বিশ্ব পুরুষ দিবস উপলক্ষে মাহফুজুল আলম এর রম্য রচনা

Jaber Jaber

Ahmed

প্রকাশিত: ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ, |                          

বিশ্ব পুরুষ দিবস উপলক্ষে বিশেষ রম্যঃ

“ফেঁসে গেছেন, বস!”

— মাহফুজুল আলম
__________________________

পরিসংখ্যান বলে পুরুষ মানুষ হচ্ছে পৃথিবীর সবচাইতে অসহায় প্রাণী ! শুনুন, মুখ ভরে হাসার কিছু নেই। প্রমাণ আছে ভাই । মুখে নয় হাতে কলমে বোঝাই।

কখনও বাহির হতে সবচেয়ে বেশি দেখা সুখী মানুষটা ভেতর হতে সবচেয়ে বেশি শূন্যতার ফাঁদে পড়ে। বিশেষ করে সামাজিক অবস্থানে মধ্যবিত্ত বা তারচেয়ে খানিকটা উঁচু হতে শুরু করে সবখানেই আছে এমন পুরুষ।
নারী নির্যাতন প্রকাশ পায়, পুরুষ নির্যাতন লজ্জার মাথা খাবে না বলেই সমাজের আড়ালে আবডালে থেকে যায় । পুরুষ যত সামান্য আগ্রাসীই হোক না কেন, সমাজে তা “নারী আক্রমণ” হিসেবে ফলাও করেই প্রচার হয়। ননফ্রিকশন যখন লিখি তবে তো এ বিষয়টি নিয়ে মুখ বুজে থাকার কিছুর নেই, তাই না? অন্তত আজকের এই বিশেষ দিনে।

আরেকটু খোলাসা করে বলি। পুরুষ সমাজে পুরুষরাই ভয় পায় তাদের অসহায়ত্বের কথা জানাতে ; পাছে সবাই ভেবে না বসে ঘটনাটি তার সঙ্গেই ঘটেছে । পরিসংখ্যান বলে পুরুষ মানুষ হচ্ছে পৃথিবীর সবচাইতে অসহায় প্রাণী !
এই যে দুনিয়ায় মানুষ মরছে কিন্তু একবার ভেবে দেখেছেন কি পৃথিবীতে আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ৭৫% ই পুরুষ কেন? অবাক ব্যপার, তাই না? আর দেবদাসের মত ইচ্ছায় এবং বাকি যে সব পুরুষ একেবারে অনিচ্ছায় গৃহহীন হয়েছেন তাদের সংখ্যা কত জানেন? জ্বী, এই গৃহহীন মানুষের মাঝে ৮৫% হচ্ছেন পুরুষ। মাথায় হাত দেবেন না। মুচকি হাসতে চান হেসে নিন। সমস্যা নেই। তাতে আমি অন্তত খুন হচ্ছি না। কিন্তু বিশ্বে খুন হবার পরিসংখ্যান জেনে নিন।

খুন হওয়া মানুষের মাঝে ৭০% হচ্ছেন পুরুষ। তাহলে বউদের কি দরকার স্বামী নির্যাতন করার? ও বেটা কোন না কোন ফাঁদে পড়ে হয় আত্মহত্যা, নয়তো গৃহহীন, কিংবা খুন হবেই হবে । শুধু শুধু বউ আমার টেনশন করে।

এত চিন্তা করার কিচ্ছু নাই আমার ভাবি ও বোনেরা। স্বামীকে ভালো লাগছে না? দিন পাঠিয়ে তার কর্মক্ষেত্রে। প্রতিদিন সময় মত ঠেলে দিন কাজে। যত কম বাসায় আসবে ততই মঙ্গল। কারণ কর্মক্ষেত্রে মারা যাওয়াদের মধ্যে ৯৩% হচ্ছেন পুরুষ । কি খুশি তো? এবার একটা থ্যাংক ইউ দিন না আমাকে!

কোন বোন বা ভাবি এসব করার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারছেন না? তাহলে তাদের জন্য রয়েছে বোনাস অফার। পুরুষ নামক মানুষটাকে অযত্ন বা অবহেলা করার প্রয়োজনই নেই। কারণ ও বেটা এমনিতেই মরে যাবে আপনার আগে আগে। কারণ পুরুষেরা মহিলাদের চাইতে ৩-৬ বছর আগে মারা যায়!

যারা ভয় পান কিছু করতে কিন্তু মনে মনে মনে গালি দিতে মন চায়, তাহলে আপনাদের তিরস্কার করার শতভাগ স্বাধীনতা আছে। মনে মনে দোয়া করেন যেন একটা রোগ হয়ে যায় বেটার। না করলেও চিন্তা নেই কারণ প্রতি বছর মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের চাইতে বেশি পুরুষ প্রোস্টেট ক্যান্সারে মারা যান।

আর যাদের তাতেও জ্বালা মেটে না তাদের বলছি, কোন মতে যদি পুরুষ নামক এই প্রানীটাকে অপরাধি হিসেবে দেখতে ভালো লাগে তবে আমি নিশ্চিত যে, আমার এই পরিসংখ্যানটা আপনি খুব বেশি ভালোবেসে ফেলবেন। কারণ পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে সমান অপরাধের জন্য একজন পুরুষ একজন মহিলা আসামীর চাইতে বেশি সাজা ভোগ করেন।

এবার পুরুষ ভাইদের বলি। ভাইরে কিচ্ছু করার নাই। ফেঁসে গেছি বস। দেখুন না, পৃথিবীর সব দেশে নারী নির্যাতন আইন থাকলেও পুরুষ নির্যাতন আইন নেই।
এমনকি নারী দিবসে শুভেচ্ছার বন্যা বইয়ে দেওয়া হয়, মিডিয়া সোচ্চার হয়ে ওঠে, সরকারের মাথা ব্যথা হয়ে যায়, কত যে প্রগ্রাম চলে সারা দেশ ও বিদেশে । নারী সংস্থা রাজপথ হতে রাজপুত পর্যন্ত ফাটিয়ে ফেলে। তবুও পুরুষদের ঘুম ভাঙ্গে না। যে সব পুরুষরা নারী দিবসে টক সোতে বসে গলাবাজি করেন, তারাও দিন শেষে বউয়ের কথামত অনিচ্ছার লুডু খেলতে রাজি না হয়ে যান না। আহারে আমার ভাই! তোরে কিভাবে বাচাই?

আজকের পুরুষ দিবসে নারীদের কাছ থেকে কোনো নজরানা দূরে থাকুক, একখানা ধন্যবাদ পাবেন বলে মনে করেন ? ভাইরে হেদায়েত, নসিয়ত, আমল করতে করতেই তো জান যায় – ধন্যবাদ পাবার টাইম কই?

এই লেখাটি ছাপা হবার পর যদি বেঁচে থাকি তবে দেখা হবে। আর যদি আমার পরের লেখা দেখে চিনতে না পারেন যে, আমি কে ; তবে কমেন্টস বক্সে বা ইনবক্সে নক করবেন। তখন হয়তো বলে দেবো , “খামছি, চুলটানা, সার্ট ছেড়া, আলুথালু চুল ওয়ালা যে লেখাটা, ওটাই আমি!”
জবাবে দুই আঙুলের “ভি” চিহ্নিত বিজয় বোঝাবো এবং জানাবো, “দেখলেন তো এ যাত্রাও বেঁচে আছি, হাহ্ হা!”