এবার বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠান টার্গেট ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকদের

প্রকাশিত: ৬:৫৯ অপরাহ্ণ, |                          

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে নজিরবিহীন তাণ্ডবের পরও থেমে নেই ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকদের কর্মকাণ্ড। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের বিশ্লেষণে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

সিএনএনের বিশ্লেষণে বলা হয়, অনলাইনে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকরা। এমনকি ২০ জানুয়ারি শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানকেও লক্ষ্যবস্তু করার পরিকল্পনা করছে তারা। বলা হয়েছে, ক্যাপিটল হিলে হামলার পর নিজেদেরকে আরও বেশি বলিষ্ঠ ভাবতে শুরু করেছে চরমপন্থী সংগঠনগুলো। তাদের কণ্ঠে জোরালো হচ্ছে সহিংসতার আহ্বান।

আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন বাইডেন। ওই দিনই ট্রাম্পের মেয়াদ শেষ হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পার্লার’র এ এক ট্রাম্প সমর্থক লেখেন, ১৯ জানুয়ারি ২০২১ আমাদের অনেকে ফিরে আসবে, আমাদের জাতীয় সংকল্পের সমর্থনে আমরা অস্ত্র নিয়ে আসব, যেটা এই বিশ্ব কোনোদিন ভুলতে পারবে না!!! আমরা এত সংখ্যায় আসব যে, কোনও সেনাবাহিনী বা পুলিশ বাহিনী তার মোকাবেলা করতে পারবে না।

এনবিসি নিউজ জানায়, পার্লার, টেলিগ্রাম চ্যাট রুমস এবং দ্যডনাল্ড ডট উইন এর মত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে গত ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে জড়ো হয়েছিল ট্রাম্প সমর্থকরা। পরে তারা ক্যাপিটলে তাণ্ডব চালায়। বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেওয়া ওই তাণ্ডবে এক পুলিশসহ পাঁচ জন নিহত হন।

দ্য ডনাল্ড ডট উইন এ অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তি পোস্ট করেন, দ্বিতীয় দফা হবে ২০ জানুয়ারি। এবার কোনও দয়া দেখানো হবে না। আমি এমনকি ট্রাম্পকে ক্ষমতায় রাখা নিয়েও মাথা ঘামাচ্ছি না। আমার মূল লক্ষ্য যুদ্ধ। ওই পোস্টের নিচে যেসব মন্তব্য পড়েছে তা দেখে মনে হচ্ছে বুধবারের হামলাকারীদের তারা ‘বীরের’সম্মান দিচ্ছেন।

ট্রাম্পের এই উগ্র সমর্থকদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও উদ্বেগের মধ্যে আছে। তারা ক্যাপিটল ভবনে তাণ্ডব চালানো ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে গ্রেপ্তারের করছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এর সাবেক সহকারী পরিচালক ফ্রাঙ্ক ফিগলিউৎসি বলেন, ‘উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, ক্যাপিটলে হামলার মাধ্যমে নৃশংস চরমপন্থিদের সাহস আরও বেড়ে গেছে। ওই দিনের ঘটনাকে তারা উদ্দীপনা হিসেবে নিয়ে আরও নৃশংস ঘটনা ঘটাতে চাইছে।

অনলাইনে চরমপন্থি কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে এমন কয়েকটি সংগঠনও ক্যাপিটলে সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছিল। এডিএল নামে একটি সংগঠন গত ৪ জানুয়ারি এক পোস্টে এ বিষয়ে সতর্ক করে বলেছিল, অনলাইনে এক ব্যক্তির প্রশ্ন ছিল, ট্রাম্প নির্বাচনে জয়লাভের দাবির পক্ষে যেসব প্রমাণ দিয়েছেন কংগ্রেস যদি তা উপেক্ষা করে তবে কী হবে? জবাবে একজন লিখেছেন, তাহলে ক্যাপিটলে তাণ্ডব চলবে।

একই দিন সিকিউরিটি ফার্ম জিফোরএস প্রকাশিত এক বিশ্লেষণেও সহিংসতার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ৬ জানুয়ারি এবং প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের দিন সশস্ত্র মিলিশিয়া গ্রুপসহ কারও কারও মধ্যে সহিংস কর্মকাণ্ড চালানোর ইচ্ছে দেখা যাচ্ছে।

ওই বিশ্লেষণে আরো বলা হয়, গত কয়েক সপ্তাহে ডানপন্থি সাইট দ্য ডনাল্ড ডট উইন এ সহিংসতার উসকানিমূলক অনেক পোস্ট দেখা গেছ। ডিসেম্বরের শেষের দিকে এমন একটি পোস্টে বলা হয়, আকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে কংগ্রেসে তাণ্ডব চালানো এবং কংগ্রেস দখলের মতো প্রকৃত কৌশলগত জয় আমাদেরকে অর্জন করতে হবে।

এ অবস্থায় বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান নিয়ে নিরাপত্তা উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। টোরান্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষক জন স্কট রেইলটন সিএনএন-কে বলেন, শপথ অনুষ্ঠান নিয়ে তিনি ‘ভয়ঙ্কর রকমের উদ্বিগ্ন’।

তিনি বলেন, একদিকে জনগণের একটা বড় অংশ যখন ক্যাপিটলে বুধবারের ঘটনা নিয়ে বিস্মিত, একই সময়ে ডানপন্থিদের একটা অংশ একে তাদের সাফল্য হিসেবে দেখছে।