চীনকে ঠেকাতে সাত দেশ এক

প্রকাশিত: ২:৩৮ অপরাহ্ণ, |                          

এক চীনকে ঠেকাতে এবার একাট্টা হলো সাত দেশ। বেইজিংয়ের ট্রিলিয়ন ডলারের প্রকল্প বিআরআই’র (বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনিশিয়েটিভ) পালটা হিসাবে বিথ্রিডব্লিউ (বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড) প্রকল্প আনছে সাত দেশের সংগঠন জি-৭। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এই পরিকল্পনার আওতায় রাস্তাঘাট নির্মাণ ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন এগিয়ে নিতে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে তহবিল দেওয়া হবে। ব্রিটেনের পর্যটন শহর কর্নওয়ালের কারবিস বে’তে চলমান জি-৭ সম্মেলন থেকে শনিবার এ বিষয়ে বৈশ্বিক পরিকল্পনা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, করোনার মহামারির মতো ভবিষ্যৎ কোনো মহামারি মোকাবিলায় একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেছেন নেতারা। নতুন এই চুক্তির নাম দেওয়া হয়েছে ‘কারবিস বে ডিক্লারেশন’। খবর এএফপির।

বৃহত্তর ঐক্যের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ব্রিটেনের দক্ষিণ-পশ্চিমের শহর কর্নওয়ালের কারবিস বে’তে শুক্রবার শুরু হয় তিন দিনের জি-৭ সম্মেলন। শনিবার ছিল সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন। এদিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ছাড়াও সম্মেলনে সরাসরি অংশ নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মানির চ্যান্সেলর আঞ্জেলা মার্কেল ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ দুই নেতাও এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। এই সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যোগ দিচ্ছেন ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার নেতারা।

এদিন স্বচ্ছতা ও উন্নত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের মাধ্যমে নিজেদের ঐক্যকে সুদৃঢ় করার অঙ্গীকার করেন জি-৭ নেতারা। এরপর বৈঠকে চীনের মোকাবিলায় ‘বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড’ অর্থাৎ আরও সমৃদ্ধ, আরও উন্নত ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। হোয়াইট হাউজ এক বিবৃতিতে বলেছে, কারবিস বে সম্মেলনে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে ‘কৌশলগত প্রতিযোগিতার’র বিষয়ে জোর দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। ২০১৩ সালে চীন এই বিআরআই প্রকল্প গ্রহণ করে। লাখ লাখ কোটি ডলারের এই প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ১০০টির বেশি দেশ যুক্ত হয়েছে। এই বিআরআই প্রকল্পের মধ্যে রেলওয়ে, সড়ক, বন্দর, মহাসড়ক ও অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো রয়েছে।

এদিনই বিশ্ব মহামারি প্রতিরোধ করতে বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে একমত হয়েছেন নেতারা। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, মহামারি রোধে তাদের সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করবেন বলে। ২০২২ সালের মধ্যে করোনা নির্মূল করতে বিশ্বে এক বিলিয়ন টিকা সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে একমত হন সবাই। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী ৭০ শতাংশ টিকার আওতায় নিয়ে আসতে এক হাজার ১০০ কোটি ডলার (১১ বিলিয়ন) প্রয়োজন হবে। এতে করোনা সংক্রমণ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, বিশ্বে এ পর্যন্ত ১৭ কোটি ৫০ লাখ মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩৭ লাখ মানুষের।

শুক্রবার যুক্তরাজ্যের শুরুর দিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকটের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে করোনা মোকাবিলায় তা কাজে লাগাতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘এটি এমন একটি বৈঠক যা অনুষ্ঠিত হওয়া খুব প্রয়োজন।’ আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা গত ১৮ মাস ধরে যে ভুলগুলো করেছি তার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’ জনসন বলেন তিনি জি-৭কে ‘আরও ভালো করে গড়ে তুলতে, নতুন রূপে নতুন আঙ্গিকে এবং আরও লিঙ্গ-নিরপেক্ষ উপায় গড়তে চান। আলোচনা শেষে নেতারা রানি এলিজাবেথের আমন্ত্রণে তার সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেন। বিশ্ব মহামারি রোধে তাদের কর্মপরিকল্পনায় বেশ কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যেমন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সহায়তা ও শক্তিশালী করা, মহামারি রোধে বিশ্ব নজরদারি বাড়ানো, যে কোনো মহামারি প্রতিরোধে চিকিৎসা প্রদান, টিকা উন্নয়ন ও লাইসেন্স প্রদানের জটিলতা ১০০ দিনের মধ্যে কমিয়ে আনতে হবে।