সেই রাতে পরীমনির সঙ্গে যা ঘটেছিল

প্রকাশিত: ১:৫৯ অপরাহ্ণ, জুন ১৪, ২০২১ | আপডেট: ১:৫৯:অপরাহ্ণ, জুন ১৪, ২০২১

বর্তমান সময়ের লাস্যময়ী অভিনেত্রী পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি নিজেই। এমনকি তাকে নির্যাতনও করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন।

রোববার রাত ৭টা ৫৩ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া একটি স্ট্যাটাসে এই অভিযোগ করেন পরীমনি, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো তোলপাড় চলছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার চেয়ে স্ট্যাটাসের শুরুতে নায়িকা লেখেন, ‘আমাকে রেপ এবং হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমি এর বিচার চাই।’ তবে স্ট্যাটাসের কোথাও অভিযুক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের নাম লেখেননি তিনি।

এ ঘটনার পরপরই গণমাধ্যমকর্মীরা পরীমনির বনানীর বাসায় গিয়ে জড়ো হন। পরে রাত ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে অভিযুক্তের নাম ও কখন, কোথায় তাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয় তার বর্ণনা দেন নায়িকা।

পরীমনি বলেন, ‘গত ১০ জুন রাতে পারিবারিক বন্ধু অমি ও ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী জিমির সঙ্গে বাইরে বের হয়েছিলাম। রাত তখন ১২টা পেরিয়েছে। বন্ধুটি তাদের নিয়ে যান আশুলিয়ার উত্তরা বোট ক্লাবে। পরে সেখানে নাসিরউদ্দিন আহমেদ নামে এক ব্যক্তি আসেন। তিনি নিজেকে ক্লাবটির সাবেক প্রেসিডেন্ট পরিচয় দেন। সেদিন তিনিসহ চারজন মদ্যপ ব্যক্তি আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। চড়-থাপ্পড় মারেন। মাধুরী দিক্ষিত বলে নাচতে বলেন। একপর্যায়ে একজন আমাকে নেশাদ্রব্য খাইয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। গায়ে আঘাত করেন। শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এসময় পরীমনির সঙ্গে থাকা কস্টিউম ডিজাইনার জিমিকেও মারধর করে তারা।’

এ ঘটনার পর পরীমনি বনানী থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে তিনি কোনো সহযোগিতা পাননি। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তারা অভিযোগ রেকর্ড করেননি। এরপর হাসপাতাল পর্যন্ত গিয়েও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে চিকিৎসা না নিয়েই বাড়ি ফিরে যান।

পরীমনি বলেন, ‘এমন ঘটনায় সাধারণ মেয়েরা প্রথমে কোথায় যায়? থানায় যায়। আমিও থানায় গিয়েছি। আমি বারবার বলেছি, ঘটনাটা যদি নিজের সঙ্গে না ঘটে তাহলে কেউ বুঝবে না। ওইদিন পর্যন্ত কি তবে অপেক্ষা করবেন?’

অভিযুক্তদের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে উপস্থিত সাংবাদিকদের পরীমনি বলেন, ‘আমার মুখটা সাদা কাপড়ে ঢাকা পড়লেই কেবল বুঝতেন। আমি চার দিন ধরে কারও সাপোর্ট পাইনি। আপনারা সত্যিটা খোঁজেন। সাধারণ কোনো মেয়ের হলে সে খবর হয়তো আপনাদের কাছে পৌঁছায় না। সাংবাদিকদের কাছে খবর পৌঁছানো হয় না। আমার মতো যখন কোনো মেয়েকে ভয় দেখানো হয় তখন সাধারণ মেয়ের খবর তো পাবেন না!’

কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের উদ্দেশে পরীমনি বলেন, ‘আপনারা আমাকে ৫ মিনিট কাঁদতে দেখছেন। কিন্তু আমি গত চারদিন ধরে কাঁদছি। ওই লোক আমাকে কি সব বিশ্রি কথা বলেছিলো। আমি বলতে পারছি না। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমার জায়গায় আপনারা থাকলে হয়ত কথাও বলতে পারতেন না। আমি ওইখানে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। ওয়েটাররা ধরে আমাকে নামিয়ে দেয়। সিসি ক্যামেরায় সব রেকর্ড আছে। আমার মনে হয়েছে বিষয়টি তাদের পূর্বপরিকল্পিত।’

একপর্যায়ে অঝরো কাঁদতে কাঁদতে পরীমনি চিৎকার করে বলেন, ‘আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তবে আপনারা জেনে রাখুন, আমি আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে নই। যদি মরে যাই তবে বুঝবেন, আমাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই। মরলে আমি আমার বিচার নিয়ে মরব।’

পরীমনির ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাস ও সংবাদ সম্মেলনে বলা বক্তব্যের প্রসঙ্গে পুলিশের মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক এআইজি সোহেল রানা বলেন, ‘পরীমনির ফেসবুক স্ট্যাটাস পুলিশ সদর দপ্তরের নজরে এসেছে। বিষয়টি তদন্ত করতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। অভিনেত্রীর অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। তিনি পুলিশের প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত সেবা পাবেন। উপযুক্ত বিচার পাবেন।’

এর আগে রোববার রাতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে দেয়া পরীমনির স্ট্যাটাসটি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল। স্ট্যাটাসে পরীমনি লেখেন- বরাবর,

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আমি পরীমনি। এই দেশের একজন বাধ্যগত নাগরিক। আমার পেশা চলচ্চিত্র।

আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি।

আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে।

আমি এর বিচার চাই।

এই বিচার কই চাইবো আমি? কোথায় চাইবো? কে করবে সঠিক বিচার? আমি খুঁজে পাইনি গত চার দিন ধরে। থানা থেকে শুরু করে আমাদের চলচ্চিত্র বন্ধু বেনজির আহমেদ আইজিপি স্যার! আমি কাউকে পাইনা মা।

যাদেরকে পেয়েছি সবাই শুধু ঘটনা বিস্তারিত জেনে, দেখছি বলে চুপ হয়ে যায়!

আমি মেয়ে, আমি নায়িকা, তার আগে আমি মানুষ। আমি চুপ করে থাকতে পারিনা। আজ আমার সাথে যা হয়েছে তা যদি আমি কেবল মেয়ে বলে, লোকে কী বলবে এই গিলানো বাক্য মেনে নিয়ে চুপ হয়ে যাই, তাহলে অনেকের মতো (যাদের অনেক নাম এক্ষুণি মনে পরে গেল) তাদের মতো আমিও কেবল তাদের দল ভারী করতে চলেছি হয়তো।

আফসোস ছাড়া কারোর কি করবার থাকবে তখন!

আমি তাদের মতো চুপ কি করে থাকতে পারি মা?

আমি তো আপনাকে দেখিনি চুপ থেকে কোন অন্যায় মেনে নিতে!

আমার মা যখন মারা যান তখন আমার বয়স আড়াই বছর। এতদিনে কখনো আমার এক মুহুর্ত মাকে খুব দরকার এখন, মনে হয়নি এটা। আজ মনে হচ্ছে , ভীষণ রকম মনে হচ্ছে মাকে দরকার, একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরার জন্য দরকার।

আমার আপনাকে দরকার মা। আমার এখন বেঁচে থাকার জন্য আপনাকে দরকার মা।

মা আমি বাচঁতে চাই।

আমাকে বাঁচিয়ে নাও মা