নেত্রকোনায় শিলাবৃষ্টি, কৃষকের মাথায় হাত

প্রকাশিত: ২:৪৮ অপরাহ্ণ, |                          

ঝড়-বৃষ্টি মৌসুমের শুরুতেই নেত্রকোনায় শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে করে বোরো, সবজি ফসল ছাড়াও ক্ষতি হয়েছে লিচু ও আম মুকুলের। শিলাবৃষ্টির ফলে ফসল ও ফলের মুখ দেখার আগেই মাথায় হাত পড়েছে কৃষকের।

মঙ্গলবার ভোর ৫টায় শুরু হয়ে আধাঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এ শিলাবৃষ্টি হয় জেলার সদর, কলমাকান্দা, মদন, খালিয়াজুরি ও পূর্বধলা উপজেলায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শীত বিদায়ের পর প্রথম বৃষ্টি হয়েছে আজ মঙ্গলবার ভোরে। প্রথম বৃষ্টিতেই ব্যাপক শিল পড়েছে। এতে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সদর উপজেলায়। এর মধ্যে অনন্তপুর, ফচিকা, দেওপুর, বালি এলাকায় শিলাবৃষ্টিতে বাড়ি-ঘরের টিনের চাল ফুটো হয়ে গেছে।

বোরো ফসলের ক্ষতিছাড়াও লিচু ও আমের মুকুল ঝরে গেছে। ক্ষতি হয়েছে শাকসবজিরও। মৌসুমের শুরুতে ফসলের এমন ক্ষতি হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা।

নেত্রকোনা সদরের অনন্তপুর গ্রামের আছিয়া বেগম বলেন, ‘ভোরে পয়লা বৃষ্টি পড়তে থাকলেও শিল আছিল না। কিছুক্ষণ পরেই শিল পড়া আরম্ভ হইছে। ৬ থেকে ৭ মিনিট টানা পড়ছে। চাল ভাইঙ্গা ছিদ্রি কইরালছে। ঘরের ভিতরে শিল পড়ছে।’

একই গ্রামের কৃষক আইন উদ্দিন বলেন, ‘আমার সবজি ক্ষেতের গাছ মাটিতে মিশাইয়া ফালাইছে।’

দেওপুর গ্রামের কৃষক রফিক মিয়া বলেন, ‘বৃষ্টিটা বোরো ফসলের লাইগ্যা ভালই হতো। কিন্তু পাথর (শিল) পইরা ধান গাছের গজানো শীষ নষ্ট অইয়া গেছে। আমরার এলাকার বালি ফচিকাতেও বেশি ক্ষয়ক্ষতি অইছে।’

সদরের ফচিকা গ্রামের কৃষক নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘এইবার আম ও লিচু গাছে ফলন ভালো অইতো। অনেক মুকুল ধরছিল। কিন্তু শিলে অনেক ক্ষতি অইছে। মুকুল পইড়া গেছে। গাছে যা আছে ওইগুলাতেও ফলন অইব না। শিলের আঘাতের লাইগা টিকবো না।’

নেত্রকোনা সদরের অনন্তপুর গ্রামের আনিসুর রহমান জানান, ‘আমের মুকুলের ক্ষতি হয়েছে। ঘর-বাড়ি ক্ষতি হয়েছে। শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে আমের মুকুল ঝরে গেছে। মুকুল ঝরে যাওয়ায় আশানুরূপ আম উৎপাদন হবে না।’

খালিয়াজুরী সদরের কৃষক মহসিন মিয়া বলেন, ‘শিলাবৃষ্টিতে ছায়ার হাওরের বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শিলার আঘাতে উঠতি বোরো ধানের সব চারা ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।’

খালিয়াজুরী উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শামীম মোড়ল বলেন, আমার ইউনিয়নে শিলাবৃষ্টিতে প্রায় ২৫ শতাংশ বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বোরো জমি তিনি পরিদর্শন করেছেন বলেও জানান।

খালিয়াজুরী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, শিলাবৃষ্টিতে খালিয়াজুরী উপজেলার ছায়ার হাওর ও বয়রার হাওরের বোরো ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. হাবিবুর রহমান বলেন, শিলাবৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আমের মুকুলের। বোরো ধানের তেমন কোনো ক্ষতির খবর আমরা পাইনি। প্রতিটি উপজেলায় খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।