জাপানি নারীর দুই মেয়েকে হাইকোর্টে হাজিরের নির্দেশ

প্রকাশিত: ২:২৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৯, ২০২১ | আপডেট: ২:২৮:অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৯, ২০২১

সন্তানদের অভিভাবকত্ব নিয়ে জাপানি নারী নাকানো এরিকোর আবেদনে সাড়া দিয়ে স্বামীর তত্ত্বাবধানে থাকা তার ১০ ও ১১ বছর বয়সী দুই মেয়েকে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

শিশু দুটির বাবা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শরীফ ইমরান ও তার বোন আমিনা জেবিনকে ৩১ আগস্ট তাদের নিয়ে হাজির হতে বলেছে আদালত। হাজিরার বিষয়টি গুলশান ও আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে শরীফ ইমরান যাতে দুই মেয়েকে নিয়ে দেশত্যাগ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে বলেছে আদালত।

দুই সন্তানদের অভিভাবকত্ব ও তাদের আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে ওই জাপানি নারীর করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) রুলসহ এ আদেশ দেয়। আদালতের রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

অবৈধভাবে দুই শিশুকে আটকে রাখা হচ্ছে না, এ বিষয়ে আদালতকে সন্তুষ্ট করতে শরীফ ইমরান ও তার বোন আমিনা জেবিনকে ওই দুই শিশুকে আদালতে হাজির করেত কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, আদাবর ও গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, শরীফ ইমরান ও তার বোন আমিনা জেবিনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। দুই মেয়েকে ফিরে পেতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদন (হেবিয়াস করপাস) করেন চিকিৎসক নাকানো এরিকো।

রিট আবেদনের তথ্য মতে, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি আইন অনুযায়ী জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো (৪৬) ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকার নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) বিয়ে করেন। এরপর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। এক যুগের দাম্পত্যজীবনে তারা ৩ সন্তানের জন্ম দেন। তিন সন্তানই মেয়ে।

তাদের বয়স যথাক্রমে ১১, ১০ ও ৭ বছর। ওই ৩ মেয়ে টোকিওর একটি স্কুলে পড়াশোনা করছিলো। গত ১৮ জানুয়ারি এরিকোর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করেন নাকানো এরিকো। পরে গত ২১ জানুয়ারি ইমরান টোকিওর ওই স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার এক মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। তবে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের আবেদন নাকচ করে।

পরবর্তীতে স্কুলবাসে করে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপেজ থেকে ইমরান বড় দুই মেয়েকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। পরে ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করলে এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন। এদিকে গত ২৮ জানুয়ারি সন্তানদের জিম্মা চেয়ে টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন এরিকো।

টোকিওর আদালত আদালত গত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক সাক্ষাতের আদেশ দেয়। তবে এই আদেশ অমান্য করে শরীফ ইমরান শুধু একবার মায়ের সঙ্গে বড় দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্য দিয়ে ইমরান মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করার পর গত ২১ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়েকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন ইমরান। পরে গত ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত এরিকোর অনুকূলে বড় দুই মেয়ের জিম্মা হস্তান্তরে আদেশ দেয়।

আবেদনে বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে এরিকো এত দিন বাংলাদেশ আসতে পারেননি। পরে গত ১৮ জুলাই শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন তিনি। যদিও শ্রীলঙ্কা বিমানবন্দরে থাকার সময়ই শরীফ এরিকোকে ফিরে যেতে বলেন।

কিন্তু এরিকো বাংলাদেশে আসেন এবং নিজের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করান। গত ২০ জুলাই এরিকোর কোভিড টেস্টের ফল নেগেটিভ আসে। কিন্তু শরীফ ইমরান তা অবিশ্বাস করেন এবং ২১ জুলাই প্রভা ক্লিনিকে কোভিড টেস্ট করাতে বলেন। প্রভা ক্লিনিকের টেস্টে ফল পজেটিভ আসে। পরে জাপান দূতাবাসের সুপারিশে আবার কোভিড টেস্ট করালে ফল নেগেটিভ আসে। কিন্তু তারপরও শরীফ ইমরান সেসব নেগেটিভ রিপোর্ট বিশ্বাস করছিলেন না। এরপর ২৪ জুলাই আবার কোভিড টেস্ট করান। সে টেস্টেও ফল নেগেটিভ আসে। এরপর দিন ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে আবার কোভিড টেস্ট করান। সে টেস্টেও কোভিড নেগেটিভ আসে।

বাংলাদেশে আসার আগেই এরিকো ফাইজারের দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন। পরে গত গত ২৭ জুলাই মোবাইলের জিপিএস বন্ধ করে এবং এরিকোর চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় মেয়েদের সাথে দেখা করানোর জন্য।

আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘এতে প্রতীয়মান হয় যে, শরীফ ইমরান আর কখনো মেয়েদের সাথে এরিকোকে আর দেখা করাতে চান না এবং মেয়েরা কোথায় আছে সেটিও জানাতে চান না। যে কারণে মেয়েদের অভিভাবকত্ব চেয়ে চেয়ে রিট আবেদনটি করেন।’