সংবাদ সম্মেলনে যানজট নিরসন, অবৈধ সিএনজি বন্ধ ও পাথর কোয়ারি পুনরায় চালুর জোর দাবি

সিলেট নিউজ ওয়ার্ল্ড
প্রকাশিত জুলাই ১৩, ২০২৫
সংবাদ সম্মেলনে  যানজট নিরসন, অবৈধ সিএনজি বন্ধ ও পাথর কোয়ারি পুনরায় চালুর জোর দাবি

 

সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন সেক্টরের নানা সমস্যা ও দাবি-দাওয়া তুলে ধরেছে। রোববার (১৩ জুলাই) দুপুরে দক্ষিণ সুরমা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নবনির্বাচিত সভাপতি মাওলানা লোকমান আহমদ এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুজ্জামান জোয়াহির লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
সমিতির পক্ষ থেকে দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদ হওয়া ছাত্র, জনতা ও পরিবহন সংশ্লিষ্ট মালিক-শ্রমিকদের স্মরণ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ২০১৩ সাল থেকে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি জেলার অন্তর্গত ১৩টি রোড উপ-কমিটির সমন্বয়ে একটি নির্দলীয় ও গণতান্ত্রিক মালিক সংগঠন হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে। বিগত ৫ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা ও কাউন্সিলের মাধ্যমে ৫৩ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়, যা বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছে।
“সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি দীর্ঘদিন ধরে সিলেট জেলার ১৩টি রোড উপ-কমিটির নেতৃত্বে পরিবহন সংশ্লিষ্ট সমস্যার সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে। যানজট নিরসনে স্থানীয় প্রশাসন, মালিক ও শ্রমিকদের সমন্বয়ে অনেক ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে।”
তবে তারা অভিযোগ করেন, “কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণের ফলে অধিকাংশ গাড়ি সড়কে যত্রতত্রভাবে দাঁড় করিয়ে পরিচালনা করতে হচ্ছে, যা পরিবহন ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। এছাড়া, নিম্নমানের নির্মাণের ফলে টার্মিনাল এখনই অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।”
প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে: অবৈধ সিএনজি চলাচল বন্ধ: হাইওয়েতে রেজিস্ট্রেশনবিহীন, অন্য জেলার ও অদক্ষ চালকদের মাধ্যমে পরিচালিত সিএনজির কারণে দুর্ঘটনার হার বাড়ছে। হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে এই অনিয়ম বন্ধের দাবি জানানো হয়। পাথর কোয়ারি পুনরায় চালু: ২০১৮ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া কোয়ারিগুলো চালুর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। বক্তারা বলেন, “জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ইজারা বন্ধের নির্দেশ বাতিল করে সিলেট অঞ্চলের পাথর ব্যবসায়ীদের বিজয় নিশ্চিত হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে আবার তা স্থগিত করা হয়।” সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবি: পরিবহন আইনে বাসের আয়ুকাল ২০ ও ট্রাকের ২৫ বছর নির্ধারণ এবং ফিটনেস সনদ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনার সিদ্ধান্তকে ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করা হয়। এর বিরুদ্ধে ১ জুলাই প্রতিবাদ সভাও হয়। ভাড়া বৃদ্ধি ও চালকদের প্রশিক্ষণ: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির তুলনায় পরিবহন ভাড়া না বাড়ায় মালিকরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে অভিযোগ করা হয়। দুর্ঘটনা রোধে চালকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়।
বিদ্যুৎ খাতে প্রিপেইড মিটারের বিরোধিতা: সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রিপেইড মিটারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠায় দ্রুত এ ব্যবস্থার প্রত্যাহার দাবি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে যে সভাপতি মাওলানা লোকমান আহমদ কোনো গাড়ির মালিক নন। এই দাবিকে “ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” উল্লেখ করে বলা হয়, তিনি ২০০২ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং পরিবহন সেক্টরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
সংবাদ সম্মেলনের শেষাংশে সভাপতির পক্ষ থেকে প্রশাসন, গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরিবহন খাতকে সুশৃঙ্খল রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সদস্য ও জেলার অন্তর্গত বিভিন্ন উপ-কমিটির নেতৃবৃন্দ।