চীন ঠেকানোর বিশাল বাজেট যুক্তরাষ্ট্রের: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই সবচেয়ে বড়

প্রকাশিত: ৮:১০ পূর্বাহ্ণ, |                          

এশিয়ার উদীয়মান পরাশক্তি চীনকে বড় হুমকি হিসাবে দেখছে আরেক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র। এবার সেই চীনকে ঠেকানোর লক্ষ্য নিয়ে সামরিক বাজেট নিয়ে আসছে উত্তর আমেরিকার দেশটির নতুন সরকার।

ইতোমধ্যে সামরিক খাতে ৭১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার (৭১৫ বিলিয়ন ডলার) বরাদ্দ চেয়ে নিজেদের প্রথম বাজেট প্রস্তাবনা পেশ করেছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন।

বাজেটে পরমাণু শক্তিধর চীনের মোকাবিলায় পরমাণু অস্ত্রাগার আরও আধুনিকায়ন ও সেই সঙ্গে আগামী দিনের সমর সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

এক্ষেত্রে অন্য খাতগুলো থেকে তহবিল সরিয়ে সামরিক খাতে ব্যয় বাড়াবে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য (ফেডারেল বাজেট) সর্বমোট ছয় লাখ কোটি ডলারের বাজেট চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন বাইডেন। শুক্রবার (বাংলাদেশ সময় শনিবার) বাজেটটি কংগ্রেসে তোলার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বাজেট।

মার্কিন অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এভাবে বাড়লে আগামী ২০৩১ সালের মধ্যে বাজেট আট লাখ ২০ হাজার কোটি ডলারে ঠেকবে। বাজেট ঘাটতিও রেকর্ড গড়বে।

আগামী এক দশক ধরে প্রতি বছর এই ঘাটতির পরিমাণ হবে এক লাখ ৩০ হাজার (১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার)। করোনা মহামারীর কারণে চলতি বছরেই ইতোমধ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলারে (১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার)।

নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু বড় পরিকল্পনার সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি (সোসাল সেফটি নেট) আরও বিস্তৃত করার উদ্যোগ নিয়েছেন বাইডেন।

বাজেটের বেশির ভাগ অর্থই এসব খাতে ব্যয় হবে। তবে গত বছরগুলোর তুলনায় আগামী বছর সামরিক খাতের ব্যয় আরও বাড়ছে। গত মাসেই হোয়াইট হাউজ এক বিবৃতিতে জানায়, রাশিয়া ও চীনকে

ঠেকাতে প্রতিরক্ষা বাজেটে সাত হাজার ১৫০ কোটি ডলার অনুমোদনের ব্যাপারে মার্কিন কংগ্রেসকে প্রস্তাব দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। হোয়াইট হাউজ থেকে আরও বলা হয়, বাজেটে চীনা হুমকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সেই

সঙ্গে রাশিয়ার অস্থিতিশীল আচরণ ঠেকাতে কাজ করবে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

প্রস্তাবিত বাজেটের নথি মতে, সেনা প্রস্তুতি, মহাকাশ যুদ্ধ ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের সামরিক বিস্তার ঠেকানো ও ন্যাটো জোটের সদ্যদের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে কাজ করা প্রভৃতি বিষয়ে জোর দেওয়া হবে।

যুক্তরাষ্ট্র এসব ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ধারণা ও সক্ষমতা নিশ্চিত করবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনকে সবচেয়ে বড় হুমকি হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।

দায়িত্ব গ্রহণের পর সেই ধারাবাহিকতাই বজায় রেখেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। ওই নথিতে আরও বলা হয়েছে, মহামারি থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তনে চীনের ক্রমবর্ধমান উচ্চাকাঙ্ক্ষা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

গণতন্ত্রের জন্য বৈশ্বিক হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে চীন। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবেলায় অন্যান্য জাতির সঙ্গে অংশীদারির পাশাপাশি কাজ করা প্রয়োজন।

বাজেট প্রস্তাবনায় রাষ্ট্রীয় বাহিনীর জন্য যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান ক্রয় ও সেনার ভরণপোষণ ব্যয় ও বেতনের জন্য উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ছাড়া প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত অন্যান্য কর্মসূচি ও রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা বিভাগ এফবিআই তথা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের জন্য আলাদা আরও তিন হাজার ৮০০ কোটি ডলার (৩৮ বিলিয়ন ডলার) প্রস্তাব করা হয়েছে। এজেন্সিগুলোকে আধুনিকীকরণ, শক্তিশালীকরণ এবং পুরোনো তথ্যপ্রযুক্তি সুরক্ষার জন্য এবং ফেডারেল সাইবার সিকিউরিটির বিষয়টিকে উৎসাহিত করার জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে।