শরীর ছোঁয়াবেন;কাশের মখমলে শরীরে।মন ছোঁয়াবেন;গানে গানে-
“শরত-আলোর
কমলবনে
বাহির হয়ে বিহার করে যে ছিল মোর মনে মনে॥
তারি সোনার কাঁকন বাজে আজি প্রভাতকিরণ-মাঝে,
হাওয়ায় কাঁপে আঁচলখানি– ছড়ায় ছায়া ক্ষণে ক্ষণে॥
আকুল কেশের পরিমলে
শিউলিবনের উদাস বায়ু পড়ে থাকে তরুতলে।
হৃদয়মাঝে হৃদয় দুলায়, বাহিরে সে ভুবন ভুলায়–
আজি সে তার চোখের চাওয়া ছড়িয়ে দিল নীল গগনে॥”

গানে-গানে চোখ ফেরাবেন বুনো প্রজাপতির ডানায় ডানায়।আপ্লুত হয়ে পড়বেন-ঝপ্ করে পড়া ফিঙের ঠোঁটের উদর তাগিদে।মনে হবে,এ যেনো এক পাগল করা,হৃদয় হরা অতিক্রান্ত সময়।নিজের পেট কেও মনে হবে-কী জানি,কী চাইছে।গালের কাছে জল চাইলেই দেখবেন;ছুটোছুটির ক্লান্তি ঘুঁচাতে লক লক করে ওঠছে জিহ্বার আগা।আপনি ঝালমুড়ি খুঁজবেন।খুঁজবেন;কুড়মুড়ে পেঁয়াজু।পকেট হাতড়াবেন।টাকা বের করে কাগজের ঠোঙা নেবেন।
এরপর মুচকি হেসে বলে উঠবেন-
যদি কাশের ফুলে ফুলে হৃদয় ওঠে দোলে
মনে রেখো আমি তবে আসছি।
যদি আকাশ খুলে খুলে মেঘেরা থাকে ঝুলে
মনে রেখো আমি তবে আসছি।
যদি বিলের ঝিল-মিলে শাপলা চোখ তুলে
মনে রেখো আমি তবে হাসছি।
যদি আকাশ মাটি মিলে শিশির চোখ তুলে
মনে রেখো আমি তবে ফাঁস-ছি।
যদি প্রিয়ার চোখ ছলে লুকায় পলে-পলে
মনে রেখো আমি তবে নাশ-ছি।

কাশফুল শরতের ফুল।কাশফুল প্রতিবেশী ফুল।নদীর তীরে তীরে,ছোট টিলার বুকে,বিল-ঝিলের পিঠে বা ধানক্ষেতের আল ঘেঁষে শরৎ ঋতুকে ডাকে।এলোকেশে ডেকে আনে ঢাকের আওয়াজ।নবান্নের আয়েশি আমেজ।
কাশফুল ফুলের নামে পরিচয় নিলেও বহুবর্ষজীবী ঘাসজাতীয় উদ্ভিদের নামে সুদূর রোমানিয়া থেকে এসে দখল নিয়েছে বাংলায়।তাই বুঝি শরতের হাওয়ায় হাওয়ায় মাতম তুলে বলে-
“কাঁশবনে এক কন্যে,
তুলেছে কাঁশের ময়ূর চূড়া
কালো খোঁপার জন্যে।”
বুঝি,খোঁপা কে লুকানোর জন্য এর উচ্চতা ও গলা কে আদর করার মতো প্রায় ৩ মিটারের মতো উচ্চতা নেয়।আর মৌসুমে মশগুল হয়ে নদী ভাসা পলি,বৃষ্টিধোয়া নবযৌবনা মাটিকে ঘিরে বিস্তার করে থাকে প্রতিবেশে।

প্রকৃতির মায়াবি মৌতানে আসা মোহনীয় রূপের এ কাশফুল মানুষের কাছে আসলে বড়ো কুলীন হয়ে আসে।মনে হয় যেনো শূভ্রবসনের স্কুল ফেরা কোন তন্বী।অথবা ছোটকালে শাদার বসনে প্রিয়ার পরে আসা প্রস্থ ভালের সবুজ টিপ পরা আরও এক নবযৌবনের তন্বী।যাকে বার বার ডাকতে ইচ্ছে করে-
“আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ,আমরা গেঁথেছি শেফালি মালা
নবীন ধানের মঞ্জরি দিয়ে সাজায়ে এনেছি বরণ ডালা।”

যদি মনে হয় ছুটিবারে ঘুরে আসবেন-তবে ক্যামেরা নিন।শরতের পোশাক শাদা হলেও ক্যামেরার লুকিং এ রঙিন হওয়া চাই।কেশের খোঁপায় গুঁজে নিন ডালে হাসা নবীণা ফুলের হাসি।

যেতে হবে সিলেট শহরের যে কোন স্থান থেকে রিকশা,অটোরিকশা বা পদব্রজে।ভাড়া পড়বে মাত্র ১০ টাকা থেকে দুশ টাকার মধ্যে।

আমার তো মনে হয়-একবার গেলে এখানে বারবার ফিরে আসতে আমার সাথে আপনারাও দাবী তুলবেন-পূর্ব শাপলাবাগের রাস্তা ধরে যেতে যেতে যে স্থানটি মিরাপাড়ায় মিশে গ্রীণ সিটি হয়েছে।
তাকে পর্যটন মর্যাদায় সিক্ত করা হোক।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিষ্ট