দেশে সিনোফার্মের টিকা প্রয়োগ শুরু

প্রকাশিত: ১:০০ অপরাহ্ণ, |                          

চীন থেকে আসা সিনোফার্মের তৈরি ১১ লাখ ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। ঢাকা ছাড়াও প্রতিটি জেলায় একটি কেন্দ্রে শনিবার সিনোফার্মের টিকা দেয়ার কর্মসূচি শুরু হয়।

গণমাধ্যমকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম।

তিনি জানান, সকাল থেকেই সারাদেশে সিনোফার্মের টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া টিকাকেন্দ্রগুলো প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

ঢাকা জেলায় চারটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিনোফার্মের টিকা দেয়া হচ্ছে। সেগুলো হলো- ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

ইতোমধ্যে যারা নিবন্ধন করেছেন শুধুমাত্র তারাই সিনোফার্মের টিকা পাবেন। এ পর্যন্ত টিকা পেতে নিবন্ধন করেছেন ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৯ জন। তাদের মধ্যে ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন। এই টিকার দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছেন প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। তাদের দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে সিনোফার্ম বা ফাইজারের টিকা দেয়া হবে কি না, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

১০ ধরনের মানুষকে চীনের টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বাংলাদেশে বসবাসরত সব চীনা নাগরিক এই টিকা পাবেন। এছাড়া নির্ধারিত টিকাকেন্দ্রে ইতিমধ্যে নিবন্ধন করা ব্যক্তিরা, যারা এখনো কোনো টিকা পাননি, তারা টিকা পাবেন। সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ সদস্যদের এই টিকা দেয়া হবে। জনশক্তি উন্নয়ন ব্যুরো কর্তৃক অনুমোদিত বিদেশগামী বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীরা এই তালিকায় আছেন।

অগ্রাধিকারের তালিকায় আছেন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ, সরকারি নার্সিং ও মেডিকেল কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা।

জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই টিকা পাবেন। প্রকল্পের তালিকায় আছে পদ্মা সেতু প্রকল্প, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, এক্সপ্রেস হাইওয়ে প্রকল্প, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প ও রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প।

এছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং কোভিড-১৯ মৃতদেহ সৎকারে জড়িত ব্যক্তিরা সিনোফার্মের এই টিকা পাবেন।

গত ১২ মে বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাঁচ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা বুঝে পেয়েছে। এর মধ্যে উপহারের এই টিকা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের দেয়া শুরু করেছে সরকার।

গত ১৩ জুন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর দুটি উড়োজাহাজ চীন থেকে আরো ছয় লাখ ডোজ সিনোফার্মার টিকা নিয়ে এসেছে।

এর আগে গত ৩১ মে বাংলাদেশে এক লাখ ছয় হাজার ডোজ ফাইজারের টিকা পৌঁছায়। এই টিকা খুব কম তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। ঢাকার বাইরে এ সুবিধা পাওয়া সম্ভব না। তাই এগুলো ঢাকার চারটি টিকাকেন্দ্রে ব্যবহার করা হবে।

আজ সিনোফার্মের টিকাদান শুরু হলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া ফাইজারের এক লাখ ছয় হাজার ডোজ করোনার টিকা প্রদান শুরু হচ্ছে না। এর আগে গত ১৪ জুন রাজধানীর মহাখালীর বিসিপিএস অডিটরিয়ামে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সিনোফার্ম ও ফাইজারের টিকাদান ১৯ জুন শুরুর আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন।

১৮ বছরের ওপরের সবাইকে পর্যায়ক্রমে করোনাভাইরাসের টিকার আওতায় নিয়ে আসার উদ্দেশ্য সামনে রেখে সরকার গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে গণ টিকাদান কর্মসূচি শুরু করে। কিন্তু টিকার স্বল্পতার কারণে ২৬ এপ্রিল সরকার প্রথম ডোজ টিকাদান বন্ধের ঘোষণা দেয়। এর সপ্তাহখানেক পর একই কারণে সারাদেশের সবগুলো কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়াও বন্ধ করে দেয়া হয়।

ভারতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সেরাম ইনস্টিটিউট অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সরবরাহে ব্যর্থ হলে, বালাদেশের টিকাদান কর্মসূচিতে প্রভাব পড়ে। চুক্তি অনুযায়ী, সেরাম থেকে ছয় মাসের মধ্যে বাংলাদেশের তিন কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার কথা ছিল।

জানুয়ারিতে সেরাম প্রথম দফায় ৫০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করে। যার মধ্যে ওই মাসে মাত্র ২০ লাখ ডোজের একটি চালান ঢাকায় পৌঁছায়। এরপর সেরাম থেকে বাংলাদেশে টিকার আর কোনো চালান আসেনি।