নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে স্বাধীনতা প্রকল্পের উদ্যোগে শনিবার বিকেলে মালনীছড়া চা বাগান এলাকায় আলোচনা সভা, র্যালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আয়োজিত কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, চা শ্রমিক, যুবসমাজ ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
রিলায়েন্ট উইমেন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (আরডব্লিউডিও) আয়োজিত এ প্রশিক্ষণ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। আয়োজনটি অর্থায়ন করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার নুসরাত-এ-ইলাহী। তিনি বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা সামাজিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। চা বাগান অঞ্চলে নারীদের জীবনমান আরও উন্নত করতে নিরাপত্তা, কর্মপরিবেশ, স্বাস্থ্যসেবা ও আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি আজকের যুগে নারীদের ডিজিটাল নিরাপত্তা রক্ষায় সতর্কতা ও সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। অনলাইন হয়রানি, ভুয়া প্রোফাইল বা ছবি ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল করা এখন বড় সমস্যা- এ বিষয়ে পরিবার ও সমাজকে সজাগ থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সমীতা বেগম মীরা। তিনি বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের কাজ শুরু করতে হবে পরিবার থেকে। সন্তানদের প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে সচেতন করা, অনলাইন নিরাপত্তা শেখানো এবং নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করা জরুরি। সামাজিক পরিবর্তনের মূল ভিত্তি হলো মানসিকতার পরিবর্তন।
অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় ছিলেন প্রকল্প কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম রশিদ। তিনি বলেন, স্বাধীনতা প্রকল্প শুধু শারীরিক বা সামাজিক সহিংসতা নয়, ডিজিটাল সহিংসতা প্রতিরোধেও কাজ করছে। অনলাইন নিরাপত্তা, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের নিয়ম, ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা- এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক লোকমান হাফিজ। তিনি বলেন, গণমাধ্যম নারীর অধিকার নিশ্চিত ও সহিংসতা প্রতিরোধে সচেতনতার বড় মাধ্যম। পাশাপাশি অনলাইনে ভুয়া তথ্য, মিথ্যা ভিডিও বা ছবি ছড়িয়ে নারীর সম্মানহানি করার প্রবণতা বাড়ছে- এটি মোকাবিলায় সবাইকে প্রযুক্তিসচেতন হতে হবে।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন- আশার আলো যুব কল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, যুবসমাজকে ইতিবাচক কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। ডিজিটাল যুগে তরুণদের প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শেখানো অত্যন্ত জরুরি।
মো. মহসিন রেজা (ফাইন্যান্স অ্যান্ড অ্যাডমিন) বলেন, নারীর অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনে নিরাপত্তা সম্পর্কে জানানো প্রয়োজন।
ফিল্ড অফিসার বাবুল কুমার সিংহ বলেন, চা বাগান এলাকায় কর্মরত নারীরা প্রায়ই অনলাইন প্রতারণা, ভুয়া চাকরির প্রলোভন বা ব্যক্তিগত ছবি অপব্যবহারের শিকার হন। এ বিষয়ে সচেতনতা জরুরি।
আলোচনা সভা শেষে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিতে অংশগ্রহণকারীরা নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ, অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের পক্ষে স্লোগান দেন। পরিশেষে স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
দিনব্যাপী এই কর্মসূচির মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা-শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও ডিজিটাল- প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা রাখার অঙ্গীকার করেন এবং একটি নিরাপদ, প্রযুক্তিবান্ধব ও সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।