ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর নতুন কোভিড নীতি নিয়ে শঙ্কায় বিজ্ঞানীরা

Jaber Jaber

Ahmed

প্রকাশিত: ৫:১১ অপরাহ্ণ, |                          

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন চলতি মাস থেকেই করোনাভাইরাস মহামারীর সব বিধিনিষেধ তুলে দিয়ে মুক্ত জীবনে ফেরার যে আশা দেখিয়েছেন, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা বিজ্ঞানীরা।
আগামী ১৯ জুলাই থেকে ইংল্যান্ডে সব বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়ার ঘোষণা গত সোমবারেই দিয়েছেন জনসন। কিন্তু বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী তার এই নতুন কোভিড নীতিকে ‘বিপজ্জনক’ এবং ‘অকালে নেওয়া সিদ্ধান্ত’ বলেই বর্ণনা করছেন।

কারণ, বিশ্বে যুক্তরাজ্য টিকাকরণের সর্বোচ্চ হারের দেশগুলোর অন্যতম হলেও দেশটিতে ভাইরাস সংক্রমণের নতুন ঢেউ শুরু হয়েছে। তাছাড়া, বৃহস্পতিবার একটি গবেষণায় দেখা গেছে, জুনের শুরু থেকে এক মাসেই ইংল্যান্ডে করোনাভাইরাস সংক্রমণ চারগুণ বেড়েছে।

ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের এ গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের দ্রুত বিস্তারে নতুন সংক্রমণের যে ঢেউ শুরু হয়েছে তাতে আনুমানিক হিসাবে প্রতি ছয়দিনেই শনাক্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হবে।

এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে লকডাউন দেওয়ার বদলে প্রধানমন্ত্রী জনসন পুরোদমে চালু করে দিতে চলেছেন দেশের অর্থনীতি। কোভিডকে যেন জুয়া হিসাবেই নিচ্ছেন জনসন। ডেল্টা ধরনকে জীবনের অংশ হিসেবে মেনে নিয়ে তিনি ফিরতে চাইছেন স্বাভাবিক জীবনে।

মুক্ত জীবনে ফেরার দিনটিকে বলা হচ্ছে ‘ফ্রিডম ডে’। ইতোমধ্যে এই মুক্তি দিবস চার সপ্তাহ পিছিয়ে ১৯ জুলাই করা হয়েছে। চার সপ্তাহে আরও বেশি মানুষ যাতে টিকা পায় সে সুযোগ দিতেই পেছানো হয়েছে তারিখ। দেশের প্রায় ৮৬ শতাংশ মানুষ এক ডোজ টিকা পেয়েছেন, এবং এরই মাঝে দুই তৃতীয়াংশ দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন।

ইমপেরিয়াল কলেজের মহামারী বিশেষজ্ঞ অ্যান কোরি প্রধানমন্ত্রী জনসনের ‘ফ্রিডম ডে’ পেছানোর ব্যাপারে মত দেওয়া একজন গবেষক।

তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসকে জীবনের অংশ হিসেবে মেনে নিয়ে বেঁচে থাকা আদৌ সম্ভব কি-না তা বলার সময় এখন আসেনি। বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত আরেকবার পেছালে ভাল হত।”

১০০ জনেরও বেশি বিজ্ঞানী স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রকাশনা ‘ল্যানসেট জার্নালে’ বরিস জনসনের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে ‘অপরিপক্ক’ ও ‘বিপজ্জনক’ আখ্যা দিয়েছেন। করোনাভাইরাসকে জীবনের অংশ হিসেবে মানিয়ে নেওয়াকে তারা ‘অনৈতিক’ এবং ‘অযৌক্তিক’ও বলেছেন।

তবে জনসন সরকার জানায়, এ সিদ্ধান্ত নিতে শুধু মহামারীর প্রেক্ষাপট ছাড়াও অন্যান্য অনেক কিছু বিবেচনা করা হচ্ছে। নতুন স্বাস্থ্য মন্ত্রী সাজিদ জাভিদ বলেন, দৈনিক সংক্রমণ এক লাখে পৌঁছালেও স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি বিবেচনা করে সাধারন জীবনে ফিরে যাওয়াটা এখন প্রয়োজন।

প্রথমদিকে সারাবিশ্বে করোনাভাইরাস ছড়াতে শুরু করার সময় অন্যান্য দেশের তুলনায় দেরি করে লকডাউন জারি করেছিলেন বরিস জনসন, যার কারণে পরবর্তীতে দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ভয়ানক রূপ ধারণ করে। একবার ভুল করা প্রধানমন্ত্রী আবারও একটি ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন বলেই আশঙ্কায় আছেন বিজ্ঞানীরা।

ডেল্টা ধরনের বিরুদ্ধে সংক্রমণ কমানোর চাইতে মৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণে রাখতে টিকার কার্যকারিতা বেশি, তাই গ্রীষ্মের শুরু থেকে যুক্তরাজ্যে শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে গেলেও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি মৃত্যুর সংখ্যা।

এ মুহুর্তে দেশটিতে প্রত্যেক সপ্তাহে গড়ে ২৫ হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন, যাদের মাঝে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে ৩৫০ জনকে। মধ্য এপ্রিল থেকে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ এর নিচে থাকাটা টিকার কার্যকারিতারই প্রমাণ, বলছেন বিজ্ঞানীরা।

তবে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা গড়ে সাত দিনে বেড়েছে ৪৫ শতাংশ, যা উদ্বেগজনক হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

বিশ্বে দ্রুত টিকা কর্মসূচি পালন করা আরেক দেশ ইসরায়েল বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পরেও সম্প্রতি সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে বিধিনিষেধ জারি করেছে দেশটি।