করোনাই শেষ নয়, আরও মহামারি আসছে

প্রকাশিত: ৭:১৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৫, ২০২০ | আপডেট: ৭:১৩:অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৫, ২০২০

বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মহামারি এখনো শেষ হয়নি। আর এটাই শেষ কোনো মহামারি নয় বলে মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সূত্র: বিবিসি বাংলা

তাই কেবল চিকিৎসা বা হাসপাতাল নির্ভর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মহামারি মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। আগামীতে যেকোনো মহামারি মোকাবিলার জন্য জনস্বাস্থ্যকে মাথায় রেখে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভবিষ্যতে কী ধরণের প্রস্তুতি থাকা দরকার সে বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘প্যান্ডেমিক থেকে আমাদের দেশের শিক্ষা হবে নিজের পা’কে শক্তিশালী করা, নিজেদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা এবং নিজের যে সামর্থ্য রয়েছে তার সর্বোত্তম ব্যবহার করা। এটি যেমন গবেষণার ক্ষেত্রে তেমনি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এবং তেমনি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনারও ক্ষেত্রে।’

এরই মধ্যে করোনাভাইরাস কেড়ে নিয়েছে লাখ লাখ মানুষের জীবন। অর্থনীতি, জীবন জীবিকা, ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত। তাই পরবর্তী যে কোন মহামারি মোকাবিলায় এখন থেকেই প্রস্তুত হবার তাগিদ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

মহামারি বা সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেই আবার উদাসীন হবার যে চক্র তা থেকে বেরিয়ে আসারও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কী করছে?

রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অন্যতম উপদেষ্টা মুশতাক এ বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। ভবিষ্যৎ মহামারি নিয়ন্ত্রণের বাংলাদেশের প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনা কেমন হবে সেটি নির্ধারণে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন বলেও জানান তিনি।

মুশতাক বলেন, ‘এই করোনা মহামারির সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, এগারটি স্তম্ভ। সেইটাকে ধরে ধরে আমরা আমাদের শক্তির দিকগুলো কোথায়, আমাদের দুর্বলতার দিকগুলো কোথায় এবং এটার কী অভিঘাত হয়েছে আমাদের মহামারিতে। আমাদের যে শূন্যস্থানটা আছে সেটা কীভাবে পূরণ করবো এগুলো কিন্তু চিহ্নিত করছি। এগুলো নিয়ে আমরা আশা করি যে, আগামী বছরের মধ্যে খসড়া একটা জেনেরিক করছি। আমাদের এখনকার যে অভিজ্ঞতা সে অভিজ্ঞতাকে সামনে নিয়ে। নিশ্চয়ই অতীতে যে ভুলগুলো হয়েছে ভবিষ্যতে সে ভুলগুলো হয়তো হবে না।’

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার এবং মানবদেহে প্রয়োগ শুরুকে দেখা হচ্ছে চলমান মহামারির শেষের শুরু হিসেবে। কিন্তু এটাই যে শেষ মহামারি নয় সেটি নিশ্চিত, তাই পরামর্শ হচ্ছে এবারের শিক্ষা থেকে আগামী মহামারির জন্য প্রস্তুতি নেয়ার।

এদিকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর স্বাস্থ্য খাতের নানারকম সংকট সামনে আসে। প্রথমদিকে পরীক্ষার জন্য দীর্ঘ লাইন, ফল পেতে ভোগান্তি, হাসপাতালে ভর্তি, আইসিইউ এবং জরুরি অক্সিজেনের ঘাটতি ছাড়াও সাধারণ রোগের চিকিৎসা ব্যহত হয়েছে। এছাড়া শুরুতে চাহিদার তুলনায় জরুরি সুরক্ষা সামগ্রীর সংকট যেমন দেখা যায় এ নিয়ে বিতর্কের মুখেও পড়তে হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগকে।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের জনস্বাস্থ্য বিভাগটি কোন মহামারি মোকাবেলার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না। একেবারেই সামর্থ্যহীন ছিল। কারণ আমরা কাগজে কলমে যে পরিকল্পনা করেছিলাম মহামারি প্রতিরোধের জন্য, এটি যখন বাস্তবায়িত করতে যাই আমরা দেখেছি তার একটি বড় অংশই বাস্তবায়ন করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। তাই দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা করোনা পরবর্তীকালে জনস্বাস্থ্যের ওপরে জোর দিয়ে নতুনভাবে বিন্যাস করতে হবে। এটাই আমাদের জন্য বড় একটা শিক্ষা।’

তবে মহামারি চলাকালীন অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সক্ষমতা বেড়েছে বলেও অনেকের কাছে দৃশ্যমান। পরীক্ষার ল্যাব থেকে শুরু করে করোনার চিকিৎসা, অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা এবং ব্যবস্থাপনায় এ উন্নতির কথা বলছেন আইইডিসিআর’র অন্যতম উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন।

তিনি বলেন, ‘গত ২৬ মার্চ পর্যন্ত আরটিপিসিআর পরীক্ষা কেবলমাত্র একটি ল্যাবরেটরিতে হতো। এখন প্রায় ১৩০টি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা হচ্ছে। তাছাড়া জিন এক্সপার্ট মেশিন দিয়ে কাজ করা হচ্ছে এবং অ্যান্টিজেন র‌্যাপিড টেস্টও হচ্ছে।’

মুশতাক আরও বলেন, ‘সক্ষমতা খুবই বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের বিভিন্ন জেলা শহর হাসপাতালে হাইফ্লো অক্সিজেন সরবরাহের সক্ষমতাও বেড়েছে। আমাদের আইসিইউ ক্যাপাসিটি বেড়েছে। তবে হ্যাঁ, দক্ষ জনবল তৈরিতে আমরা কিছুটা পিছিয়ে আছি। কারণ দক্ষ জনবল এত দ্রুত তৈরি করা যায় না।’