*ঝগড়া* -আনোয়ার হোসেন মিছবাহ্

প্রকাশিত: ৩:০০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২২, ২০২৪

*ঝগড়া* -আনোয়ার হোসেন মিছবাহ্

অণুগল্প
——————
কথা যে খুব বড়ো ছিলো তেমন নয়।বড়ো মুখে ছোট কথা বললে দোষের কিছু না হলেও ছোটো মুখে বড়ো কথা বললেই বিপত্তি!কলপাড়ের ঘটনাটা এমন ই।বললেন-সমিরন।কিন্তু ঘটনা এতোদূর গড়াবে ভাবনার ত্রি সীমাও অতিক্রম করেনি।বাকি এক সীমা অনুমানে ছিলো।যে কিছু একটা হবে।কারণ এইটাই,আমিরের বউ।আমিরের বউ মানে কিছু একটা হয়ে যাওয়া।

কবলার বা মুচি বসবার মতো করে ঘরের দেউড়ি বরাবর বসেছিলেন সমিরন।হাতে একটা ক্যামেরা।আর ক্যামেরার পাছায় স্টিলের নল দেখে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ইনি কাতুকুতু চ্যানেলের সাংবাদিক।ইউটিউব থেকেই চেনেন সমিরন।এতো হাসাতে পারে লোকটা..!লোকটা কে দেখলেই হাসানোর আগেই যেনো হাসতে থাকে সমিরনের নাক,মুখ,বাজু,শরীর।আজ নিজের চোখেই দেখে নিজেকে ভাগ্যবতি মনে করেন সমিরন।ইশারায় যাকে ডাকলেন,তাঁর নাম সাংবাদিক বিষু বিশ্বাস।ফেইসবুক কিংবা মোটরবাইকের পাছায়ও এই নাম লেখা থাকে।সবাই চিনে তাঁকে।ভয় পায়।ক্ষ্যাপালে কী জানি কী হয়!অনলাইন প্রেসক্লাবে তার দৌড়ঝাঁপ লক্ষনীয় হলেও করা হয়ে ওঠেনি চ্যানেল বা নিউজপোর্টালের নিবন্ধন।তারপরও বিষু বিশ্বাসের সরাসরি প্রভাব প্রেসক্লাবে!অন্য অনেকের আইনি জটিলতাকে সহজ করে দিতে তার জুড়ি মেলা ভার।নিবন্ধন না পেলেও প্রভাবের কারণে এটুকু বিশ্বাস রাখেন টাকায় কী না হয়!তো-সমিরন সাংবাদিকের পাছা বরাবর মোটর সাইকেলের পাছায় সাংবাদিকের নাম পেয়ে বানান করে করে উদ্বার করেছেন বিষু বিশ্বাস।সমিরন ইশারায় বিষু বিশ্বাসকে ডাকেন।ইতিউতি করে,ডান-বামে চোখ ঘুরিয়ে দক্ষিণ বরাবর চোখ ফেরান।
-আপনি ক্যান আইছেন,আমি জানি।মরা পোলার লাইগাই তো?হেইডা আপনেরে আমি ছাড়া কেউ কইবো না।আপনের চ্যানেল আমি দেখি আর হাসতে হাসতে ফিট লই।তয় বাজান,আইজকা জের লাইগা আইছেন-
আইজ হেইডা নাই।আইজ খালি দুঃখ আর দুঃখ!আইজ হাসি নাই।হাসতেও পারুম না।যে পোলা নানি নানি কইরা দৌড়াইলো হেই পোলা আইজকা নাই।কন,ক্যামনে হাসুম!আপনেরে দেইখাও আইজ হাসি আইবো না।আইজকা হাসির কিছু পাইবেন না।তয় দুঃখের ঘঠনা কইতে পারুম!
-বলেন।
-তাইলে হুনেন-
-যে বেডিরে পুলিশে নিছে।হেই বেডি ভালা না।
-তার পর।
-লটর পটর করতে গিয়া যে কলোনি থেকে ধরা খাইছিলো আমির।হেই কলোনি তে থাকতো নাছিমার মা ও।হে ও ছিলো বেইস্যা। কামের নাম কইরা ঘরে জামাই থুইয়াও গতর বেঁছতো!হের মাইয়া নাছিমা।হে ও এই কাম করে।আমির রে ঘুরে থুইয়াও বাইরে যায়।মাইডারে দেখলেই আমার ক্যান জানি ঘিন্না আহে!ওয়ার থু!তয় আমির পোলাডা ভালা।আমারে খুব মানে।কথায় আছে না-মা ভালা তো ঝি ভালা।ভালা নাই তো নাই।নাছিমা ও হইছে এমন!
