ফেনীতে আইসিইউর জন্য হাহাকার, ছটফট করে তিন রোগীর মৃত্যু

প্রকাশিত: ৪:৩০ অপরাহ্ণ, |                          

ফেনীতে করোনায় আক্রান্ত রোগী মো. মোস্তফাকে (৬৭) শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা প্রয়োজন বলে জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। গত বুধবার বিকেল থেকে রোগীর স্বজনরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আইসিইউর জন্য ধরনা দিতে থাকেন। ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ রোগীতে পূর্ণ থাকায় রোগীকে কোভিড সাধারণ ওয়ার্ডে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়। সেখানেই ছটফট করতে করতে বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি মারা যান।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ শয্যার জন্য এভাবেই হাহাকার চলছে। জেনারেল হাসপতাল ছাড়াও ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতালে তিন শয্যার আইসিইউ বেডের একটিও খালি নেই বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আইসিইউর জন্য প্রতিনিয়ত করোনায় আক্রান্তদের স্বজনেরা বারবার ধরনা দিচ্ছেন চিকিৎসকদের কাছে। কিন্তু শয্যাসংকটে তাঁরা নিরুপায় থাকায় বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। বৃহস্পতিবার বিকালে তিন ঘণ্টায় জেনারেল হাসপাতালে তিনজন রোগী মারা যান বলে জানিয়েছেন ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. ইকবাল হোসেন ভূঞা।

আরএমও মো. ইকবাল হোসেন ভূঞা জানান, জ্বরের পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়ায় ফেনী সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়নের আফজালুর রহমানকে (৭৫) প্রথমে ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতালে নেয়া হয়।

সেখানে করোনা ওয়ার্ডে শয্যা খালি না থাকায় বৃহস্পতিবার দুপুরে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে তিনি মারা যান। তাঁর আগে জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে হালিমা খাতুন (৭০) নামের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের এক রোগী মারা যান।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের মিয়াজী বলেন, করোনা ওয়ার্ডে পজিটিভ রোগী আছেন ৩৪ জন। উপসর্গ নিয়ে আছেন আরও ৬৩ জন। হাসপাতালে রোগীদের আইসিইউর চাহিদা থাকলেও খালি না হলে নতুন কাউকে ভর্তি করা যাচ্ছে না। তবে হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থার পাশাপাশি সিলিন্ডার দিয়েও রোগীদের অক্সিজেন সেবা দেয়া হচ্ছে। দিনে অন্তত চারবার করে অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল করতে হচ্ছে। আইসিইউ, কোভিড ওয়ার্ডের পজিটিভ এবং উপসর্গের মোট ৭৯ জনকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। ফলে চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হয়।

এদিকে ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ডায়াবেটিক হাসপাতালের আইসিইউতে করোনা উপসর্গ নিয়ে ৪১ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। শয্যা খালি না থাকায় নতুন রোগী ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না।

সিভিল সার্জন ডা. রফিক উস সালেহীন জানান, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ফেনীতে ৫ হাজার ১১৭ জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জেলায় কর্মরত সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাদ হোসেনসহ এ পর্যন্ত ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে জেলায় সুস্থ্য হয়েছেন ৪ হাজার ৪০ জন। আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুহার ১.৬১ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, করোনার উপসর্গ নিয়ে গত দেড় মাসে জেলায় অন্তত অর্ধশতজন মারা গেছে বলে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল ও জনপ্রতিনিধিদের সূত্রে জানা গেছে।