মাতৃভাষায় কথা বলতে পারা কতটা তৃপ্তির ও প্রবাসী জীবনের অনুভূতি

প্রকাশিত: ১২:২৩ অপরাহ্ণ, |                          

নাঈম আহমদ, ফ্রান্স থেকে

কেন বললাম এই কথা কারণ আমরা যারা দেশের বাহিরে থাকি আমাদের সবসময় অন্য দেশের ভাষা ব্যবহার করে চলতে হয়। কিন্তু বিশ্বাস করেন সেই ভাষায় কথা বলে একটুও তৃপ্তি পাই না আমি। এমন অনেক দিন গেছে আমার আমি মানুষ খুঁজে বেরিয়েছি সামনাসামনি একটু বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য, সবকিছুর পর আমার মাতৃভাষা বাংলা।

আমি যখন নেদারল্যান্ডসে, জীবনের প্রথম দেশের বাহিরে বসবাস করছি। এমন অনেক ছুটির দিন কাটিয়েছি একটি কথা না বলে। কারন আশেপাশে মানুষজন ছিল না। আর যারাই ছিল, যার যার মতো ব্যস্ত ছিল। তখন বুঝতে পেরেছিলাম কথা বলাতে কতো সুখ। বিকেল বেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শেষ করে, মানুষ খুঁজতাম একটু বাংলায় কথা বলি। মানুষ নেই রাস্তায়, রাস্তায় শুধু গাড়ি আর গাড়ি, আর মানুষ থাকলেই বা কি কেউ তো আর বাংলা বলবে না। তখন রাস্তার পাশে গাছ গুলোর সাথে একটু বাংলায় কথোপকথন করে ঘরে ফিরতাম। আমি অনেকেই চিনি যারা আমার মতো মানুষ খুঁজেছিল, যারা একটু বাংলায় কথা বলবে বলে। যাই হোক সেখানে কিছু বন্ধু পেয়েছিলাম, নিজ দেশেরও বন্ধু পেয়েছিলাম, অবশেষে তাদের সাথেই ভালো ভাবে দিন চলে যায়।

ফ্রান্সের জীবন যখন শুরু হয়, তখনই বুঝতে পারলাম ভাষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তারা ইংরেজি জানে না, খুবই অল্প, জানেনা বললেই চলে আর আমি তখন ফরাসির কিছুই না জানা মানুষ। তারা তাদের ভাষা নিয়ে কতটা ঐকান্তিক, রাশভারী তাদের দেশে না আসলে, আর তাদের সাথে চলাফেরা না করলে বুঝবেন না। তারাই আমাকে বুঝিয়ে দিল, মাতৃভাষার প্রেম। মাতৃভাষা কতটা তৃপ্তির সেটা এই দেশে না আসলে বুঝতাম না। একটা ভাষা শিখা হাতে-কলমে আবার বলা কতটা কঠিন যারা করেছে তারাই ভালো বুঝতে পারবেন।

সকল ভাষাকে সম্মান করা উচিত। ভাষার প্রতি উৎসাহ নিয়ে, কেউ যদি অন্য ভাষা শিখতে চান, শিখতে পারেন। কিন্তু আমি দোয়া করি জীবনের তাগিদে বা চলাফেরার উদ্দেশ্য কারো যেন নতুন একটি ভাষা শেখার পরিস্থিতি জীবনে না আসে।

আর ইউরোপীয়, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে যারা একাকী বসবাস করেন তারাই ভালো বুঝতে পারবেন মাতৃভাষায় কথা বলা কতটা সুখের।

২১ শে ফেব্রুয়ারী, শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, তাই সকল ভাষা শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা, সকল ভাষা শহীদের রুহের মাগফেরাত কামনা করি।

তাদের অবদানের জন্য আজ বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। তাদের অবদানের জন্য বিদেশি নাগরিকদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে একটু কথা বলতে পারি এবং গর্বের সাথে বলতে পারি এই দিবস আমাদের জন্য, আমাদের অহংকার।

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি!

প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, ইউরো-বাংলা প্রেসক্লাব ফ্রান্স।