রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাবে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যায় না

প্রকাশিত: ২:৪১ অপরাহ্ণ, |                          

বারবার চেষ্টা করেও গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পারছে না সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। একদিকে অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশ, অন্যদিকে রাজনৈতিক নেতাদের হুমকি-ধামকি আর প্রভাবে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে অবৈধ সংযোগ বৈধ করার আলোচনা শুরু করেছে জ্বালানি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

করাইল বস্তিতে অভিযানে গিয়ে সব অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তিতাস। গত বছর ৮ অক্টোবর অভিযানের কয়েকদিনের মধ্যে আবারও সংযোগ পেয়ে যায় বস্তিবাসী। অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযানে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলছে বছরের পর বছর।

নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আরটিভি নিউজকে বলেন, তিতাসের লোক আসে, সংযোগ কেটে দেয়। তারপর আবার সংযোগ দেয়। যে নিয়ন্ত্রণ করে তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। কর্তৃপক্ষ আসার আগেই ফোন দেয়, এতে তারা আগে থেকেই খুলে রাখে। আসার পর কর্তৃপক্ষ কিছু খুঁজে পায় না।

২০১৯-২০ অর্থ বছরে মাত্র ১ হাজার ১১৩টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। যদিও তথ্যমতে কেবল নারায়ণগঞ্জেই রয়েছে প্রায় দুই লাখ অবৈধ সংযোগ। বিভিন্ন সময় অভিযানে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও ক’দিন বাদে আবারও গ্যাস পেয়ে যায় অবৈধ ব্যবহারকারীরা।

এমন পরিস্থিতির জন্য বিশেষজ্ঞরা তিতাসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশকে দায়ী করেন।

কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, তারা অবিরত চুরি অব্যাহত রেখেছে। বছরের পর বছর ধরে শুনছি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ তাহলে আছে কতো?

অবৈধ লাইনে নিম্নমানের পাইপ ব্যবহার করা হয়। মানহীন সরু পাইপের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বিশেষ করে বস্তিগুলোতে যে সকল অবৈধ সংযোগ নেয় তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে নেয়। যেটা খুব তাড়াতাড়ি ছিদ্র হয়ে যায় এবং সেখান থেকেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকে।

এমন পরিস্থিতিতে ভিন্ন পথে হাঁটছে মন্ত্রণালয়। প্রায় ১১ বছর নতুন সংযোগ দেয়া বন্ধ থাকলেও এখন অবৈধগুলো বৈধ করার আলোচনা চলছে।

বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য নূরুল ইসলাম তালুকদার এমপি আরটিভি নিউজকে বলেন, অবৈধ সংযোগ যখন বিচ্ছিন্ন করা হয় তখন বাধার সম্মুখীন হই। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের চাপ আছে, নেতাদের চাপ আছে; যে কারণে অনেক সময় ইচ্ছা থাকলেও করা যায় না। যেহেতু তারা বাংলাদেশেরই লোক, তাদেরও দরকার। এজন্য অবৈধ সংযোগ আর রাখা চলবে না, তাদের বৈধভাবে দেয়া হবে।

এমন সিদ্ধান্তে অবৈধ কারবারিরা আরও উৎসাহিত হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, গ্যাস লাইন ঝুঁকিমুক্ত করতে প্রভাবের ঊর্ধ্বে উঠে সব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে।