বাবার প্রতি ক্ষোভের প্রতিশোধ নিতেই সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা

প্রকাশিত: ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ, |                          

প্রাইভেট পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিল ছোট্ট আবু হুরায়রা। নিখোঁজের ২৬ দিন পর গত রোববার রাত আড়াইটার দিকে তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তালতলা গ্রামের গোরস্তানপাড়ার পুরাতন একটি কবর থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। এর আগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া একই এলাকার শহিদুল ইসলামের ছেলে মোমেন লাশের সন্ধান দেয়।

আবু হুরায়রা গোরস্তানপাড়ার আব্দুল বারেকের একমাত্র ছেলে এবং চুয়াডাঙ্গা ভি জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। বারেকের প্রতি ক্ষোভের প্রতিশোধ নিতেই তার ছোট্ট সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যার কথা স্বীকার করেন মোমেন।

পুলিশ লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় নিয়ে আসে। পরে সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এর আগে ২৯ জানুয়ারি চিরকুট পাঠিয়ে হুরায়রার পরিবারের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন মোমিন ও তার এক সহযোগী। ১ ফেব্রুয়ারি একটি মোবাইল নম্বর পাঠানো হয়েছিল। পরের দিন হুরায়রার পরিবার ৫ লাখ টাকা দিতে রাজি হলেও তারা সেটা মানেনি। এরপর ৩ ফেব্রুয়ারি একটি মোবাইল থেকে কল দিয়ে তারা আবারও চাঁদা চায়। একই দাবিতে তারা এসএমএসও পাঠায়। পরদিন অবশ্য ৬ লাখ টাকা দাবি করে অপহরণকারীরা। এ অবস্থায় ওই চিরকুট ও মোবাইল নম্বর পুলিশকে দেয় হুরায়রার পরিবার। পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করার পর মোমেনকে আটক করলে হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়।

স্কুলছাত্র হত্যার বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তারেক সোমবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, আসামির স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, খরগোশের বাচ্চা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে শিশু হুরায়রাকে ডেকে নেয়া হয়েছিল। আসামি মোমেন রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। তিনি সদর উপজেলার তালতলা গ্রামের শহিদুলের ছেলে।

পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, দুই বছর আগে কোনো এক ঈদের রাতে উচ্চস্বরে গান বাজাচ্ছিলেন মোমেন ও তার বন্ধুরা। এতে ক্ষিপ্ত হন শিশু হুরায়রার বাবা আব্দুল বারেক। রেগে তিনি সেই সাউন্ডবক্সের টেবিলে লাথি মারেন। এতে টেবিলটি ভেঙে যায়। অনুষ্ঠানও পণ্ড হয়ে যায়। এতে মোমেনের ৩ হাজার টাকা ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় মোমেন মনে মনে ক্ষিপ্ত হয় এবং প্রতিশোধ নিতে সুযোগ খুঁজতে থাকেন। আর এজন্য তিনি টার্গেট করেন বারেকের একমাত্র ছেলে হুরায়রাকে।

পুলিশ কর্মকর্তা আবু তারেক বলেন, গত ১৯ জানুয়ারি বিকেলে একই গ্রামের শিক্ষক রঞ্জুর কাছে প্রাইভেট পড়া শেষে খেলতে বের হয়েছিল হুরায়রা। এ সময় মোমেন তাকে একা পেয়ে খরগোশের লোভ দেখিয়ে তালতলা সরকারি কবরস্থানে নিয়ে যান। এরপর হাত-পা বেঁধে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। হত্যার পর প্রথমে লাশ রেখে চলে যান। পরে রাত ৮টার দিকে আবারও এসে লাশ পুরোনো একটি কবরে পুঁতে রাখেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সন্দেহভাজন মোমেনকে গত রোববার তালতলা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেন তিনি। পরে তার দেখিয়ে দেওয়া স্থান থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার কাজে অংশ নেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিছুজ্জামান, সদর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন, পুলিশ পরিদর্শক অপারেশন সুকেন্দবসু, তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সাইদুজ্জামান, এসআই গোপাল চন্দ্র মণ্ডল প্রমুখ।

আবু হুরায়রার বড় বোন বলেন, ওটা একটা চক্র। ওরা জিনের দোহাই দিয়ে পয়সাকড়ি কামায়। ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশের প্রতি অনুরোধ রইল। একমাত্র আদরের ভাইকে হারিয়ে আমরা এখন পাগল হয়ে গেছি। হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।

আবু হুরায়রার বাবা আব্দুল বারেক বলেন, একমাত্র ছেলেকে হারিয়েছি। দোষীদের শাস্তি চাই। শিশুটির মা নাসিমা বেগম বলেন, এই ২৬টি দিন আমাদের খাওয়া-দাওয়া নেই। চোখে ঘুম নেই। মোবাইলে কল এলেই আমাদের বুকের ভেতর ধক করে উঠেছে। হয়তো কোনো খবর পাব। তবে এমন খবর পেলাম, বিশ্বাস করতে পারছি না। মনে মনে ভাবছিলাম, আমার আদরের মানিক কখন এসে আমাকে মা বলে জড়িয়ে ধরবে। বারেক-নাসিমা দম্পতির ছয় মেয়ের পর জন্ম নিয়েছিল আবু হুরায়রা।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, নিখোঁজের দিন স্কুলছাত্রের বাবা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর থেকেই তাকে উদ্ধরের চেষ্টায় মাঠে নামে পুলিশ। গত ২৬ জানুয়ারি শিশুটির বাবা পাঁচজনের নামে সদর থানায় অপহরণ মামলা করেন। এ মামলায় পুলিশ দুইজনকে গ্রেফতারও করে।