তাইজুল ফয়েজ এর কাব্যগ্রন্থ ‘নিশিরাতে চাঁদের সাথে’

প্রকাশিত: ৬:৩৩ অপরাহ্ণ, |                          

 

ড. মমতাজ বেগম বড়ভূইয়া, ভারত :

ফ্রান্স প্রবাসী কবি তাইজুল ফয়েজ এর” নিশি রাতে চাঁদের সাথে” বইটি পাওয়া যাবে আগামী ৪,৫ সেপ্টেম্বর শনি-রবিবার লন্ডন বইমেলায়। তাইজুল ফয়েজ। পুরো নাম : মোহাম্মদ তাইজুল ইসলাম (শাহ ফয়েজ)। তিনি একাধারে কবি, কলামিস্ট, সংগঠক ও সমাজচিন্তক। ব্যক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্রের নানাবিধ বিষয় তাঁর চিন্তার দ্যোতক। কবিতায় তিনি গতিসঞ্চারী। সহজবোধ্য ভাষায় কবিতা রচনায় তার জুড়ি মেলা ভার। একটি আলোকিত সমাজ গঠনে তাঁর রয়েছে দারুণ কর্মপ্রয়াস। তাঁর কলামেও বিস্তর ভাবনায় ফুটে ওঠে দেশ-সমাজের সমস্যা-সম্ভাবনা ও সমাধান।

তাইজুল ফয়েজ ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের ৫ এপ্রিল সিলেট জেলার ওসমানীনগর উপজেলায় একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনে তিনি বাংলাদেশ থেকে ডিএইচএমএস ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি মরিশাস-এর সাজেস্টিয়াস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেভেল ৫ সম্পন্ন করেন। জীবন-জীবিকার তাগিদে তিনি পাড়ি জমান আদি সভ্যতার দেশ গ্রীসে। তবে বর্তমানে তিনি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থান করছেন।

তাইজুল ফয়েজ একজন নিষ্ঠাবান সাংবাদিকও বটে। গ্রীসে অবস্থানকালে সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন ইউরো-বাংলা প্রেসক্লাব। একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে তার রয়েছে পারদর্শীতা। তিনি নকশী বাংলা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে
একজন সফল সংগঠক হিসেবে বঙ্গবীর এমএজি ওসমানী স্বর্ণপদকসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ সহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের আজীবন সদস্য।

এছাড়া তিনি ‘জালালাবাদ এসোসিয়েশন গ্রীস’-এর বিশ্ব সিলেট উৎসব,ইউরো-বাংলা প্রেসক্লাব এর”প্রবাসীদের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা” আন্তর্জাতিক সেমিনার গ্রীস ২০১৯ । “প্রবাসীদের প্রত্যাশা” শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনার ফ্রান্স ২০২২ সভাপতিত্ব করে গৌরবময় অধ্যায় রচনা করেছেন।
তাহার স্ত্রী প্রভাষক রওশন জাহান মিলা ও একমাত্র কন্যা শাহ জারা তাসনিমকে নিয়ে তাদের সুখের সংসার।

তাইজুল ফয়েজ যৌবনের শুরুতেই সাহিত্যচর্চায় জড়িয়ে পড়েন। তিনি প্রথম আলো, দৈনিক যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন সহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং সাময়িকীতে লেখালেখি করেন। বক্ষমান ‘নিশিরাতে চাঁদের সাথে’ কাব্যগ্রন্থটি তাঁর প্রথম সৃষ্টি। এ গ্রন্থে তাঁর স্বপ্ন-আশাসহ অনেক আনুষাঙ্গিক বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে।

তাইজুল ফয়েজ’র চিন্তা খুবই উচ্চমার্গীয়। অস্তিত্বের সংঘাতে যখন সভ্যতা বিপর্যস্ত হয়, তখন ব্যক্তিমানসের প্রয়োজন হয় নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি। অথচ মানবরচিত তন্ত্রমন্ত্রের প্রভাবে তাও সভ্যতার সংঘাতে পরিণত হয়। কবি অত্যন্ত সুন্দরভাবে তা তুলে ধরে বলেন : ‘সভ্যতার সংঘাত/এতটুকু আশ্রয় আর ক্ষুধানিবারণ–মানুষ আর কুকুর ডাস্টবিনে একাকার!/ অথচ পুঁজিবাদীরা খোঁজে/রাঘব বোয়াল!/ ঘৃণার আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত যে জীবন–পাতা মোড়ায়নি ইতিহাসের!’

তাইজুল ফয়েজ’র কবিতায় জৈবনিক প্রবাহের মতো মিশে আছে উপলব্ধির উৎকর্ষমূলক নির্যাস। মুখোশ এবং অন্তরালের সত্যকে অনুধাবন করার মতো দ্যোতনা সৃষ্টি করে তার কবিতা। ‘ঘোলাটে চোখ’ কবিতার মাধ্যমে তিনি তুলে ধরেন মানববিকারগ্রস্ত সমাজচিত্র। এই কবিতায় তিনি লিখেন : ‘অন্ধকারের গলিপথে কেবলই ঘুরছি আর ঘুরছি/ সঙ্গে একেকটি ঘোলাটে চোখ!/ প্রবল আলোর মাঝেও খোঁজে পাই/কেবলই অন্ধকার!’

তাইজুল ফয়েজ তাঁর কবিতাকে দার্শনিক চিন্তায় ভূষিত করেছেন। জীবন ও জগতের নানাবিধ ভাবনার পাশাপাশি তাঁর কবিতায় ফুটে উঠেছে চরম আধ্যাত্মবাদ। ক্ষণস্থায়ী জীবনের আনন্দকে তিনি সার্থক করে তুলতে চান পারলৌকিক ভাবনার মাধ্যমে। তিনি ‘ক্ষণস্থায়ী’ কবিতায় লিখেন : কোনো আশাই স্থায়ী নয় জীবনে/ এ যেন বালুর উপর বালি দিয়ে/ কুঁড়েঘর তৈরির মতো!/ একটু জলের আঘাতে মিশে যায়/ বালুর সাথে!/ জীবন এমনই!

তাইজুল ফয়েজ-এর কবিতায় এভাবেই ফুটে উঠেছে দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, বিরহ-বেদনা, স্বজাত্যবোধ, নৈতিকতা-মূল্যবোধ এবং প্রকৃতিচেতনা। বিভিন্ন ভাবনায় তার কবিতা হয়ে উঠেছে আবেগময়ী এবং প্রাণচঞ্চল। তাঁর কবিতার ভাষা সহজিয়া। যেকোনো পাঠকই তার কবিতার মাধ্যমে বিনোদন পেতে পারেন। এছাড়া এ কবিতাগুলো ব্যক্তির সর্বৈব চিন্তাকেও উপলব্ধির মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে। আশা করি–গ্রন্থটি পাঠকের কাছে দারুণভাবে সমাদৃত হবে। পাঁচ ফর্মার (৮০ পৃষ্ঠা) এই গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে সিলেটের সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা পাণ্ডুলিপি প্রকাশন। গ্রন্থটির প্রচ্ছদ করেছেন রেজওয়ানা আহমদ। কাব্যগ্রন্থটির শুভেচ্ছা মূল্য দুইশত টাকা। আমি লেখকের ব্যক্তিজীবনের কল্যাণ ও গ্রন্থটির বহুল প্রচার কামনা করি।

লেখক : কবি ও শিক্ষাবিদ, ভারত।