২২৪ বছর আগে প্রথম টিকা নেয় ৮ বছরের বালক

প্রকাশিত: ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০২০ | আপডেট: ৫:২৬:পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০২০

মানব ইতিহাসে প্রথম ভ্যাকসিন নেয় ৮ বছরের বালক জেমস ফিপস। গুটিবসন্ত হলে ২২৪ বছর আগে তাকে পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন পুশ করা হয়।

এই পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনের পেছনে ছিলেন ডা. এডওয়ার্ড জেনার। ১৭৯৬ সালের ১৪ মে তিনি জেমস ফিপসকে টিকা দেন। ১৭ মে ১৭৪৯ ইংল্যান্ডের বার্কেলেতে জন্মগ্রহণ করেন জেনান।

ফিপসের দেহে যখন গুটিবসন্তের টিকা প্রয়োগ করেন, তখন তার বয়স ৪৯ বছর। ২৬ জানুয়ারি ১৮২৩ সালে বার্কেলেতেই ৭৩ বছর বয়সে তিনি মারা যান। ফিপসের পর দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে ইংল্যান্ডের ৮১ বছর বয়সী উইলিয়াম শেকসপিয়ার টিকা নেন।

গুটিবসন্ত হয় ভ্যারিওলয় ভাইরাস থেকে। এটি ছিল প্রাণঘাতী ভাইরাস। আক্রান্তদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৩ জনই মারা যেতেন এই রোগে। যারা গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়েও বেঁচে যেতেন তাদের তিন ভাগের একভাগই অন্ধ হয়ে যেতেন।

গুটিবসন্ত রোগের উৎপত্তি সম্পর্কে খুব একটা জানা যায় না। তবে বলা হয়ে থাকে তৃতীয় শতাব্দীর মিসর সাম্রাজ্যের তিনটি মমিতে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এছাড়া আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজেজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্যমতে, চীনে চতুর্থ শতাব্দী ও ভারতে ৭ম শতাব্দীতে গুটিবসন্ত রোগের আবির্ভাব ঘটে।

কেউ একবার গুটিবসন্তে আক্রান্ত হলে দ্বিতীয়বার সেটা তার মধ্যে দেখা দিত না। গুটিবসন্তের টিকা আবিষ্কারের আগে ডাক্তাররা আক্রান্তকে রক্ষার জন্য ভ্যারিওলেশন নামের এক ধরনের কৌশলের আশ্রয় নিতেন। এতে গুটিবসন্তে আক্রান্ত নয় এমন ব্যক্তির শরীরে গুটিবসন্ত পুশ করা হতো এই রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির জন্য।

ভ্যারিওলেশনের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার চিহ্ন দেখা গেলেও এটি ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এই পদ্ধতি প্রয়োগের পর ২ শতাংশ মানুষ মারা যেতেন। অনেক সময় পুরোমাত্রায় শরীরে গুটিবসন্ত হয়ে অন্য মানুষদের সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলত।

এ কারণে অন্যকে ঝুঁকিতে না ফেলে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করার মতো ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের তাড়া দেখা দেয়। ব্রিটিশ ডা. এডওয়ার্ড জেনার পর্যবেক্ষণ করে দেখলেন যেসব নারী ডেইরি ফার্মে কাজ করেন ও ভ্যাকসিনিয়া ভাইরাসের কারণে উদ্ভূত কাউপক্সে আক্রান্ত হন, তাদের মধ্যে গুটিবসন্তের প্রতিষেধক উৎপন্ন হয়।

এ কারণে জেনার দুধ থেকে উৎপাদিত একটি ভাইরাস বালক জেমস ফিপসকে পুশ করেন। বালক ফিপস ছিলেন জেনারের মালির ছেলে। তিনি ফিপসকে এই ভ্যাকসিন দেয়ার পর তার সামান্য জ্বর এসে ও শরীর ফোলা দিয়ে আরোগ্য লাভ শুরু হয়।