কার মুখ দেইখা উঠছিলাম রে বাজান।এমনটাও দেখতে হইলো!খালি আমি ক্যান-
এই কলোনির ভোলার মা,শফিকের মা এমন ভবিষ্যৎ বানী আগেই দিছিলো।যা শুরু করছে এই বেডি!বেশি দিন টিকবো না!আইজকা তার ফল হইলো।
সমিরন বলেছিলেন-“কার মুখ দেইখা উঠেছিলাম রে বাবা!মনে না রাখলেও বিষয়টি মনে আছে।আইজকা ঘর থাইকা বাইর হইয়া ই একটা কাউয়ারে একলা-একলা কা-কা করে কলপাড়ে উড়তে দেখছিলাম।তখন থাইকাই মনটা ছ্যাৎ-ছ্যাৎ করছিলো।বড়ো অলক্ষুণে এই ডাক!আমি প্রত্যেকদিন ঘুম থাইকা সকাল-সকাল উডি।উইট্ট্যাই যেই কাজডা প্রথম করি-হেইডা হইলো,ঐ টাট্টি তে গিয়া পেশাব করা।এরপর ছাই দিয়া দাঁত ঘইষা রাইতের ভিজান্যা ভাত খাওয়া।আইজকা আর ভাত খাইতে যাওন্যের আগে-আগে দেখি,কান্দে একটা পেটিকোট আর লাল গামছা নিয়া দাঁত ঘষতে-ঘষতে আসতাছে নাছিমা।তার পিছে সুদিপা বানু ও হের সাজন।হাতের বদনা ডা থুইতে-থুউতে দেখি,সুদিপা কল চাপতেছে।আর নাছিমা চিপারে ঘইষা মাইজা পরিষ্কার করতাছে হারা রাইতের জঞ্জাল!।আর গুনগুন কইরা গান গাইতেছে-কি জানি গানডা?-হ,’এক খান পান চাইলাম পান দিলে না,তোমার সঙ্গে কিসের পিরিতি’…সুদিপা হাসছে মিটিমিটি।
সমছু মিয়ার দুই ঘরের এই কলোনি তে সুদিপা আইছে মাত্র ৯ মাস।হের মধ্যে ই দুইজনের ভাব দেখে গায়ে জ্বলে।
উকিলের বাসায় কাজ করে হারা মাসে পনেরশো টেকা পায় সুদিপা।আর মাঝে মইধ্যে গতর খাটায়।হেরে সুযোগ দেয় নাছিমা ই।গতকাইল হইছে কী-কাউন্সিলার সাব রে নিয়া শুইছিলো নাছিমা।আমির কাউন্সিলাররে দেইখা ঘরে ঢুকে নাই।গেছে সুদিপার ঘরে।কাসিম ঘরে আছিলো না হেই সুযোগে রাইতে সুদিপার লগেই শোয়।হেইডা দুইজনের অদল-বদল আর কী!মনে লয় হেই নিয়া ই বাঁধে ঝগড়া।কারণ সুদিপা কাসিমের বউগোর মইধ্যে সুন্দর।হেরে পাওনের লাইগা মরামারিও বাঁধে কলোনির মধ্যে!এই নিয়া সুদিপা নাছিমা রে কয়;তুই একটা ছিটারের বাইচ্ছা ছিটার!আমারে পরশু খাইসটা বেডার লগে বহাইয়া ৫০০ টাকার মইধ্যে ই ২০০ টাকা মাইরা দিলি!ছোটলোক কোনহানকার!এই হইলো ঝগড়া।”
ব্যাস,এই ঝগড়া নাকি প্রথমে চুল বরাবর।পরে কিলের ঘাড় বরাবর।এরপর সুদিপার ছেলে সাজন কে নিয়ে টানা হ্যাচড়া!এমন করতে-করতে সুদিপার ছোট মুখের বড়ো কথা এক সময় সমাপ্তির পথে যায়।
ডাক্তার যখন বলেন-“ছেলেটারে দশ মিনিট আগে আনলে বাঁচানো যেতো।আমরা সরি,কাউন্সিলর সাহেব!”

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিষ্ঠ।