আন্দামান সাগরে ভাসমান রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠাতে চায় ভারত

প্রকাশিত: ২:৪৯ অপরাহ্ণ, |                          

আন্দামান সাগরে ভাসমান একটি নৌকা থেকে ৮১ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে উদ্ধার করার পর ভারত সরকার এখন তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চায়।

ভারত বলছে, যেহেতু এই রোহিঙ্গারা কক্সবাজার থেকে সমুদ্রে ভেসেছিলেন এবং তাদের অধিকাংশের কাছেই বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআরের জারি করা শরণার্থী কার্ড আছে।তাই তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে সে দেশের সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা বলা হচ্ছে। খবর বিবিসির।

তবে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ভারতের এই প্রচেষ্টার সমালোচনা করে বলছে– শুধু উদ্ধার করেই ভারতের দায়িত্ব শেষ হতে পারে না।আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা অনুযায়ী, এই রোহিঙ্গাদের আপাতত আশ্রয় ও সুরক্ষার ব্যবস্থাও ভারতকেই করতে হবে।

বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে গত ১১ ফেব্রুয়ারি রোহিঙ্গাদের একটি বেশ বড় দল, ৬৪ নারী ও ২৬ পুরুষকে নিয়ে বঙ্গোপসাগরে ভেসেছিল এই নৌকাটি।

চার দিন পরেই নৌকার ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ায় সেটি সাগরে দিশাহীনভাবে ভাসতে থাকে।

বাংলাদেশ থেকে ভেসে পড়া একটি নৌকার আরোহীদের উদ্ধার করে আন্দামানে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ভারতীয় কোস্টগার্ড।

পরবর্তী কয়েক দিনে অনাহারে ও দুর্যোগে নৌকার আট আরোহী মারা যান, নিখোঁজ হন আরও একজন।

গত সপ্তাহে অবশেষে আন্দামান সাগরের কাছে ভারতীয় কোস্টগার্ডের দুটি জাহাজ গিয়ে বাদবাকি ৮১ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে।তাদের কাছে খাবারদাবার, রসদ, ওষুধপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, নৌকার আরোহীদের মধ্যে অন্তত ৪৭ জনের কাছে বাংলাদেশে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা বা ইউএনএইচসিআরের জারি করা পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে। ওই পরিচয়পত্রে বলা হয়েছে– তারা মিয়ানমারের আশ্রয়চ্যুত নাগরিক এবং ইউএনএইচসিআরে নথিভুক্ত।

ভারত যে এই ৮১ রোহিঙ্গাকে তাদের মাটিতে আশ্রয় দিতে চাইছে না সেটি স্পষ্ট।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক কর্মকর্তা মীনাক্ষি গাঙ্গুলী বলছেন, এরা মিয়ানমারের নাগরিক হলেও আপাতত ভারতেরই দায়িত্ব তাদের সুরক্ষা ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা।

রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে প্রধান দায়িত্ব অবশ্যই মিয়ানমারের। তবে তার পরের দায়িত্ব হলো বাকি সেই সব দেশের, যেখানে তারা শরণার্থী হয়ে আসছে কিংবা যাদের জুরিসডিকশনে প্রবেশ করছে।

এ ক্ষেত্রে ভারতের জলসীমার মধ্যে এই নৌকাটিকে যে উপকূলরক্ষীরা উদ্ধার করেছে এবং তাদের রসদপত্র সব দিয়েছে, সেটি খুবই ভালো কথা।

কিন্তু এর পরের দায়িত্ব হলো জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে অ্যাকসেস দেওয়া, যাতে তারা এই রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে যাচাই করতে পারে ঠিক কী ঘটেছে কিংবা কোনটা সত্যি বা সত্যি নয়।

এখন ভারত এদের আবার বাংলাদেশেই ফেরত পাঠাতে চায়- কিন্তু বাংলাদেশ তো বলছে– এমনিতেই লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে।এর মধ্যে যারা চলে গেছে, তাদের কেন আবার নতুন করে নেব?

মীনাক্ষি গাঙ্গুলী আরও বলেন, এই পরিস্থিতিতে ভারতেরই প্রাথমিক দায়িত্ব হলো আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা মেনে এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া, প্রোটেকশন দেওয়া।

দিল্লিভিত্তিক ‘রোহিঙ্গা হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশনে’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আলি জোহর বলেন, পাঠাতে হলে এদের মিয়ানমারেই পাঠানো উচিত; কিন্তু সেটি যতদিন না সম্ভব হচ্ছে, ততদিন ভারত কিন্তু তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারে না।

আলি জোহর বলেন, এরা তো কেউ বাংলাদেশি নন। এরা সবাই হলেন প্রকৃতপক্ষে মিয়ানমারের নাগরিক এবং রোহিঙ্গা।