দোকান ভাড়া নিয়ে মালিক পক্ষকে হয়রানী করছেন বিএনপি নেতা আহমদ রেজা

সিলেট নিউজ ওয়ার্ল্ড
প্রকাশিত নভেম্বর ২৪, ২০২৫
দোকান ভাড়া নিয়ে মালিক পক্ষকে হয়রানী করছেন বিএনপি নেতা আহমদ রেজা

বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট আহমদ রেজার বিরুদ্ধে এক কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে নগরীর নাইওরপুল এলাকার বাসিন্দা আলহাজ্ব মো: সাইফুল হক বদরুল বলেছেন, বিএনপি নেতা আহমদ রেজা আমার মার্কেটে দোকান ভাড়া নিয়ে দোকানটি জোরপূর্বক দখল করে আছেন, তাকে কিছুতেই সরাতে পারছি না।

সোমবার বিকালে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের ড: রাগীব আলী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে নাইওরপুলস্থ বঙ্গবীর ৩৬ এর বাসিন্দা এই ব্যবসায়ী লিখিত বক্তব্যে বলেন, নগরীর পূর্ব মিরাবাজারস্থ আমার নামীয় আলহাজ্ব মো. সাইফুল হক বদরুল মার্কেট ফার্ণিচার ব্যবসার জন্য ভাড়া দিয়ে চরম হয়রানীর সম্মুখীন হচ্ছি। বিয়ানীবাজার উপজেলার পশ্চিম গুঙ্গাদিয়া গ্রামের মুহাম্মদ আতিকুর রেজার পুত্র বিএনপি নেতা আহমদ রেজা ওই মার্কেট ভাড়া নিয়ে মিথ্যাচার ও প্রতারনার আশ্রয় নিয়েছে। ৫ বছর মেয়াদী দোকান চুক্তিনামার মেয়াদ শেষ হওয়া সত্বেও আহমদ রেজা জোরপূর্বক আমার মার্কেট দখল করে আছে। মার্কেট তার কাছ থেকে উদ্ধার করতে হলে আমার কাছে ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। আমার অনুমতি ছাড়াই দোকানের দরজা, গ্রীল, শাটার ইত্যাদিতে সংস্কার কাজ করিয়ে জোরপূর্বক নিজের দখল প্রতিষ্ঠার অপচেষ্ঠায় লিপ্ত। তাই আমি নিরুপায় হয়ে আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছি। আহমদ রেজা তার রাজনৈতিক পরিচয় লুকিয়ে আমার কাছ থেকে দোকান ভাড়া নেন। জাতির বিবেক সাংবাদিক ভাইদের কাছে আমার এই দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে মার্কেট উদ্ধারে আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।

তিনি আরো বলেন, আপনাদের সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি, ২০২০ সালের ১ মার্চ আলহাজ্ব মো. সাইফুল হক বদরুল মার্কেট ফার্ণিচার ব্যবসার জন্য ভাড়া নেন বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপি সভাপতি আহমদ রেজা। তার বর্তমান বাসস্থান হচ্ছে শাহপরাণ থানাধীন উর্মী ৪১/বি শিবগঞ্জ এবং ব্যবসায়ীক ঠিকানা-জালালাবাদ ফার্ণিচার, পূর্ব মিরাবাজার,সিলেট। ৫ বছর মেয়াদী চুক্তিপত্রে মাসিক ভাড়া নির্ধারিত হয় ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা এবং ভাড়ার মেয়াদকাল নির্ধারণ হয় ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। জামানত হিসেবে জমা রাখেন ৬ লক্ষ টাকা। এর এক বছর পরেই রেজার অনুরোধে ২০২১ সালে আগস্ট মাসের ভাড়া বাবদ ১ লক্ষ টাকা কর্তন করলে তার জামানতের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ লক্ষ টাকায়। ওই চুক্তিপত্রের শর্তানুযায়ী ভাড়াটিয়াকে তিন মাস আগে দোকান ছাড়ার জন্য নোটিশ প্রদানের কথা উল্লেখ রয়েছে। আমি চুক্তিনামার আলোকে দোকান ভাড়ার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার তিনমাস আগে ব্যবসাপাতি স্থানান্থর করে দোকান ছাড়তে প্রথমে মৌখিক অনুরোধ জানাই। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হলে লিখিত এবং পরবর্তীতে তার কাছে উকিল নোটিশ প্রেরণ করি। তাতেও আহমদ রেজা কোন অবস্থাতেই দোকান না ছাড়ার হুমকী দিয়ে দোকান দখলমুক্ত করতে হলে আমার কাছে ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি বিষয়টি স্থানীয় মুরুব্বিদের অবগত করি। স্থানীয় সালিশ ব্যক্তিবর্গ দোকান উদ্ধারে উদ্যোগ নিলেও আহমদ রেজার একগুয়েমির কারণে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয় ।

