স্বাধীনতার ৪৭ বছরে স্বাধীনতার স্বাদ পায়নি সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল

প্রকাশিত: ৪:৫০ পূর্বাহ্ণ, |                          

মো জাবির আহমদ-

মেম্বার সাহেব বাড়িতে আছেন? উত্তর এলো মেম্বার সাহেব বাড়িতে আছেন ভিতরে আসেন। বৃদ্ধ লোকটি ভিতরে চলে গেলো। মেম্বার সাহেবের গদির সামনে নতজানু হয়ে বসে বৃদ্ধ লোকটি ফরিয়াদ জানালো দুই দিন হয়ে গেল বাড়ীতে কোন কিছু নেই শুধু পানি খেয়ে বেঁচে আছি বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে এক বস্তা চাল এর ব্যবস্থা করে দিন। মেম্বার সাহেব চামচার দিকে ঘার ফিরিয়ে বললেন তোমার ঘরে বিয়ের উপযুক্ত একটি মেয়ে আছে তাকে আমার বাড়িতে কাজের জন্য পাঠিয়ে দিন আমি এক বস্তা চালের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

বৃদ্ধ লোকটি অসহায় চোখে মেম্বারের দিকে তাকিয়ে বলল হুজুর আমার মেয়েটি এক সপ্তাহ ধরে অসুস্থ সে আসতে পারবে না। আমাকে বলেন আমি কি করতে পারি।
মেম্বার সাহেব নাখুস হয়ে বললেন তুমি যখন কাজ করতে ইচ্ছুক তাহলে আগামীকাল রাস্তা ভরাট করার কাজে আসবে। কাজ শেষে তিন কেজি চাল নিয়ে যাবে। বৃদ্ধ লোকটি চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বাড়ির দিকে রওনা দিল।

পরের দিন বৃদ্ধ লোকটি কাজ করতে করতে রাস্তার পাশে হঠাৎ মারা গেলো।

মহান স্বাধীনতার ৪৭ বছরে একজন বৃদ্ধর এমন মৃত্যু আমরা কি চেয়েছিলাম? বাংলাদেশের প্রতিটি বিবেকবান মানুষ উত্তর দিবে আমরা কখনো এমন বাংলাদেশ চাইনি।

এই ঘটনাটি যদি কাল্পনিক হতো তাহলে গল্পের ইতি এখানেই হতো । কিন্তু এটা কাল্পনিক কোন গল্প নয় এটা বাস্তব একটি ওয়ার্ড মেম্বার এর দুর্নীতির চিত্র।
বাংলাদেশ তথা সুনামগঞ্জের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের ওয়ার্ড মেম্বার এর দুর্নীতির চিত্র দেখার যেন কেউ নেই। আর যে বা যাহারা দুর্নীতির চিত্রের প্রতিবাদ করে তারা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছন্দ নামে প্রতিবাদ জানায়। যে প্রতিবাদের কোন গুরুত্ব বা প্রতিক্রিয়া সমাজে সৃষ্টি হলেও তার সঠিক অভিযোগকারীর অভিযোগ না থাকায় সমাজের উচ্চবিত্তরা কোন বীহিত ব্যবস্থা করতে পারেন না। এই দুর্নীতিবাজ মেম্বারের বিরুদ্ধে যে বা যাহারা কথা বলবে তাদের জন্য মৃত্যু অবধারিত এক বাস্তবতা।

গত ২৭ শে মার্চ আহমেদ আহমেদ নামে এক ফেসবুক আইডি থেকে ছাতক থানার ১৩ নং ভাত গাও ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড মেম্বার শাবাজ মিয়ার বিরুদ্ধে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখ) প্রজেক্টের টাকা আত্মসাৎ করে মানুষদেরকে কাজ করিয়ে খাদ্য দিচ্ছেন না এমন অভিযোগে একটি পোস্ট করা হয়েছে।

পোস্টের হুবহু পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো :

“গত দুইদিন পূর্বে এক বৃদ্ধ লোক ঝিগলীতে সড়কের মাটি ভরাট করতে গিয়ে মারা যান। অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয় সাবাজ মেম্বারের কাছে রিলিফের চাল পাওয়ার আবেদন নিয়ে গেলে এই বৃদ্ধ লোকটিকে সাবাজক মেম্বার চাল না দিয়ে মাটি ভরাটের কাজে যোগ দিয়ে প্রতিদিন তিন কেজি চাল নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। বৃদ্ধ লোকটির বয়স ছিল আনুমানিক ৭৫ বছর। কাজের চাপ সহ্য না করতে পেরে মাটির বুজা মাথায় নিয়ে মারা যান। সাহবাজ মেম্বারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করে বা প্রতিবাদ করে তার বিরুদ্ধে সাবাজ মেম্বার সামাজিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে এক ঘরে করে রাখেন।
সাবাজ মেম্বারের ছেলে রুমেনের বিরুদ্ধে রয়েছে অবৈধ অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ। তার বাবার বিরুদ্ধে যে এই কথা বলবে তার বাড়ির সামনে গিয়ে অক্যাত্য ভাষায় গালাগালি করে বন্দুক দিয়ে গুলি করার ভয় দেখায়। ৭নং ওয়ার্ড যেন এক বিচ্ছিন্ন জাহান্নাম। ”

এই পোস্টটি যদিও ফেসবুকের ফেক আইডি থেকে করা হয়েছে কিন্তু এই পোস্টের প্রতিটি কথার বাস্তবতা রয়েছে। ভাত গাও ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড দক্ষিণ ছাতকের একটি বিচ্ছিন্ন ওয়ার্ড। যেখানে প্রশাসনের নজরদারি করা শূন্যের কোঠায় বললেই চলে। এই সুযোগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতে নিয়ে শাবাজ মেম্বার গড়ে তুলেছেন একটি অঘোষিত রাজ্য। যে রাজ্য রাজা শাহবাজ মেম্বার। রাজপুত্র হলো তার পুত্র রুমেন। প্রশাসন কোন কারনে এখানে নজরদারি করতে আসলে শাহবাজ মেম্বারের অস্ত্রের দাপট, বড় বড় নেতাদের সাথে হাত থাকার কারণে প্রশাসন নির্বিকার হয়ে যায়।
শাহবাজ মেম্বারের গডফাদার ভাত গাও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত, ফয়জুল বারী, আওলাদ মাস্টার, চেয়ারম্যান গিয়াস মিয়ার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদদে ওয়ার্ডের সংখ্যালঘু গুষ্টির ওপর উপর ক্রমবর্ধমান হারে নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় নির্যাতিত গুষ্টির সকল লোক নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরলে প্রশাসন ক্রমাগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণে অপরাগতা জানিয়ে আসছে।
আমার এই লেখা টি যদি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরে আসে তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ রইল।
লেখক : অনলাইন ব্লগার