ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কে হবেন

প্রকাশিত: ৯:৪১ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৪, ২০২১ | আপডেট: ৯:৪১:পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৪, ২০২১

ঢাকা, ১৪ অক্টোবর ২০২১, বৃহস্পতিবার , ২৯ আশ্বিন ১৪২৮ বঙ্গাব্দ, ৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩ হিঃ

কে হবেন প্রেসিডেন্ট: ফ্রান্সে আগাম নির্বাচনী হিসাব।

আর ছয় মাসের মতো বাকি। এরপরই ২০২২ সালে ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। হাতে সময় অনেকটা থাকলেও এরই মধ্যে কে হবেন নতুন প্রেসিডেন্ট, রাজনীতির লড়াইটা কেমন হবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে দেশটিতে। ২০০২ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন জ্যাক শিরাক। তারপর কোনো প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হতে পারেননি। সেই হিসেবে ফ্রান্সের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের জন্যও সম্ভবনা দেখছে না ফরাসি মিডিয়া। তাদের হিসাবে এবার উত্থান ঘটতে পারে উগ্র ডানপন্থিদের। ৬ই আগস্ট সর্বশেষ নির্বাচনী জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়েছে।
জরিপে দেখা গেছে জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে উঠে এসেছেন ডানপন্থি দু’নেতা। তারা দু’জনে মোট সমর্থনের ৩২ ভাগ অর্জন করেছেন। এর মধ্যে ১৭ ভাগ সমর্থন পেয়েছেন এরিক জেমুর এবং ১৫ ভাগ সমর্থন পেয়েছেন মেরি লা পেন। অন্যদিকে একা ম্যাক্রনকে এখনও জনপ্রিয় হিসেবে দেখা হয়। তিনি পেয়েছেন শতকরা ২৪ ভাগ সমর্থন। বাকি শতকরা ২৫ ভাগ সমর্থন পেয়েছে যারা, তার মধ্যে আছে চারটি দল। তারা হলো- গ্রিন পার্টি, সোশ্যালিস্ট পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি এবং লা ফ্রান্স ইনসোমাইজ। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
২০১৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইমানুয়েল ম্যাক্রনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মেরি লা পেন। কিন্তু সর্বশেষ জরিপ এবার তা বলছে না। তিনি অনেকটা পিছিয়ে আছেন। এমনটা দেখে হতাশ অনেক পর্যবেক্ষক। ডানপন্থি দল থেকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিতার্কিক জেমুর। তবে তিনি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের প্রার্থিতা জানান দেননি। কিন্তু ফরাসি টিভি চ্যানেলগুলোতে তার উপস্থিতিই তার জনপ্রিয়তায় জোয়ার এনে দিয়েছে। ১৬ই সেপ্টেম্বর জেমুর প্রকাশ করেছেন ‘লা ফ্রান্স নেস পাস ডিট সন ডার্নিয়ে মোত’। তার লেখা এই বইটি ফ্রান্সে অ্যামাজনের বেস্টাসেলার তালিকার শীর্ষে চলে যায়। বইটি প্রকাশ হওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহেই বিক্রি হয়ে যায় প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার কপি। মেরি লা পেন যতটা উগ্র ডানপন্থি, তার চেয়ে বেশি ডানপন্থি জেমুর। ফলে তার উগ্রতার বিষয়ে রাজনৈতিক মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
তিনি বিশ্বাস করেন, ফরাসি যেসব নাগরিকের নামের প্রথম অংশ ফরাসি নয়, তাদের উচিত নাম পরিবর্তন করা। তিনি সমর্থন করেন ‘গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট’ থিওরি। এটা হলো সেই থিওরি, যা যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীরা ধারণ করেন। তারা চায় অভিবাসীদের সরিয়ে দিয়ে সেখানে তাদেরকে স্থান দিতে হবে। এ ছাড়া জেমুরের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন সাতজন নারী। বর্ণবাদ, ইসলামভীতি, যৌনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ঘৃণাপ্রসূত বক্তব্যের কারণে অনেকবার তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই তাকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।
বর্ণবাদ এবং উগ্র ডানপন্থা নিয়ে গবেষণা করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর অরেলিন মোনডোন। তিনি বলেন, জেমুর প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন বলে মনে হয় না। তিনি আদর্শের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিততে চান। অনেক মানুষই যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তুলনা করেন তাকে। কারণ, স্ক্যান্ডালই তাদের দু’জনকে বেশি জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। এসব পুঁজি করে তিনি মেরি লা পেনের সমর্থনকে লুফে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে মেরি লা পেনের দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা উল্লেখ করেন মোনডোন। তিনি মনে করেন এবারের নির্বাচনে মেরি লা পেনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে তার পুরো ডানপন্থিরা। ফলে তাকে নির্বাচন করতে হলে অনেককে টপকে আসতে হবে। প্রচলিত ডানপন্থি দল লেস রিপাবলিকান দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হতে হবে মেরি লা পেনকে। দলটি ডিসেম্বরে তাদের প্রার্থী নির্বাচিত করবে। এক্ষেত্রে সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন জাভিয়ের বারট্রান্ড। শতকরা ১৩ ভাগ জনমত তার পক্ষে গেছে। কিন্তু ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাবেক প্রধান ব্রেক্সিট বিষয়ক মধ্যস্থতাকারী ভ্যালেরি পিক্রিসে এবং মাইকেল বার্নিয়েরের নামও আছে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীদের তালিকায়।
(আজকের মানবজমিন থেকে নেওয়া)