ইতালীয় সমর্থকদের ওপর ইংলিশ সমর্থকদের হামলা, গ্রেপ্তার ৪৫

প্রকাশিত: ৪:৩৭ অপরাহ্ণ, |                          

ইংলিশ ফুটবলভক্তদের এমনিতেই খুব একটা সুখ্যাতি নেই। অতীতে অনেকবারই ফুটবল ম্যাচের আগে–পরে ঝামেলা করে খবরের শিরোনাম হয়েছেন তাঁরা। ‘হুলিগান’খ্যাত ইংলিশ ফুটবল সমর্থকেরা খবরের শিরোনাম হলেন ইউরোর ফাইনালের পরেও। টাইব্রেকারে হারের পর স্বপ্নভঙ্গের ‘বেদনা’য় তাঁরা চড়াও হয়েছিলেন ওয়েম্বলিতে খেলা দেখতে আসা ইতালীয় সমর্থকদের ওপর। শারীরিক আক্রমণ তো হয়েছেই, বর্ণবাদী আক্রমণেরও শিকার হয়েছেন ইতালীয় সমর্থকেরা, এমনটাই খবর।

৫৫ বছর পর ফুটবলের বড় কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছিল ইংল্যান্ড। স্বপ্নটা ছিল অনেক বড়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হবে, না পাওয়ার বেদনায় নীল হয়ে যাওয়া অতীতের শাপমুক্তি ঘটবে—কত আশা ছিল। কিন্তু কিছুই হলো না। ম্যাচের শুরুতেই লুক শ’র গোলে ১–০–তে এগিয়ে যাওয়া ইংল্যান্ড ফাইনাল শেষ পর্যন্ত হেরেছে টাইব্রেকারে। ২৫ বছর আগে, ১৯৯৬ সালের ইউরোতে এই ওয়েম্বলিতে সেমির লড়াইয়ে টাইব্রেকার–দুর্ভাগ্য বরণ করতে হয়েছিল ইংল্যান্ডকে। সে দুঃস্বপ্ন অবারও ফিরে এল এই জায়গায়। ইংল্যান্ড আরও একটি বড় টুর্নামেন্টে টাইব্রেকার–দুর্ভাগ্যের শিকার হলো। ম্যাচ শেষে স্বাভাবিকভাবেই ইংলিশ দর্শকদের মন খারাপ থাকার কথা। কিন্তু সেটি যে প্রতিপক্ষের সমর্থকদের ওপর আক্রমণ, এমনকি বর্ণবাদী আচরণে রূপ নেবে, সেটি কে ভেবেছিল!

কেবল ওয়েম্বলিতেই নয়, ইতালীয়দের বর্ণবাদী আক্রমণে জর্জরিত করা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। তবে এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ), ‘দুর্ভাগ্যজনক এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এফএ সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে কঠোর।’

কাল ম্যাচ শেষ ওয়েম্বলিতে ইতালির পতাকা অবমাননার ঘটনাও ঘটেছে। ইংলিশ ভক্তরা ইতালীয় ভক্তদের কাছ থেকে পতাকা কেড়ে নিয়ে তাতে আগুন দিয়েছে অনেক জায়গাতেই। পতাকায় থুতু ছিটানো, সেটির ওপর দাঁড়িয়ে পড়া—এমন ঘটনা অসংখ্য।

কেবল ইতালীয় সমর্থকেরাই এসব উচ্ছৃঙ্খল ইংলিশ দর্শকদের লক্ষ্যবস্তু ছিলেন না। বর্ণবাদী আচরণের লক্ষ্য ছিলেন ইংল্যান্ডের কৃষ্ণাঙ্গ সমর্থকেরাও। কাল টাইব্রেকারে পেনাল্টি মিস করেছেন দুই কৃষ্ণাঙ্গ তারকা মার্কাস রাশফোর্ড, বুকায়ো সাকা। জেডন সাঞ্চো মিস করলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বর্ণবাদী আক্রমণ ও ট্রলের শিকার দুই কৃষ্ণাঙ্গই।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজ জানিয়েছে, ওয়েম্বলির ফাইনালে উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য কমপক্ষে ৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এদিকে ম্যাচ শুরুর আগেই বেশ কিছু ঝামেলার খবর এসেছিল। ওয়েম্বলির একজন মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, ম্যাচ শুরু আগে বেশ কিছু ‘টিকিটহীন’ ইংলিশ সমর্থক নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেদ করে স্টেডিয়ামে প্রবেশের চেষ্টা চালান।

লন্ডন পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘বিভিন্ন বিশৃঙ্খল আচরণের দায়ে ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে গেছেন নিরলসভাবে।’

বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও ফাইনালের পর দর্শকদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণে আহত হয়েছেন। লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ টুইটারে জানিয়েছে, এ সংখ্যাটা ১৯।