অক্সফোর্ডের টিকার কার্যকারিতা কেমন, ডোজ কী হবে

প্রকাশিত: ৮:৫৯ পূর্বাহ্ণ, |                          

ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে রোববার।
করোনার এই টিকা বিশ্বের প্রথম অনুমোদন দেয়া দেশ যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষ বুধবার টিকাটির প্রথম ডোজ যত বেশি সংখ্যক মানুষকে দেওয়া যায়, তা নিশ্চিত করতে এবং টিকা দেওয়ার ৪ থেকে ১২ সপ্তাহ পর পরবর্তী ডোজ দেওয়ার সুপারিশ করেছে।

তুলনামূলক সস্তা, সহজে সংরক্ষণযোগ্য এ টিকা নিয়ে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, যুক্তরাজ্য ও ভারতের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষগুলোর ভাষ্য তুলে ধরা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার চূড়ান্ত পর্বের ট্রায়ালে চার সপ্তাহের ব্যবধানে টিকাটির দুটি ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিলো। যদিও ১২ ডিসেম্বর ল্যানসেটে প্রকাশিত ওই ট্রায়ালের তথ্যে বেশিরভাগ স্বেচ্ছাসেবকের দ্বিতীয় ডোজের টিকা পেতে দেরি হয়েছিলো বলে দেখা যায়।

যুক্তরাজ্যের স্বেচ্ছাসেবকদের টিকার দুটি ডোজ পেতে গড়ে ১০ সপ্তাহ সময় লেগেছিলো, ব্রাজিলের স্বেচ্ছাসেবকদের ক্ষেত্রে এ ব্যবধান ছিলো গড়ে ৬ সপ্তাহ।

চূড়ান্ত পর্বের ট্রায়ালে যুক্তরাজ্য ও ব্রাজিলের সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বেচ্ছাসেবককে টিকাটির দুটি পূর্ণাঙ্গ ডোজ দেওয়ার পর প্রতিষেধকটি ৬২ শতাংশ কার্যকর বলে দেখা যায়। যুক্তরাজ্যে ৫৫ বছরের নিচের বয়সী স্বেচ্ছাসেবকদের ছোট একটি অংশকে ভুলক্রমে প্রথম ডোজের অর্ধেক দেওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ দ্বিতীয় ডোজ দিলে ফল হয় আরও ভালো; পাওয়া যায় ৯০ শতাংশ সুরক্ষা।

বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের কর্তৃপক্ষ কোভিড-১৯ টিকার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন কার্যকারিতা ঠিক করেছে ৫০ শতাংশ। তবে ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্নার দুটি টিকা ট্রায়ালে ৯০ শতাংশের বেশি কার্যকারিতা দেখায়।

গত মাসে অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানিয়েছে, স্বেচ্ছাসেবকদের ছোট একটি অংশের মধ্যে টিকাটির অধিক কার্যকারিতার কারণ না জানলেও তারা ডোজ অর্ধেক দিলে সুরক্ষার পরিমাণ বাড়বে কিনা তা নিশ্চিত হতে আরও পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। টিকাটির একটি ডোজ ৬৪ শতাংশ কার্যকার বলেও ট্রায়ালে দেখা গেছে।

যুক্তরাজ্যের ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা পণ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এমএইচআরএ) অক্সফোর্ডের টিকাটির দুটি পূর্ণাঙ্গ ডোজ প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। টিকাদান কর্মসূচির গতি বাড়াতে প্রথম ডোজের ৪ থেকে ১২ থেকে সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে জয়েন্ট কমিটি অন ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন।

তিন মাসের ব্যবধানে দুটি ডোজ দিলে টিকাটি ৮০ শতাংশ সুরক্ষা দেয় বলে এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যে টিকা অনুমোদনের সঙ্গে জড়িত এক কর্মকর্তা। এই হার অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ডের চূড়ান্ত ট্রায়ালে পাওয়া কার্যকারিতার চেয়ে বেশি।

একই ব্রিফিংয়ে টিকা অনুমোদনের সঙ্গে জড়িত ব্রিটিশ এক বিজ্ঞানী টিকার একটি ডোজ দেওয়ার ২১ দিন পর, দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার আগে ৭০ শতাংশের মতো কার্যকারিতা দেখা গেছে বলে দাবি করেছেন।

জয়েন্ট কমিটি অন ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনের কোভিড-১৯ টিকাদান বিষয়ক প্রধান ওয়েই শেন লিম বলেছেন, তারা তাদের পাওয়া তথ্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শেয়ার করেছেন, যদিও এ প্রসঙ্গে জনপরিসরে তেমন আলোচনা হয়নি।

ভারতের কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের প্রধান ভি জে সোমানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ডের টিকার দুটি পূর্ণাঙ্গ ডোজ প্রয়োগের অনুমোদন দেওয়ার কথা বলেছেন। রোববার এ অনুমোদনের ঘোষণায় সোমানি দুটি ডোজের মাঝে ব্যবধান কতদিন থাকতে পারে তা স্পষ্ট না করলেও ৪ সপ্তাহের ব্যবধানে ডোজ দুটি দেওয়া হতে পারে বলে বেশ কয়েকটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে।

ভারতের বাইরে ১৮ এবং তার বেশি বয়সী ২৩ হাজার ৭৪৫ জনের উপর চালানো গবেষণায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রতিষেধকটি ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশের মতো কার্যকর বলে প্রতীয়মান হয়েছে বলে তথ্য দেন সোমানি।