বাইডেনই আগে হাত বাড়ালেন; গম্ভীর ছিলেন পুতিন

প্রকাশিত: ৯:২৩ পূর্বাহ্ণ, |                          

কূটনৈতিক শিষ্টাচার রাষ্ট্রীয় দম্ভ ভুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনই প্রথম এগিয়ে গেলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দিকে। পরিবেশটাও ছিল অন্যরকম। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে ১৮তম শতাব্দীর ঐতিহাসিক ভবন ভিলা দে লা গ্রেঞ্জ। একটু পরেই এর লাইব্রেরিতে বসেবেন বিশ্বের দুই মেরুর দুই শীর্ষনেতা। বাইডেন আগেই পৌঁছেছিলেন। স্বভাবসুলভ ভঙ্গি দেরিতেই এলেন পুতিন। ভারী কাঠে তৈরি সুদৃশ্য বুকশেল্ফগুলোতে আধশোয়া-আধদণ্ডায়মাণ অবস্থায় পুরু বইগুলো সারিবদ্ধ। পুতিনকে স্বাগত জানাতে ঠিক তার সামনের দরজাতেই এসে দাঁড়ালেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বড়ছোট হিসাব ভুলে করমর্দনের উদ্দেশে আগেই হাত বাড়ালেন বাইডেন (৭৮)। সহাস্যে তা গ্রহণ করলেন পুতিন (৬৮)। দুই পরাশক্তিধর রাষ্ট্রের দুই কর্ণধর এই চমৎকার মুহূর্তটুকু ধরে রাখার সুযোগ দিলেন আলোকচিত্রীকে। এরপর দুজনই বসলেন সংরক্ষিত দুটো আসনে।

আলোচনা শুরুর আগে বাঁ-পায়ের ওপর ডান পা রেখে এবং হাঁটুর ওপর দুহাত রেখে বসলেন বাইডেন। আর পুতিন পা দুটো ছড়িয়ে কিছুটা ম্লান চেহারায় ডান হাত চেয়ারের হাতলে রেখে বাঁ-হাতের কনুই রাখলেন বাম হাতলে। এরপরই শুরু হলো পাঁচ ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে ১৮তম শতাব্দীর পুরনো ভবন ভিলা দে লা গ্রেঞ্জের লাইব্রেরিতে বসেছেন বিশ্বের দুই শীর্ষনেতা। আশপাশেই আছেন তাদের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা এবং দুজন অনুবাদক। এর আগে এই ভিলায় ষষ্ঠ পোপ পল ১৯৬৯ সালে ন্যায়বিচার ও শান্তির বিষয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন। ১৯৮৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভের মধ্যে প্রথম আলোচনার আয়োজন করা হয়েছিল এখানেই। তারপর থেকেই রুশ-মার্কিন প্রেসিডেন্টদের সব বৈঠকই এখানেই।

উনিশ শতকে ব্যবসায়ী ও বুদ্ধিজীবী গিলিয়াম ফ্যাভ ইতিহাস, সাহিত্য ও প্রাচীন ভাষাসমূহের নিদর্শন রক্ষার উদ্দেশ্যে এ লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটিকে এখন জেনেভার অন্যতম সেরা লাইব্রেরির মর্যাদা দেওয়া হয়। ৩০ একর জায়গার ওপর নির্মিত পার্কের মধ্যে লাইব্রেরিটি স্থাপন করা হয়। ১৫ হাজারের বেশি বই রয়েছে এই লাইব্রেরিতে। বৈঠকের সম্মানে নানা ধরনের পেইন্টিং ও ঝাড়বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে এর ভেতর ও বাহির। পার্কের চারপাশে নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ধূসর রঙের নৌকায় করে ছদ্মবেশে টহল দিচ্ছেন পার্কের লেকজুড়ে। ৩৫০০ সেনা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে ভিলার চারপাশে। বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা হয়েছিল পুরো এলাকা। বাইডেন-পুতিনের আপ্যায়ন প্রসঙ্গে ভিলার এক কর্মকর্তা জানান, ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা ধরে চলা এ বৈঠকের ফাঁকে বা পরে বাইডেন ও পুতিনের একসঙ্গে খাবারের কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে তারা এই ভবনের পাশে অবস্থিত অভিজাত রেস্তোরাঁ ইয়াক্স-ভাইভ হোটেলে সামান্য নাস্তায় একত্রিত হবেন। সেখানেও অতি সাধারণ কফি, চা, পানি আর সামান্য স্ন্যাক্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে।