গ্রিস-তুরস্ক সীমান্তে লাশ আর লাশ

প্রকাশিত: ৭:৩১ পূর্বাহ্ণ, |                          

গ্রিস-তুরস্ক সীমান্তে বেওয়ারিশ লাশের ভিড়।

তুরস্ক সীমান্ত থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে সিদিরো গ্রামে বেশ কয়েক বছর ধরেই দাফন করা হয় নাম না জানা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মৃতদেহ। স্থানীয়দের মতে, অন্তত দুইশ লাশ শায়িত আছে সেখানকার কবরগুলিতে।

সিদিরো গ্রাম তুরস্ক থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে। যেসব অভিবাসনপ্রত্যাশীরা অতিরিক্ত শীতে, এভ্রোস নদীতে ডুবে বা দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের দাফন করা হয় সেখানে। কিন্তু মোট কতজনের লাশ এখানে দাফন করা হয়েছে, তা জানেন না সেখানকার মেয়র বা স্থানীয় ইমাম।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে লাশ পচে যাওয়ায় তারা নারী না পুরুষ তা-ও জানা যায়নি। স্থানীয় ইমাম ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, “আমি এখানে আসার অনেক আগে থেকেই এই দাফনের প্রথা চলছে।” তিনি সিদিরোতে এসেছেন তিন বছর হলো। তার আগে স্থানীয় মুফতির নেতৃত্বে সম্পন্ন হতো দাফনের কাজ। কবে থেকে এই প্রথা চালু হয়েছে তা জানেন না কেউ।

সিদিরোর কবরস্থানটি একটি পাহাড়ের ওপরের মসজিদের পাশে। সেখানে যাবার পথ দুর্গম ও মূল রাস্তা থেকে বোঝার উপায় নেই পাহাড়ের ওপরে কী আছে। স্থানীয় মেয়র পানাজিওটিস কালাকিকোসকের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অবাক হন। বলেন, “সেখানে কেন যেতে চান আপনারা? এটা তো শুধু দাফনের জায়গা! এত প্রশ্ন না করে যে সমস্ত মানুষ বেঁচে আছেন, তাদের নিয়ে কাজ করুন!”

ইমাম জানান যে, প্রতিটি কবর একটি সাদা পাথর দিয়ে চিহ্নিত করা আছে। তিনি বলেন, “আমি দাফনের রীতিগুলি দেখি। এখানে কারো লাশ এসে পৌঁছালে ইসলাম ধর্মের নিয়ম মেনেই আমরা দাফনের কাজ করি।”

মেয়রের মতে, যেসব অভিবাসনপ্রত্যাশীদের খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী বলে চিহ্নিত করা যায়, তাদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে আরেকটি কবরস্থান। সেটি কোথায়, তা ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেননি মেয়র কালাকিকোস। কিন্তু লাশের ধর্ম কীভাবে যাচাই হয়, তা নিয়ে মুখ খোলেননি মেয়র বা ইমাম দুজনেই।

আরো মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে বলে সদ্য খোঁড়া হয়েছে তিনটি কবর, দেখালেন ইমাম। তিনি বলেন, “আমরা আগে থেকেই প্রস্তুত থাকি কারণ অনেক ক্ষেত্রে এখানে এসে পৌঁছাতে পৌঁছাতে লাশ পচতে শুরু করে। তখন তাড়াতাড়ি দাফন করতে হয়। গ্রামের নারীরা লাশকে পরিষ্কার করে দেন। তারপর তাদের আমরা দাফন করি।”

পাশের শহর কোমোতিনি থেকে এক ব্যক্তি এসে এই কবরস্থানের দেখভাল করেন। ইমাম বলেন, “সেই ব্যক্তি মাসে একবার আসেন। সব কবর ঠিকঠাক আছে কি না দেখেন, চারদিক পরিষ্কার করেন।”

কিন্তু মৃতের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে খুব কম মানুষই আসেন এখানে। ইমাম বলেন, “এখানে দুটি শিশুর লাশও আছে। রাস্তায় দুর্ঘটনায় মারা যায় তারা। তাদের কেউ দেখতে আসেনি।”

এখানে শায়িত সকল মৃতদেহই এভ্রোস নদীর আশপাশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। কেউ কেউ তুরস্ক থেকে সাঁতরে পেরোতে গিয়ে নদীতে ডুবে গেছেন। অন্যরা জঙ্গলে রাত কাটানোর সময় শীতের কবলে প্রাণ হারিয়েছেন। সব ক্ষেত্রেই, মৃতদেহগুলিকে আগে আলেক্সান্দ্রোপোলিসের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ময়না তদন্ত করেন পাভলোস পাভলিদিস। তিনি বোঝান, “এই সব বেওয়ারিশ লাশ, যাদের কোনো পরিচয় থাকেনা, তাদের সিদিরোতে নিয়ে যাওয়া হয়।”

কোনো কোনো কবর বাকিদের চেয়ে আলাদা। যেমন ফেব্রুয়ারি মাসে দাফন হওয়া এক আফগান নারীর কবর। তার গায়ে কিছু লেখা আছে। একটু এগোলেই আরেক সিরিয়ান নারীর কবর। ওপরে লেখা থেকে জানা যায় সে ২০১৪ সালে মারা গেছে। ইমাম বলেন, “লাশের পরিচয় পাওয়া যায়, পরিবারের লোকজন ঠিক করে এখানেই দাফন করবে তারা।”

হাসপাতালের তালিকা অনুযায়ী, এই বছর এভ্রোস অঞ্চলে মারা গেছেন ৩৮জন অভিবাসনপ্রত্যাশী। পাভলিদিস জানান, গত বিশ বছরে অন্তত পাঁচশ লাশের ময়না তদন্ত করেছেন তিনি।