সিলেট ৩রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে মাঘ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:৩২ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৫, ২০২২
দেশে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে নির্মাণকাজের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ রডের দাম। প্রথমবার প্রতি টন রডের দাম ঠেকেছে ৮৮ হাজার টাকায়। এতে বড় ধাক্কা এসেছে নির্মাণকাজে। নেমে এসেছে স্থবিরতা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পসহ ব্যক্তিখাতের নির্মাণকাজ। সেই ধাক্কা সামাল দিতে না দিতেই এবার অস্থির হয়ে উঠেছে সিমেন্টের বাজার। চাহিদা কম থাকলেও হু হু করে বাড়ছে দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা সিমেন্টের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা।
সিমেন্ট শিল্পের উৎপাদকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে দেশেও দাম বাড়ছে সিমেন্টের। ডিলার ও মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা বলছেন, রডের দাম বাড়ার কারণে সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা প্রতিযোগিতা করে দাম বাড়াচ্ছে। আবার ব্যবহারকারীরা বলছেন, চাহিদা কম থাকলেও সিন্ডিকেট করে সিমেন্টের দাম বাড়ানো হচ্ছে।
জানা যায়, দেশে প্রায় ৭০টির মতো সিমেন্ট কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে নিয়মিত সিমেন্ট উৎপাদন হয় ৩৭টির মতো কারখানায়। আবার এসব কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা বাজারের চাহিদার চেয়ে বেশি। সিমেন্ট কারখানাগুলোর কাঁচামালের প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। এর মধ্যে ভিয়েতনাম, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, পাকিস্তান থেকে ক্লিংকার (কাঁচামাল) আমদানি হয়। বেশিরভাগ আমদানি হয় ভিয়েতনাম থেকে।
রোববার (১৩ মার্চ) চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকা ঘুরে ঠিকাদার, সিমেন্টের ডিলার ও নির্মাণকাজে জড়িতদের সঙ্গে কথা হয়।
রাজমিস্ত্রি মোরশেদ আলম। তিনি নির্মাণশ্রমিক সরবরাহের কাজও করেন। মোরশেদ জাগো নিউজকে বলেন, ৮-১০ দিন ধরে কাজ অনেক কমে গেছে। রড-সিমেন্টনির্ভর কোনো কাজই হচ্ছে না। অনেক ডেভেলপারও সাময়িক কাজ বন্ধ রেখেছেন। সরকারি ঠিকাদাররাও বন্ধ রেখেছেন প্রকল্পের কাজ।
চট্টগ্রামের ঠিকাদার আবদুল্লাহ টিটু। তিনি চট্টগ্রাম এলজিইডি ঠিকাদার সমিতির যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। আবদুল্লাহ টিটু জাগো নিউজকে বলেন, রডের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে এলজিইডি, গণপূর্ত, শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রায় ৭০ শতাংশ প্রকল্পের কাজে স্থবিরতা নেমে এসেছে। প্রায় সব প্রকল্পের কাজই বন্ধ। এসময় সিমেন্টের চাহিদাও নেই। কিন্তু সিমেন্ট উৎপাদকরা সিন্ডিকেট করে সিমেন্টের দাম বাড়াচ্ছে। চাহিদা না থাকলেও হু হু করে বাড়ছে সিমেন্টের দাম।
কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যারটেক এলাকার রড-সিমেন্টের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এনআই করপোরেশনের নুরুল ইসলাম বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে সিমেন্টের দাম বেড়েছে। আজ এক দাম তো কাল আরেক দাম। প্রায় প্রত্যেক কোম্পানির সিমেন্টের দাম বেড়েছে।
শাহ আমানত সেতু-বহদ্দারহাট সংযোগ সড়কের বাকলিয়া এলাকার রড-সিমেন্ট ব্যবসায়ী আকিল আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, বাজারে সিমেন্টের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে কোম্পানিগুলো। এমনিতে রডের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় চারদিকে কাজে (নির্মাণকাজ) ধস নেমেছে। তার ওপর সিমেন্টের দাম বেড়ে যাচ্ছে। যে কারণে আমরা সিমেন্টের অগ্রিম বুকিং নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।
