গাছ খাওয়ায় ছাগল পাঁচদিন আটকে রেখে জরিমানা ইউএনওর

প্রকাশিত: ৭:৪১ পূর্বাহ্ণ, মে ২৭, ২০২১ | আপডেট: ৭:৪১:পূর্বাহ্ণ, মে ২৭, ২০২১

উপজেলা পরিষদের ফুলগাছ খাওয়ার দায়ে ছাগলটিকে পাঁচদিন আটকে রাখা হয়। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় ছাগলের মালিককে। এ টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ছাগলটিই পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সীমা শারমিন।

সংবাদকর্মীদের কাছে এসব অভিযোগ করেছেন ছাগলটির মালিক সাহারা বেগম। ছাগলটিকে ফিরে পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন তিনি।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হাউ মাউ করে কেঁদে ফেলেন সাহারা বেগম। তিনি বলেন, এক বছর আগে ৫ হাজার টাকায় ওই ছাগলটিকে কিনেছিলেন তিনি। যা বর্তমানে ৩ মাসের গর্ভবতী।
ভুক্তভোগী ছাগলের মালিক সাহারা বেগম আরও জানান, তার স্বামী জিল্লুর রহমান সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। চাকরি থেকে অবসরের পর বর্তমান ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। উপজেলা পরিষদ চত্বর সংলগ্ন বসবাসরত সাহেরা খাতুন তার সংসার চালাতে মুরগি ও ছাগল পালন করেন।

তিনি জানান, গত ১৭ মে দিনের বেলায় কোনো এক সময় ওই ছাগল উপজেলা পরিষদ চত্বরে ঢুকে ফুল গাছের পাতা খায়। এ ঘটনায় ইউএনও ওই ছাগলটি আটক করে। ছাগলের মালিক অনেক খোঁজাখুঁজির পর দেখতে পান উপজেলা চত্বরের ভেতরে তার ছাগলকে বেঁধে ঘাস খাওয়াচ্ছেন এক আনসার সদস্য। ছাগলের মালিক ছাগল নিতে গেলে তাকে দেওয়া যাবে না বলে জানান ওই আনসার সদস্য। নিরুপায় হয়ে ছাগলের মালিক পাঁচদিন ধরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের কাছে ধর্না দেন।
অবশেষে ক্ষিপ্ত হয়ে ইউএনও দুই হাজার টাকা জরিমানা করেন বলে জানান ভুক্তভোগী ওই নারী। এমনকি বলা হয় জরিমানার টাকা দিয়ে যেন ছাগল ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

এদিকে, জরিমানার টাকা জোগাড় করতে না পারায় অবশেষে ইউএনও গত শনিবার (২২ মে) ছাগলটি বিক্রি করে দেন। ছাগলের মালিককে খবর দিয়ে বলা হয়, বাজারে ৫ হাজার টাকায় ছাগলটিকে বিক্রি করা হয়েছে। তিনি যেন এসে জরিমানার ২ হাজার টাকা বাদ দিয়ে বাকি ৩ হাজার টাকা নিয়ে যান।
এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে এলাকাবাসী জানান, গাছপালা খেলে ছাগল আটক করে বিক্রি করা অন্যায় কাজ। এ ঘটনার তদন্ত করে সঠিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সীমা শারমিন বলেন, ‘আমি কষ্ট করে গাছগুলো লাগাচ্ছি, যাতে গাছগুলো না খায়। তিনবারে আমার গাছগুলো নষ্ট করে দিয়েছে। চতুর্থবারে যখন দেখলাম কোনো কাজ হচ্ছে না। নিজেই আমি উনাকে বলেছি, খুব সফটলি (নরম স্বরে) বলেছি। চতুর্থবারে আমার গাছগুলো খেয়ে ফেলছে। এজন্য ছাগলকে তো না, মালিককে জরিমানা করা হয়েছে ২ হাজার টাকা। সেই ছাগলটি এখানে ছিল। আমার জিম্মায় পাঁচদিন রেখেছি, খাইয়েছি ক্লাবে। পাঁচদিন রেখে চুরি হয়ে যাবে তাই অন্যের জিম্মায় দিয়ে রেখেছি। এখন হচ্ছে জরিমানাটা দিয়ে ছাগল নিয়ে যাবে। সেটাই, আর কিছু না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার এখানে আসতে তিন চারবার ওই মহিলাকে নিষেধ করা হয়েছে। আমার এই পরিষদে নতুন পার্কের কাজ চলমান। এবং এই পার্কের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন পুরো পরিকল্পনাটাই আমার নিজস্ব। সেভাবেই আমি গাছ লাগাইছি। মাটিসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে নিজেই গাছ সংগ্রহ করে নিয়ে আসছি। এরপর গাছগুলো লাগাইছি। এখনও উদ্বোধন হয় নাই। উদ্বোধন হবে আগামী ১৫ তারিখ। যে কাজ বাকি আছে এখনও ২০ দিন লাগবে। ১৫-২০ দিনের মধ্যে পার্কটি উদ্বোধন করা হবে। একেবারে যত্ন সহকারে গাছগুলো সংগ্রহ করছি এবং লাগাচ্ছি। ওই মহিলাকে আগেও তিনবার নিষেধ করেছি এবং বলেছি, যদি আপনি পারেন দাঁড়িয়ে থেকে ঘাস খাওয়ায়ে নিয়ে যান।’
ভুক্তভোগীর দাবি অনুযায়ী, ছাগলটি অন্য জায়গায় বিক্রি হয়ে গেছে এমন কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘না না না, বিক্রি হবে কেন। বিক্রি হয়নি। উনার স্বামী বিডিআর, উনার ছেলে বিদেশে থাকে।’