‘মোদী’ বিরোধী আন্দোলনের উদ্দেশ্য এবং প্রাপ্তি

প্রকাশিত: ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ, |                          

রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক বিষয় ভাবতে হয়। অনেক রীতি নীতি মেনে চলতে হয়। এখানে আবেগের কোন স্থান নেই। নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের কাছে কোন ব্যক্তি নন। তিনি বাংলাদেশের প্রতিবেশি এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী রাষ্ট্রের সরকার প্রধান।
যারা নরেন্দ্র মোদী বিরোধী আন্দোলন উসকে দিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালালেন এবং নিরীহ মাদ্রাসা ছাত্রদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিলেন তারা এখানে ইসলামের কী খেদমত করলেন তা বোধগম্য নয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশে আগমনের বিরুদ্ধে যে কেউ প্রতিবাদ করতেই পারেন। এটা গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু এই অধিকার বাস্তবায়নে সন্ত্রাস,হামলা,ভাঙচুর, থানা,সরকারী অফিস আদালতে হামলা এবং অবুঝ মাদ্রাসা ছাত্রদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া এসব কোন অবস্থায় মেনে নেয়া যায় না।

রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে শত্রু-মিত্র অনেকের সাথেই সম্পর্ক রাখতে হয়। যেমনটি রেখেছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ স.।
‘হিজরতের পর রাসুল (সা.) মুসলমানদের মধ্যে চিন্তা, বিশ্বাস, রাজনীতি ও ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে একটি নতুন সমাজের ভিত্তি স্থাপন করেন। এরপর তিনি অমুসলিমদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেন, নবী করিম (সা.) চাচ্ছিলেন, সব মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করুক এবং মদিনা ও আশপাশের এলাকার মানুষ একটি সুস্থ প্রশাসনের আওতাভুক্ত হোক, তিনি উদারতা ও ন্যায়পরায়ণতার মাধ্যমে এমন আইন প্রণয়ন করেন, বর্তমানে যার কোনো দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায় না।

মদিনার পার্শ্ববর্তী লোকেরা ছিল ইহুদি। গোপনে এরা মুসলমানদের সঙ্গে শত্রুতা করলেও প্রকাশ্যে তারা মিত্রতা দেখাত। মহানবী (সা.) তাদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে উপনীত হলেন, সেই চুক্তিতে ইহুদিদের তাদের ধর্ম পালনে স্বাধীনতা ও জীবন-সম্পদের নিরাপত্তা দেওয়া হয়।’
এসব বিষয় উসকানীদাতারা জানলেও তাদের কর্মীদের বলেন না। একান্ত রাজনৈতিক স্বার্থে।

গুজরাটের সংখ্যালঘু মুসলমানদের রক্তে ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদীর হাত লাল হয়েছিলো বলেই যুক্তরাষ্ট্র তাকে
তাদের দেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলো।পরবর্তিতে নরেন্দ্র মোদী যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেন যুক্তরাষ্ট্র তখন সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। কারণ মোদী এখন আর ব্যক্তি মোদী নন তিনি ভারতের সরকার প্রধান।

আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ বলেন মুসলমানদের হত্যার প্রতিবাদ করা ঈমানী দায়িত্ব।ধরে নিলাম তাদের কথা সত্য! ক্ন্তিু তারপরও প্রশ্ন থেকে যায় এ প্রতিবাদ শুধু ভারতের মুসলমানদের জন্য কেন? অন্যদেশের মুসলমানদের জন্য কেন নয়?
সৌদি আরবের স্বৈরাচারী শাসক বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ ও সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান এর বিরুদ্ধে কেন নয়?
আরব বিশ্বে একক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকার জন্য এবং ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য সৌদি আরব ইয়েমেন আগ্রাসন চালিয়েছে। বিবিসি রির্পোটে বলা হয়েছে ‘গত ছয় বছরে ধরে চলতে থাকা এই অসম যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে।

চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমরা দীর্ঘদিন থেকে হত্যা এবং পাশবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ইতোমধ্যে উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর দমন-পীড়ন ও নির্যাতন চালানোর অভিযোগে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। চীনের বিরুদ্ধে শুধু হত্যা নয় এক মিলিয়ন উইঘুর মুসলিমকে আটক করার অভিযোগ উঠেছে।
চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের জন্য যেসব ‘পুনঃশিক্ষণ’ কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে – তাতে নারীরা পরিকল্পিতভবে ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন বলে নতুন পাওয়া তথ্যে জানতে পেরেছে বিবিসি।

এসব মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদ হলেও ‘নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশে আগমন বিরোধীরা’ মুখে কুলুপ এটে বসে আছেন। তাদেরকে একটা মানববন্ধন পর্যন্ত করতে দেখা যায়নি।

‘নরেন্দ্র মোদী’ আন্দোলনে এবার আরেকটি সমীকরণ লক্ষ করা গেছে। আর তা হলো সকল উগ্র শক্তির মহামিলন। এই আন্দোলনে হেফাজতের সাথে যুক্ত ছিলো একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামাত-শিবির এবং কট্রর বামরা।

অভিজ্ঞমহল ‘নরেন্দ্র মোদী’ আন্দোলনের উদ্দেশ্য নিয়ে ভিন্ন কথা বলছেন, তাদের মতে সাধারণ মাদ্রাসা ছাত্রদের মাঠে নামিয়ে উসকানীদাতারা চেয়ে ছিলেন ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে। কিন্তু মাছ তারা ধরতে পারেননি। মাঝ পথে জান মালের অপচয় করেছেন তারা, এবং কতগুলো পরিবারের কান্নার কারণ তারা হয়েছেন।