পটিয়ার সিমেন্ট-রড ব্যবসায়ী লতিফুর রহমান বাবু বলেন, কোম্পানিগুলো ডিলারদের চাহিদামতো সরবরাহ দিচ্ছে না। বাজারে অলিখিত সংকট তৈরি হয়েছে। এতে চলতি সপ্তাহে প্রতিদিনই সিমেন্টের দাম বেড়েছে। আবার একেক ডিলার একেক দামে সিমেন্ট বিক্রি করছে। সবমিলিয়ে সিমেন্টের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
সিমেন্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে রুবি সিমেন্টের (হাইডেলবার্গ সিমেন্ট)। ৫০ কেজি বস্তার এই সিমেন্ট রোববার বিক্রি হয়েছে ৪৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও এটি বিক্রি হয়েছে ৪০৫ টাকায়। রোববার প্রিমিয়ার সিমেন্ট বিক্রি হয়েছে ৪৫০ টাকা বস্তা। এক সপ্তাহে আগেও এর দাম ছিল ৪০০ টাকা। ফ্রেশ ব্র্যান্ডের সিমেন্টের দাম রোববার ছিল ৪৩০ টাকা। গত সপ্তাহের শুরুতে এটি বস্তাপ্রতি ৩৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
চট্টগ্রামের আরেক সিমেন্ট কনফিডেন্ট রোববার বিক্রি হয়েছে প্রতি বস্তা ৪৬০ থেকে ৪৭০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও এ সিমেন্ট বিক্রি হয়েছে বস্তাপ্রতি ৪০০ থেকে ৪০৫ টাকায়। একই অবস্থা ডায়মন্ড ব্র্যান্ডের সিমেন্টের ক্ষেত্রেও। অন্যদিকে এস আলম সিমেন্ট বিক্রি হয়েছে ৪২০ টাকায়, আগের সপ্তাহে যা ৩৭০ টাকা। আবার সেভেন রিং সিমেন্ট এদিন বিক্রি হয়েছে ৪৩০ টাকায়। এই সিমেন্ট আগের সপ্তাহে বিক্রি হয় ৪০০ টাকায়।
এ বিষয়ে কথা হয় রয়েল সিমেন্টের মহাব্যবস্থাপক আবুল মনসুরের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্ববাজারে দেড় মাস আগে যে ক্লিংকার ৫০ থেকে ৫২ ডলারে বিক্রি হতো, সেই ক্লিংকারের দাম চলতি সপ্তাহে হয়েছে ৭৭ ডলার। আগে চীনের পাশাপাশি ভিয়েতনাম থেকে ক্লিংকার আসতো। এখন চীন উল্টো ভিয়েতনাম থেকে ক্লিংকার আমদানি করছে। যে কারণে ভিয়েতনামের বাজার বাংলাদেশ থেকে চীনের দিকে চলে যাচ্ছে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে ক্লিংকারের সংকট তৈরি হচ্ছে, তেমনি দামও বাড়ছে। এছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় জাহাজ পাওয়া যাচ্ছে না। ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার খরচ (পণ্য পরিবহন খরচ) বেড়ে গেছে। সবমিলিয়ে সিমেন্টের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে বাজারে।
সোমবার (১৪ মার্চ) সকালে প্রিমিয়ার সিমেন্টের মহাব্যবস্থাপক গোলাম কিবরিয়া জাগো নিউজকে বলেন, বৈশ্বিক বাজারে গত বছরের তুলনায় বর্তমানে ক্লিংকারের দাম প্রায় দ্বিগুণ। আবার বাজারেও এ কাঁচামালের সংকট রয়েছে। এছাড়া জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে জাহাজের খরচ বেড়েছে তিন-চারগুণ। অনেক রুটে জাহাজও মিলছে না। সবমিলিয়ে গত এক বছর দেশের সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা প্রতিযোগিতামূলক বাজারে শুধু টিকে থাকার চেষ্টা করছে। নির্মাণের অন্যতম উপকরণের দাম যেভাবে বেড়েছে, সে হারে সিমেন্টের দাম বাড়েনি। গত বছরও সিমেন্টের দাম ৪০০ এর কোটায় ছিল। এখন সেটা সাড়ে ৪০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।
সিমেন্টের দাম তেমন একটা বাড়েনি বলে মনে করেন তিনি।
Chief Editor : Afroz Khan
Editor: Sunny Ahmed
Executive editor: Mohammed Taizul islam,
Message editor : Shahan Shah Ahmed
Call: +88 01995-019920
Office : West World Shopping City (7nd Floor), Zindabazar, Sylhet 3100
Email : info.Sylhetnewsworld@gmail.com
Web : www.SylhetNewsWorld.com