ইফতারি প্রথাঃ অসভ্য ও বর্বর প্রথা

প্রকাশিত: ৭:০৯ অপরাহ্ণ, |                          

 

সাধারণত গ্রামীণ এলাকার লোকজনের মাঝে কুসংস্কারের প্রভাব ও প্রবণতা একটু বেশি লক্ষ করা যায়। তবে শহরের লোকজন এসব থেকে মুক্ত এটাও বলা যাবে না। বড় বড় খোলোয়াড়, রাজনৈতিক নেতা, প্রসিদ্ধ লেখকসহ বিভিন্ন শেণী-পেশার লোকদের মাঝেও কুসংস্কারের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। তাদের সমাজ-সংসার, আচার-অনুষ্ঠান ও দৈনন্দিন বিভিন্ন কর্মকাণ্ড এসব মনগড়া প্রথা ও ভ্রান্ত রীতিনীতি অনুযায়ী সম্পন্ন হয়। আল্লাহর বিধান ও হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর দেখানো জীবনাচারের সঙ্গে এসব সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ইসলামী শরীয়ত এসব কুসংস্কার ও কুপ্রথাকে বিশ্বাস করা হারাম বলে অভিহিত করে তা থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
শ্বশুরবাড়ীর ইফতারি সামাজিক বন্ধন নয়, বরং সামাজিকতার নামে একটা মেয়ের বাবার উপর এক নিরব অবিচার”যা যুগ যুগ ধরে আমাদের সমাজে প্রচলিত হয়ে আসছে।শুধুমাত্র অবিচারই নয় একটা প্রচলিত কুসংস্কারও বটে। তারই ধারাবাহিকতায় যুগ যুগ ধরে এই নীরব অবিচারের বলি হচ্ছেন মেয়ে পক্ষ বা মেয়ের বাবা অথবা তার পরিবার। একমাত্র ভুক্তভোগী পরিবার জানে এই কুসংস্কারের বলি হয়ে তারা কতটা জর্জরিত। জন্মের পর থেকে একটা মেয়ে পরিপূর্ণভাবে তার পরিবারের উপর নির্ভরশীল। বিয়ের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত তার যাবতীয় খরচ তার পরিবারই বহন করে তাকে। ২০/২৫ টা বছর ভরন-পোষণ করে কোনরূপ প্রতিদান না নিয়েই একজন বাবা তার মেয়েকে পাত্রস্থ করে দেন। সেই বিয়েতে মেয়ের বাবাকে/অভিভাবককে জামাই বাড়ির কতরকম আবদার নীরবে সহ্য করে মেটাতে হয়। আর শুধুই কি এখানেই শেষ? একটা মেয়ের বিবাহ সম্পন্নের পর আরো কত যুগ শশুরবাড়ির কত রকমের আবদার মেটাতে হয়, তার কোন সীমারেখা নেই।
বিয়ের পর মেয়ের শশুর বাড়ির চৌদ্দগোষ্টিকে দাওয়াত খাওয়ানোর সঙ্গে চৌদ্দগৌষ্টির জন্য কাপড় দেয়া।এমন কতগুলো কুসংস্কার আমাদের সমাজে চলমান,এর মধ্যে ইফতারি নামের এক কু-প্রথা অন্যতম।
আপনি একটা মেয়েকে বিয়ে করেছেন নাকি আপনার চৌদ্দগুষ্ঠীর খাওয়া দাওয়ার দায়িত্ব মেয়ের বাড়ির সাথে বন্দোবস্ত করেছেন? সমাজের কিছু কিছু বিত্তবান মানুষের বিলাসিতা বাকি হাজারটা পরিবারের সুখ কেড়ে নিচ্ছে। তাদের একেকটা বিলাসি কর্মকাণ্ড পরবর্তী হাজার পরিবারের নির্মমতার কারণ হচ্ছে। অনেকে বলে থাকেন এসব ইফতারি নাইওরী দিলে সামাজিক সম্পর্ক বাড়ে,পারস্পরিক মায়া মমতা বাড়ে। সারা জীবন খেয়েই যাচ্ছেন। এতে সম্পর্ক বৃদ্বি হচ্ছেনা।বরং এই দেওয়ার অন্তরালে লুকিয়ে থাকে হাজার হাজার অশ্রু আর মেয়ের জামাই বাড়ির প্রতি নিরব ঘৃণা। যা মুখ ফুটে বলা হচ্ছেনা।
ইফতারি,নাইওরী,আম কাঠালি মেয়ের বাবার বা পরিবারের বুকে সভ্য সমাজে অসভ্যতার এক ভয়াল তীর।আমরা আধুনিক আর সভ্যতার স্লোগান দিচ্ছি তবে মেয়ের বাবার প্রতি এই অবিচার কেন?আপনার সিজনভিত্তিক একদিনের নাইওরী আর ইফতারি খাওয়ার আনন্দ করে অন্য পরিবারের সারাটা মাস বছরের চিন্তার কারণ না হই।
আমাদের সমাজ থেকে যাবতীয় কুসংস্কার সম্পর্কে মানুষকে সচেতন ও সজাগ করতে আলেম-উলামা, মসজিদের ইমাম-খতিব, শিক্ষক, সাংবাদিক ও সমাজ উন্নয়ন কর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে। সচেতনতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষকে ধর্ম সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে। দেশ ও জাতির বৃহৎ স্বার্থে এমন অলিক ও ধরাণাপ্রসূত কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাবের পরিবর্তন অতীব জরুরি।
এই ইফতারি নামক কু-প্রথা পরিহার করি। সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই ইফতারি নামক কু-প্রথার কারনে কোন বোন কটুকথা শুনবেনা,আর কোন বাবা নিরবে অত্যাচারিত না হবে। আসুন সবাই মিলে সুন্দর সমাজ গঠনে এগিয়ে আসি।
লেখক
সিদ্দিকুর রাহমান
সাংগঠনিক সম্পাদক ,ইউরো বাংলা প্রেসক্লাব।
সদস্য ,স্পেন বাংলা প্রেসক্লাব।
স্পেন, মাদ্রিদ।