উপমহাদেশের প্রাচীন সাহিত্য প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ (কেমুসাস)-এর উদ্যোগে ৯ দিনব্যাপী ১৯তম কেমুসাস বইমেলার উদ্বোধন হয়েছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে কেমুসাস প্রাঙ্গণে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সভাপতি ভাষাসৈনিক অধ্যক্ষ মাসউদ খান আনুষ্ঠানিকভাবে এ বইমেলার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষাসৈনিক অধ্যক্ষ মাসউদ খান বলেন, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ প্রায় এক শতাব্দী ধরে সিলেটের সাহিত্য-সংস্কৃতির শিরায় প্রাণসঞ্চার করে আসছে। বইমেলা শুধু বই বিক্রির আয়োজন নয়-এটি পাঠকের সঙ্গে লেখকের হৃদ্যতার সেতুবন্ধন। নতুন প্রজন্মের মধ্যে পাঠচর্চার আগ্রহ বাড়াতে কেমুসাসের এই উদ্যোগ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি আশা করি, ৯ দিনব্যাপী এই আয়োজন সিলেটের সাংস্কৃতিক চেতনাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
এবারের বইমেলা উৎসর্গ করা হয়েছে কেমুসাসের সাবেক সভাপতি, বিশিষ্ট সাহিত্য সংগঠক, কবি রাগিব হোসেন চৌধুরীকে। অনুষ্ঠানে তাঁকে প্রধান অতিথি হিসেবেও সম্মাননা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে কবি রাগিব হোসেন বলেন, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ আমার আত্মার ঠিকানা। কেমুসাসের বইমেলা শুধু একটি সাংস্কৃতিক আয়োজন নয়—এটি সিলেটের সাহিত্য-অভিযাত্রার বার্ষিক উৎসব। আমি বিশ্বাস করি, পাঠকসমাজ যত শক্তিশালী হবে, আমাদের ভাষা ও সাহিত্যও তত সমৃদ্ধ হবে। নতুন লেখকদের জন্য কেমুসাস সবসময়ই পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছে, ভবিষ্যতেও করবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কেমুসাস বইমেলা উপকমিটির আহ্বায়ক জাহেদুর রহমান চৌধুরী। সঞ্চালনায় ছিলেন বইমেলা উপ-কমিটির সদস্য সচিব কামরুল আলম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেমুসাসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন কেমুসাসের সাধারণ সম্পাদক গল্পকার সেলিম আউয়াল, সাবেক সহসভাপতি ও কার্যকরী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ কবি কালাম আজাদ, সহসভাপতি সাংবাদিক-কলামিস্ট আফতাব চৌধুরী, সৈয়দ মুহিবুর রহমান, রুহুল ফারুক, কার্যকরী পরিষদের সদস্য ছয়ফুল করিম চৌধুরী হায়াত।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কবি অধ্যাপক বাছিত ইবনে হাবীব, কেমুসাসের লাইব্রেরি সম্পাদক কবি নাজমুল আনসারী, দৈনিক সুরমা মেইলের সাহিত্য সম্পাদক মোয়াজ আফসার, বইমেলা উপকমিটির সদস্য কবি ইশরাক জাহান জেলী, সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসার উপাধ্যক্ষ ড. দিদার চৌধুরী, সিলেট আইডিয়াল মাদরাসার অধ্যক্ষ ড. এ এইচ সোলায়মান, অধ্যাপক রুহুল আমিন, কবি মুন্নি আক্তার, কবি সাজন আহমদ সাজু, সাংবাদিক লুৎফুর রহমান তোফায়েল, ছড়াকার জহুর মুনিম, ছড়াকার লোকমান হাফিজ, গীতিকার ওমর ফারুক, কবি আব্দুল বাসিত, ছড়াকার আব্দুস সামাদ, কবি প্রিন্সেস হেনা প্রমুখ।
ঢাকা ও সিলেটের মোট ২৮টি প্রকাশনা সংস্থা এ বছর বইমেলায় অংশগ্রহণ করছে। প্রতিদিনই পাঠক-লেখক আড্ডা, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন এবং সাংস্কৃতিক আয়োজনে বইমেলা প্রাঙ্গণ মুখরিত থাকবে। বইমেলা উপলক্ষে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ৯ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার): বিকেল ৩টা—আবৃত্তি প্রতিযোগিতা; সন্ধ্যা ৬টা—মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভা। ১০ ডিসেম্বর (বুধবার): বিকেল ৩টা—চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা; সন্ধ্যা ৬টা—মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভা। ১১ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার): বিকেল ৩টা—ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতা; সন্ধ্যা ৬টা—মুক্তমঞ্চে ১২৫৮তম সাহিত্য আসর। ১২ ডিসেম্বর (শুক্রবার): বিকেল ৩টা—ক্বিরাত প্রতিযোগিতা; সন্ধ্যা ৬টা—মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভা। ১৩ ডিসেম্বর (শনিবার): বিকেল ৩টা—গান প্রতিযোগিতা। ১৪ ডিসেম্বর (রবিবার): বিকেল ৩টা—হাতের লেখা ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতা; সন্ধ্যা ৬টা—শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভা। ১৫ ডিসেম্বর (সোমবার) : বিকেল ৩টা—আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ১৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার): সন্ধ্যা ৬টা—বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা, পুরস্কার প্রদান ও সমাপনী অনুষ্ঠান। সাহিত্যপ্রেমীদের পদচারণায় মুখর এই বইমেলা ৯ দিনব্যাপী চলবে।