ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়ায় রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের ঝুঁকিতে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ৯:৪৯ অপরাহ্ণ, |                          

ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রকেট-ব্যবস্থা সরবরাহের ব্যাপারে এক দিনের মাথায় সিদ্ধান্ত বদল করলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ হামলা জোরদারের মুখে গতকাল মঙ্গলবার তিনি কিয়েভকে অত্যাধুনিক রকেট–ব্যবস্থা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে বাইডেনের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে জটিল করে তুলতে পারে। আজ বুধবার রাশিয়াও সতর্ক করে বলেছে, এর ফলে মস্কোর সঙ্গে ওয়াশিংটনের সরাসরি সংঘাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ হামলা শুরুর পর থেকে ইউক্রেনকে অর্থ-অস্ত্রসহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির পশ্চিমা মিত্ররা। তবে বাইডেন এর আগে জানিয়েছিলেন, দেশটিকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রকেট-ব্যবস্থা সরবরাহ করা হবে না। কিন্তু মঙ্গলবার নিউইয়র্ক টাইমস–এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি লেখেন, ‘আমরা ইউক্রেনে আরও উন্নত রকেট–ব্যবস্থা এবং যুদ্ধাস্ত্র পাঠাব। ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে লক্ষ্যবস্তুতে আরও সূক্ষ্মভাবে হামলা চালাতে তাদের (ইউক্রেন বাহিনী) সাহায্য করবে এটি।’

যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে হিমারস বা হাইমোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম (দীর্ঘ পাল্লার রকেট ছুড়তে সক্ষম) সরবরাহ করবে, যা ৮০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত (৫০ মাইল) থাকা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। ৭০ কোটি ডলার মূল্যের নতুন অস্ত্রসহায়তা প্যাকেজের আওতায় ইউক্রেনকে এ রকেট-ব্যবস্থা সরবরাহ করবে ওয়াশিংটন। রাশিয়া ও ইউক্রেন—দুই দেশই হাইমোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম ব্যবহার করছে। তবে এর মধ্যে হিমারস অনন্য।

যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, হিমারস পাঠানো হচ্ছে ইউক্রেনে। এটা নির্দিষ্ট নিশানায় সঠিকভাবে হামলা চালাতে পারে। আর ইউক্রেনের হাতে থাকা বিদ্যমান রকেট–ব্যবস্থার চেয়ে এটা দূরপাল্লার।

এ ছাড়া রুশ বাহিনীকে প্রতিরোধে ইউক্রেনকে আকাশে নজরদারির জন্য রাডার, ট্যাংক ধ্বংস করার জন্য স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, গোলাবারুদ, সাঁজোয়া যান, হেলিকপ্টারসহ নানা সামরিক পণ্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

বাইডেনের মতে, কূটনীতির মধ্য দিয়ে ইউক্রেনে রুশ অভিযান শেষ হবে। তবে আলোচনার টেবিলে ইউক্রেনকে সর্বোচ্চ মনোবল দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করতে হবে। বাইডেন বলেন, ‘আমরা ইউক্রেনকে এমন কোনো রকেট-ব্যবস্থা দেব না, যা রাশিয়ায় হামলা চালাতে ব্যবহার করা হবে।’

ওয়াশিংটনের এমন উদ্যোগে নাখোশ রাশিয়া। দেশটির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বুধবার সতর্ক করে দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, অস্ত্র সরবরাহের যেকোনো ঘটনা নিঃসন্দেহে সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে। কৌশলগতভাবে মস্কোকে হারাতে ইউক্রেন যুদ্ধ প্রলম্বিত করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। এটা নজিরবিহীন ও বিপজ্জনক।

বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রকেট-ব্যবস্থা ইউক্রেন যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। তবে তাঁদের আশা, কিয়েভ কথা রাখবে। রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালাতে এটা ব্যবহার করা হবে না। তা না হলে যুদ্ধ পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটতে পারে।

অস্ত্র দেবে জার্মানি

শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ইউক্রেনকে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দেওয়ার কথা জানিয়েছে জার্মানি। বুধবার জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ দেশটির পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে বলেন, ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র দেবে বার্লিন। জার্মানির দেওয়া সর্বাধুনিক আইরিশ-টি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রুশ বিমান হামলা থেকে ইউক্রেনের বড় শহরগুলো রক্ষায় ব্যবহার করা হবে।

শলৎজ আরও জানান, ইউক্রেনকে শত্রুপক্ষের যুদ্ধবিমান ও রকেট শনাক্ত করতে অত্যাধুনিক রাডার সরবরাহ করবে জার্মানি। এর আগেও ইউক্রেনে হালকার জন্য অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়েছে জার্মানি। তবে ইউক্রেনে ভারী অস্ত্র সরবরাহের জন্য দেশটির ওপর চাপ ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ওলাফ শলৎজ জানান, তাঁর দেশ ইউক্রেনকে স্বয়ংক্রিয় কামান ও লিওপার্ড ট্যাংক দেবে।

এ ছাড়া ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের জন্য তিনি গ্রিস, পোল্যান্ড ও চেক প্রজাতন্ত্রের সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও পার্লামেন্টকে জানান শলৎজ। তবে কবে নাগাদ এসব অস্ত্র ইউক্রেনে পৌঁছাবে, সেই বিষয়ে জার্মান চ্যান্সেলর কিছু জানাননি।

লুহানস্কের আঞ্চলিক গভর্নর সের্গেই গাইদে বুধবার বলেন, সেভেরোদোনেৎস্কের কেন্দ্রো হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। শহরের অনেক অবকাঠামো ও কারখানা ধ্বংস করা হয়েছে। শহরটির বেশির ভাগ এলাকা রুশ বাহিনী দখলে নিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, সেভেরোদোনেৎস্ক শিল্পনগরী।

বড় বড় রাসায়নিক কারখানা রয়েছে এখানে। শহরটিতে নির্বিচার বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। এটা মস্কোর পাগলাটে আচরণ। শহরটিতে রুশ বিমান হামলার ফলে যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। পূর্বাঞ্চলীয় দনবাসেও গতকাল রুশ বাহিনীর হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেল উরিনা ভেনেদিকতোভা গতকাল বলেন, দনবাসে রুশ সেনাদের হাতে সংঘটিত নির্বিচার হত্যা, অত্যাচার, নির্যাতন ও যুদ্ধাপরাধের কয়েক হাজার প্রমাণ তাঁদের হাতে এসেছে।