বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে বহু প্রজেক্ট করেছে; টাকা কামিয়েছে: ফখরুল

প্রকাশিত: ১২:১৩ অপরাহ্ণ, |                          

বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার চিৎকার, চেঁচামেচি করে বলেছিল বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছে বাংলাদেশ। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু মঙ্গলবার ছিল সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক ব্যাপার। সারা দেশই প্রায় ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। পুরো ব্ল্যাকআউট। এ থেকে বুঝা যায় সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের নাম করে বহু প্রজেক্ট করেছে, নিজেরা টাকা পয়সাও কামিয়েছে। শেষ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে জাতিকে বড় ধরনের দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের মধ্যে তারা ফেলে দিয়েছে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে নেটওয়ার্ক, সমস্ত কল-কারখানা, সকল ধরনের পাম্পসহ ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে জাতি সর্বক্ষেত্রে অসহনীয় অবস্থার মধ্যে দিয়ে গেছে। এর জন্য মূলত দায়ী সরকারের অপরিকল্পিতভাবে প্রজেক্ট গ্রহণ করা।
কাজ না করে উন্নয়নের কথা বলা তাদের কাজ হয়ে দাড়িয়েছে। আজ বিকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে তার বাসায় দেখতে যান বিএনপি মহাসচিব। সেখানেই সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
ফখরুল ইসলাম বলেন, এই সরকারের বড় লক্ষ্য হচ্ছে দুর্নীতি করা। দুর্নীতির মাধ্যমেই তথাকথিত উন্নয়নের কথা বলে সর্বক্ষেত্রে এ দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। সরকারের অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে টঙ্গী থেকে উত্তরা আসতে ৪/৫ ঘণ্টা সময় লাগে। জনগণের প্রতি এই সরকারের কোনো দায় নেই উল্লেখ্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটছে। পাওয়ার গ্রিডে বিপর্যয়ের ঘটনাটি তাদের দায়িত্বহীনতার প্রমাণ। অপরিকল্পিতভাবে প্রকল্প গ্রহণের পাশাপাশি দুর্নীতি এ জন্য দায়ী। শুধু অপরিকল্পিত নয়। একটা লক্ষ্য আছে- সেই লক্ষ্যটা হচ্ছে দুর্নীতি করা। দুর্নীতির মাধ্যমে তথাকথিত উন্নয়নের কথা বলে কাজ করে মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে। তিনি বলেন, এই সরকার এ দেশের জন্য একটা ‘বোঝা’ হয়ে গেছে। এই অবৈধ সরকারকে না সরালে জাতির অস্তিত্বই টিকে থাকা মুশকিল হবে। এখন অবিলম্বে প্রয়োজন এই সরকারের পদত্যাগ। এখন বর্গীদের মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগ লুট করছে, অর্থ পাচার করছে। এ থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ- দে মাস্ট গো। মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের কোথাও জবাবদিহিতা নেই। দায়িত্বশীলতার অভাব। এর জন্য দায়ী সরকারের অপরিকল্পিতভাবে প্রজেক্ট গ্রহণ করা এবং উন্নয়নের কথা বলা।

২৯ প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণা প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, এটা ভয়াবহ ব্যাপার। আমরা যে বলে আসছি, কর্তৃত্ববাদী সরকার, এটা তার বহিঃপ্রকাশ। সরকার যে আরও নিয়ন্ত্রণের দিকে যাচ্ছে, দেশকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করবে, মানুষকে তথ্য থেকে বঞ্চিত করবে, এটা তারই বহিঃপ্রকাশ। এখন আর কোনো ফাঁক রইলো না, এ কথা বলতে যে, স্বয়ং রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে যদি এমন সার্কুলার আসে, তাহলে এ দেশ যে পুরো কর্তৃত্ববাদী হয়ে গেছে, তাতে আর কোনো সন্দেহ নেই।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, এই সরকার আসার পরে আমরা দেখলাম কয়েক বছরে ৭/৮ বার বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটেছে। সারা দেশে যে পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো দিয়েছে, সেগুলোর জন্য ইউনিফাইড স্পেসিফিকেশন দেয়া হয় নাই। বিদ্যুৎ শুধু উৎপাদন করে গেছে, বাড়িয়ে গেছে, ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশনে কাজ করা হয়নি। যথাযথ সমন্বয় না হওয়ায় এ রকম অবস্থা হচ্ছে। এই অবস্থার নিরসন না করা হলে ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনা আরও ঘটবে। টুকু বলেন, বিদ্যুতের নামে প্রচারণা চালিয়ে সরকার মানুষকে বোকা বানিয়েছে। এখন ধীরে ধীরে দেশের মানুষ দেখতে পাচ্ছে যে, আসলে কী হচ্ছে। এই সরকার নিজেদের পকেট ভরার জন্য বিদ্যুতের যে প্রকল্পগুলো নিয়েছে, এই প্রকল্পগুলোর জন্য বাংলাদেশের মানুষকে অনেক দাম দিতে হবে। অনেক খেসারত দিতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন সাবেক এই মন্ত্রী।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের যে ‘আওয়ামী মডেল অফ ইকোনমি’ মঙ্গলবারের ব্ল্যাকআউট কিন্তু তারই প্রতিফলন। সরকার দুর্নীতির জন্য একচেটিয়া কুইক রেন্টালসহ বিভিন্ন পাওয়ার প্ল্যান্ট দিয়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশনের যে সমন্বয় করার কথা, সেটা করা হয়নি। তাদের লক্ষ্য ছিল দ্রুত সময়ের মধ্যে টাকা বানানো। কাজেই এই বিষয়গুলোতে তারা মনোযোগ দেয় নাই। তারা যা করেছে, দুর্নীতি করার জন্য করেছে, যার জন্য জনগণকে মূল্য দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, দুঃখের বিষয় এসব পাওয়ার প্ল্যান্টের কোনো টেন্ডার হয়নি। তাদের নির্দিষ্ট কিছু লোককে টেন্ডার দেয়া হয়েছে। তার কারণে দেশের এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।