আফগানিস্তানে সরকার গঠনে তালেবানের নেতৃত্বে রয়েছেন যারা

প্রকাশিত: ১:৫৮ অপরাহ্ণ, |                          

আফগানিস্তানে পশ্চিমা শক্তি সমর্থিত সরকারের সাথে ২০০১ সাল থেকে যুদ্ধ করে আসছে তালেবান। ২০০১ সালে আফগানিস্তানের ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর থেকেই দীর্ঘমেয়াদী এ যুদ্ধে লিপ্ত হয় দলটি।

প্রথমিক অবস্থায় তালেবান সদস্যরা আফগানিস্তানের বিভিন্ন মুজাহিদ দলগুলোর সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত হয়। ১৯৮০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় এই মুজাহিদ দলগুলো গঠিত হয়, যারা আফগানিস্তানে ওই সময় আগ্রাসন চালানো সোভিয়েত রাশিয়ার সৈন্যদের তাড়িয়ে দেয়।

১৯৯৪ সালে আফগানিস্তানে তালেবান দল গঠিত হয়। ওই সময় আফগানিস্তানে চলা গৃহযুদ্ধে তারা একটি উপদল ছিল। ১৯৯৬ সালে তালেবানরা আফগানিস্তানের বেশির ভাগ এলাকা দখল করে। তাদের দখল করা অঞ্চলে ইসলামী আইন চালু করে তারা। অবশ্য তালেবানবিরোধী শক্তিগুলো এবং পশ্চিমা দেশগুলো তালেবান কর্তৃক ইসলামী শরিয়া আইন চালু করা বিরোধিতা করেছিল।

এখন আফগানিস্তান থেকে বিদেশী সেনারা চলে যাবার পর তালেবানরা আবারো দেশটির বেশিরভাগ এলাকা দখল করে ফেলেছে। বেশিরভাগ প্রদেশ ও রাজধানী কাবুল এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে।

তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা ও মূল নেতা মোল্লা ওমর ২০০১ সালে মার্কিন বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়ে আত্মগোপন করেন। পরে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় ২০১৩ সালে তার মৃত্যু হয়। দুই বছর পরে তার ছেলে মোল্লা ওমরের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

মোল্লা ওমরের পরবর্তী বর্তমানে তালেবানের নেতৃত্বে যারা রয়েছেন, তারা হলেন :

হিবাতুল্লাহ আখুনজাদা

‘আমিরুল মুমিনিন’ হিসেবে তালেবানের প্রধান নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। আফগানিস্তানে তালেবানের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামরিকসহ সবক্ষেত্রেই তালেবানকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই ধর্মীয় শিক্ষক।

পূর্বতন নেতা আখতার মনসুর ২০১৬ সালে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হলে হিবাতুল্লাহ আখুনজাদা তালেবানের প্রধান নেতা হিসেবে দায়িত্ব পান। এর আগে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের কুচলক শহরের এক মসজিদে ১৫ বছর ধরে ইসলাম ধর্ম প্রচার ও শিক্ষা দেয়ার কাজে যুক্ত ছিলেন তিনি। ওই মসজিদে তার ছাত্ররা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এর আগে জানিয়েছেন যে ২০১৬ সালের মে মাসে তিনি ওই এলাকা ছেড়ে চলে যান।

বর্তমানে আনুমানিক ৬০ বছর বয়সী এই নেতা কোথায় আছেন, তা কারো জানা নেই।

মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব

তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে ইয়াকুব। তিনি সংগঠনের সামরিক অভিযানগুলো তদারকি করেন। স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, তিনি আফগানিস্তানেই অবস্থান করছেন। উত্তরাধিকার নিয়ে সংগঠনের মধ্যে টানাপোড়েনের সময় তাকে প্রধান নেতা বানানোর প্রস্তাব উঠেছিল।

কিন্তু ২০১৬ সালে তিনি আখুনজাদাকেই নেতা হিসেবে মনোনীত করেন। কারণ তিনি মনে করেছিলেন, তার নিজের যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে। তাছাড়া বয়সও খুব কম। মনসুরের উত্তরসূরী নির্বাচনের বৈঠকে উপস্থিত একজন তালেবান কমান্ডার এমনটিই জানিয়েছেন।

ধারণা করা হয়, ইয়াকুবের বয়স এখন ৩০।

সিরাজউদ্দিন হাক্কানি

আফগানিস্তানে রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিরোধের প্রখ্যাত মুজাহিদ কমান্ডার জালালউদ্দিন হাক্কানির ছেলে সিরাজউদ্দিন। বর্তমানে তালেবান সংশ্লিষ্ট স্বতন্ত্র দল হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। সংগঠিত এই দলটি পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে তালেবানের আর্থিক ও সামরিক সম্পদের তদারকি করে।

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, হাক্কানিরাই আফগানিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলার প্রচলন করে। আফগানিস্তানে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের হামলার জন্য তারা দায়ী। এর মধ্যে কাবুলের একটি গুরুত্বপূর্ণ হোটেলে হামলা, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইকে হত্যা চেষ্টা এবং ভারতীয় দূতাবাসে আত্মঘাতী হামলা অন্যতম।

হাক্কানির বয়স ৪০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে বলে ধারণা করা হয়। তবে তার অবস্থানও অজানা।

মোল্লা আবদুল গনি বারাদার

তালেবানের অন্যতম সহ–প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার বর্তমানে তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান। তিনি কাতারের রাজধানী দোহায় শান্তি আলোচনায় অংশ নেয়া দলে ছিলেন। একটি রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে আফগানিস্তানে যুদ্ধবিরতি ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথ সুগম করার এ প্রচেষ্টায় সম্মুখসারীর নেতা তিনি।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রক্রিয়াটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জনে ব্যর্থ হয়। এরপরই মূলত তালেবান আফগানিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে।

মোল্লা ওমরের সবচেয়ে বিশ্বস্ত কমান্ডারদের একজন আবদুল গনি। ২০১০ সালে দক্ষিণ পাকিস্তানের করাচি শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন তিনি। ২০১৮ সালে তাকে মুক্তি দেয়া হয়।

আবদুল হাকিম হাক্কানি

তিনি তালেবানের শান্তি আলোচক দলের প্রধান। তালেবানের সাবেক ছায়া প্রধান বিচারপতি। এই পদটি অত্যন্ত প্রভাবশালী ধর্মীয় পণ্ডিতদের নিয়ে গঠিত কাউন্সিলের প্রধান। বর্তমান নেতা আখুনজাদার অত্যন্ত বিশ্বস্ত ব্যক্তি তিনি।

শের মোহাম্মদ আব্বাস স্তানিকজাই

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগ পর্যন্ত তালেবান সরকারের একজন উপমন্ত্রী ছিলেন স্তানিকজাই। প্রায় এক দশক ধরে দোহায় অবস্থান করছেন। ২০১৫ সালে সেখানে তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান হন। স্তানিকজাই আফগান সরকারের সাথে শান্তি আলোচনায় অংশ নিয়েছেন এবং বেশ কয়েকটি দেশে কূটনৈতিক সফরে তালেবানের প্রতিনিধিত্ব করছেন।