খালেদা জিয়ার জন্মদিন নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য ‘শিষ্টাচারবিবর্জিত’: ফখরুল

প্রকাশিত: ১:৫৬ অপরাহ্ণ, |                          

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাঁদের দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য ‘রাজনৈতিক শিষ্টাচারবিবর্জিত’। তিনি এর নিন্দা জানিয়েছেন।
আজ সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় এক দোয়া মাহফিলে মির্জা ফখরুল এই নিন্দা জানান।

খালেদা জিয়ার ৭৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর আরোগ্য, দীর্ঘায়ু ও মুক্তি কামনায় এবং সারা দেশে করোনাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী মানুষের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিএনপি এই মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো এখানে সবাই দেশনেত্রীর দীর্ঘায়ু, সুস্বাস্থ্য কামনা করার জন্য উপস্থিত হয়েছি মিলাদের মাধ্যমে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এ দেশের গণতন্ত্রের সঙ্গে একটা অবিচ্ছেদ্য নাম। গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাঁর যে সংগ্রাম, সেই সংগ্রাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। আজকেও এই মুহূর্তে তিনি সেই সংগ্রামই করে চলেছেন।’

বিজ্ঞাপন
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের যে অবৈধ সরকার আওয়ামী লীগ, যেটা আমাদের বুকের ওপর চেপে বসে আছে, তার সাধারণ সম্পাদক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন সম্পর্কে একেবারে অরাজনৈতিক শিষ্টাচারবিবর্জিত কথা বলেছেন। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়ার জন্মদিন ছয়টি। জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্টের দিন ভুয়া জন্মদিন পালন করে খালেদা জিয়া জাতির সঙ্গে প্রতিবছর তামাশা করেন। ম্যাট্রিকুলেশন সনদ অনুযায়ী খালেদা জিয়ার জন্মতারিখ ৯ আগস্ট ১৯৪৫, বিবাহ সনদে ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫, পাসপোর্ট সনদে ১৯ আগস্ট ১৯৪৫। আবার তিনিই দাবি করেন ১৫ আগস্ট ১৯৪৫ তাঁর জন্মদিন!

খালেদা জিয়ার প্রতি সরকারের প্রতিহিংসামূলক আচরণের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে একটা মিথ্যা মামলায় যেটা এক–এগারোর অবৈধ সরকারের আমলে দায়ের করা হয়েছিল, সেই মামলায় সাজা দিয়ে তাঁকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে শুধু জনগণ থেকে দূরে রাখার জন্য, রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য অন্তরীণ করে রেখেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা দেখেছি কী নিদারুণ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে তিনি প্রায় তিন বছর এই অন্তরীণ অবস্থা অতিক্রম করছেন এবং এর মধ্যে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে অত্যন্ত গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেই সময়ে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বলা হয়েছিল তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেওয়ার। সরকার তাঁকে যেতে দেয়নি।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, জনগণের নেত্রীকে জনগণের সামনে আসতে না দেওয়া এবং তিনি যেন রাজনীতিতে সক্রিয় হতে না পারেন, সে জন্য তারা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ব্যর্থ হবে। তিনি আবার জনগণের সামনে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই যে ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট দানবীয় শক্তি দেশের মানুষের ওপর চেপে বসে আছে, তাদের পরাজিত করতে তিনিই নেতৃত্ব দেবেন।’
পরে খালেদা জিয়ার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় দোয়া মাহফিলে দলের স্থায়ী কমিটির গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান ও আবদুস সালাম বক্তব্য দেন।

দোয়া মাহফিলে বিএনপির নেতা হাবিবুর রহমান, খায়রুল কবির, সৈয়দ এমরান সালেহ, শিরিন সুলতানা, মীর সরফত আলী, আবদুস সালাম আজাদ, শামীমুর রহমান, তাইফুল ইসলাম, মনির হোসেন, বেলাল আহমেদ প্রমুখ।

মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলার কক্ষ ভরে ফুটপাতেও কয়েক শ নেতা-কর্মী শরিক হন।
‘৭৭–এ পা রাখলেন খালেদা জিয়া’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ৭৭ বছরে পা রেখেছেন। তাঁর জন্ম ১৯৪৫ সালে। খালেদা জিয়ার বাবা এস্কান্দার মজুমদারে বাড়ি ফেনীতে হলেও কর্মজীবনের সুবাদে দিনাজপুরে বসবাস করেন তিনি, সেখানেই খালেদা জিয়ার জন্ম হয়। খালেদা জিয়ার জন্মতারিখ নিয়ে বিতর্ক আছে।

১৫ আগস্ট তাঁর জন্মদিন থাকলেও ২০১৬ সাল থেকে দিবসটিতে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠন ‘বন্যা ও গুম-খুনে’র কারণ দেখিয়ে কেক কাটার কোনো অনুষ্ঠান আর করছে না। পরদিন দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে দলের নেতা-কর্মীরা তাঁদের নেত্রীর জন্য দোয়া করে আসছে, যার ব্যতিক্রম হয়নি এবারও।

১৯৬০ সালে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বিয়ে হয়। ১৯৮১ সালে স্বামীর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপির হাল ধরেন খালেদা জিয়া। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং ২০০৮ সালে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন।

২০০৮ সালের জুলাই মাসে সেনাসমর্থিত ততকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ২০১৮ সালে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দী হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
তিন বছর কারাবাসের পর গত বছরের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে ৬ মাসের সাজা স্থগিতে মুক্ত হওয়ার পর থেকে অসুস্থ খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা ফিরোজায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। কোনো নেতা-কর্মীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎও নেই।

সারা দেশে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে আজ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর।