বিভিন্ন কর্মসূচীতে পীর হাবিবুর রহমান এর ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

প্রকাশিত: ৮:২৭ অপরাহ্ণ, |                          

ভাষা সৈনিক, অভিবক্ত পাকিস্তান আইন সভার সদস্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সিলেট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, জাতীয় নেতা পীর হাবিবুর রহমান এর ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে পালন করা হয়েছে। শুক্রবার (১৬ই ফেব্রুয়ারী) সকালে দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার ইউনিয়নের বাগরখলা গ্রামে মরহুমের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, কবর জিয়ারত, বাড়িতে কোরআনে খতম, শোক সভা, দোয়া মাহফিল ও শিরনী বিতরণ করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্যের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক মিডিয়া অফিসার নজরুল ইসলাম বাসন, যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত সত্যবানী পত্রিকার সম্পাদক সৈয়দ আনাস পাশা, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুবল চন্দ্র পাল, গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিলেট জেলার সভাপতি মোঃ আরিফ মিয়া, সিলেট জেলা বাসদ এর আহবায়ক আবু জাফর, গণতন্ত্রী পার্টির সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জুনেদুর রহমান চৌধুরী, মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কপালি, ঐক্য ন্যাপ সিলেট জেলার সাধারন সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস বাবুল, গণতন্ত্রী পার্টির সিলেট জেলার দপ্তর সম্পাদক আজিজুর রহমান খোকন, বাসদ নেতা জুবায়ের আহমদ চৌধুরী, ঐক্য ন্যাপ নেতা মাওলানা নুরুল ইসলাম চৌধুরী, মীর আনসার আহমদ, সৈয়দ মোক্তার আহমদ, সুনীল চন্দ্র দেব, গণতন্ত্রী পার্টির সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার সভাপতি অধ্যক্ষ মিহির রঞ্জন দাস, মরহুমের নাতি বেলায়েত হোসেন লিমন প্রমুখ। এ সময় মরহুমের আত্বীয়স্বজন, রাজনৈতিক, সামাজিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

শোক সভায় বক্তারা বলেন, পীর হাবিবুর রহমান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে, ছয়দফা, ১১দফা, মহান মুক্তিযুদ্ধ, পরবর্তীতে দেশ গড়ার আন্দোলন, গরীব, দুঃখী, খেটে-খাওয়া মানুষের কল্যাণে আজীবন রাজনীতি করে গেছেন। তিনি যে স্বপ্ন নিয়ে রাজনীতিতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তা অনুকরণীয়। আজ বাংলাদেশের রাজনীতিতে মরহুম পীর হাবিবুর রহমান হাবিব এর মতো ত্যাগী রাজনীতিবিদ প্রয়োজন, তিনি বাম রাজনীতির পুরোধা ছিলেন। এ সময় দোয়া পরিচালনা করেন মোহাম্মদ মনির উদ্দিন চৌধুরী।

উল্লেখ্য, পীর হাবিবুর রহমান ৯ অক্টোবর ১৯২৭ সালে সিলেটের লালাবাজার ইউনিয়নের বাগরখলা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। হাবিবুর রহমান প্রথম রাজনৈতিক জীবনে আবুল হাশিমের প্রভাবে তিনি মুসলিম লীগের সাথে যুক্ত হন।১৯৪৮ সালে পীর হাবিবুর রহমান গোপন কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি সিলেটের নানকার আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৬ নভেম্বর ১৯৫১ সালে (১৯৫২ সালে ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পূর্বে) সিলেট জেলা ছাত্র ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভুমিকা পালন করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি সিলেট জেলা আওয়ামী মুসলীম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালে সিলেট সদরের একটি আসনের উপনির্বাচনে তিনি পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার সদস্য হন। ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগ থেকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) প্রতিষ্ঠাকালে তিনি যুক্ত হয়ে একই সালে সিলেট সদরের একটি আসনের উপনির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৬৭ সালে ন্যাপ বিভক্ত হলে তিনি ন্যাপ মোজফ্ফরে অবস্থান নেন। ১৯৬৭ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপের যুগ্ম সম্পাদক এবং পরে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অবিভক্ত পাকিস্তান ন্যাপের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও ছিলেন। ১৯৬৮ সালে তিনি বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৬৮ সালে ন্যাপ মোজফ্ফরের হয়ে আওয়ামী লীগে যুক্ত হয়ে তিনি আইয়ুব বিরোধী মোর্চা গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

১৩ ডিসেম্বর ১৯৬৮ সালে তিনি জুলুম প্রতিরোধ দিবসের কর্মসূচী ঘোষণা করেন। ৬ দফা আন্দোলনও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্দোলন সহ তৎকালীন সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

১৯৭৭ সালে ন্যাপ মোজাফ্ফরের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে গণতন্ত্রী পার্টি গঠিত হলে তিনি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ছিলেন এবং সর্বশেষ কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি ছিলেন। হাবিবুর ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে সিলেট-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০১ সাল থেকে তিনি স্বাস্থ্যগত কারণে রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন।পীর হাবিবুর রহমান ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৪ সালে সিলেটে মৃত্যুবরণ করেন। সিলেটের বাগরখলা গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়।