তিনি আরো বলেন, আপনারা জেনে অবাক হবেন, আমার ভাড়াটিয়া দোকান জবর দখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। সে আমাকে নানা ভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। যার কারণে জানমালের নিরাপত্তায় আমি গত ২৯ মার্চ কতোয়ালী থানায় একটি জিডি এন্ট্রি দায়ের করি। কোতোয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুহাম্মদ শামসুল হাবীব বিষয়টি তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পান ও আদালতে প্রসিকিউশন দাখিল করেন। আহমদ রেজা অসৎ উদ্দেশ্যে ভাড়া নিয়ন্ত্রক সহকারী জজ আদালতে আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। মিথ্যা ও কাল্পনিক অভিযোগ এনে দায়ের করা এই মামলাটি সম্পূর্ণ দূরভিসন্দিমূলক।

তিনি বলেন, তার সাথে দোকান ভাড়ার বিষয়টি সু-স্পষ্টভাবে তিনশত টাকার নন জুডিশিয়ার স্ট্যাম্পে লিখিতভাবে এবং স্বাক্ষীদের সম্মুখে এই চুক্তিনামা সম্পাদিত হয়েছে। যা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। অথচ, রেজা এখন জামানতের টাক। ১২ লক্ষ টাকা প্রদান করেছে এবং আয়করের দোহাই দিয়ে ১০ বছরের চুক্তির কথা বলে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। যা মিথ্যাচার ও প্রতারনার শামিল বলে মনে করি। এছাড়া, চুক্তিনামা কোথাও উল্লেখ নেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে তিনি মামলা করতে পারবেন। দোকান ভাড়া দিয়ে আমি এমন হয়রানীর সম্মুখিন হব তা কল্পনাও করিনি। এক পর্যায়ে আমি নিরুপায় হয়ে গত ১৪ এপ্রিল মহানগর হাকিম আদালতে চাঁদাবাজি ও দোকান দখলের অভিযোগে আহমদ রেজাকে প্রধান আসামী করে মামলা দায়ের করি। মামলায় আরো ৩ জন আসামীর নাম উল্লেখ রয়েছে। আদালত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কতোয়ালী
থানাকে নির্দেশ প্রদান করেছেন। আহমদ রেজা জোরপূর্বক দোকান মেরামত ও সংস্কার কাজ করলে আমি বাধা প্রদান করি। আমার নিষেধ সত্বেও আগ্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে গেলে সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা চাইলে আদালত তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। এছাড়া, বিগত ১৩ সেপ্টেম্বর এসব বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবরেও একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।

মার্কেটের মালিক আরো বলেন, আমার ভাড়াটিয়া আহমদ রেজা উচ্চ শিক্ষিত ও বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও তার পরধন লিতা আমাকে হতবাক করে দিয়েছে।রাজনীতিতে তার মতো ব্যক্তিকে দিয়ে সাধারণ মানুষ কতটুকু উপকৃত হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। আমার দোকান ছাড়তে ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। অন্যতায় দোকান ছাড়বে না বলেও হুশিয়ারী দিয়ে সিলেট শহরে এ ভাবে অনেকের কাছ থেকে কৌশলে রেজা চাঁদা আদায় করেন বলেও জানান। আমি তার বিরুদ্ধে সিলেট জেলা বিএনপি এবং মহানগর বিএনপির দায়িত্বশীলদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাইনি। রেজা সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আইনজীবী সমিতি কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েও কোন সুফল পাইনি। আহমদ রেজা বিভিন্ন লোকজনকে হয়রানী ও আইন পরিপন্থী নানা কর্মকান্ডে লিপ্ত। ২০২২ সালে তার বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকার চেক ডিজনার মামলা দায়ের হয় আমলগ্রহণকারী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, জগন্নাথপুর সুনামগঞ্জে। মামলাটি দায়ের করেন জগন্নাথপুর কেশবপুর (শ্রীরামপুরের) মো. আলী রাজা। এ ছাড়া, ২০২১ সালে মীরাবাজার আগপাড়া
মৌসুমি ৮২ নম্বর বাসায় ভাড়া থাকাকালে চুরি করে বিদ্যুৎ সংযোগের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় বিদ্যুৎ বিভাগের দাবিকৃত ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৭৩৬ টাকা ন্যাশনাল ব্যাংকে পরিশোধ করে বিদ্যুৎ আদালত থেকে খালাস পান। ২০২০ সালে হোটেল সুপ্রিমের পাশে আমার শো রুমের পাশ থেকে আমার মালিকানাধীন ৬টি বিদ্যুৎ মিটার হাওয়া হয়ে যায়। আমার ধারণা তিন কর্মচারীসহ এতেও তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- ভুক্তভোগীর পুত্র আবির আহমেদ, স্থানীয় মুরব্বী ছাদ উদ্দিন, সাজ্জাদ আহমদ।