বাউল কামাল পাশার ১২২তম জন্মবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ২:১৯ অপরাহ্ণ, |                          

প্রায় ৬ হাজার গানের রচয়িতা, গানের সম্রাট, বাংলাদেশের মরমী সংস্কৃতির উজ্জল নক্ষত্র ও সুনামগঞ্জের পঞ্চরত বাউলের মধ্যমণি বাউল কামাল পাশা’র (কামাল উদ্দি) ১২২ তম জন্মবার্ষিকী আজ।

১৯০১ সালের (৬ ডিসেম্বর) এই দিনে তদানীন্তন সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ মহকুমার দিরাই থানার ভাটিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন এই মরমী সাধক। ১৯৮৫ সালের ৩রা মে তিনি পরলোক গমন করেন।
আজ বুধবার দিবসটি যথাযথ মর্যাদয় পালন করতে বাউলের জন্মস্হান সুনামগঞ্জ জেলা সহ ঢাকা ও সিলেটে নানা কর্মসুচী আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও বাউল কানাল পাশার জন্মস্হান সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে বাউল কামাল পাশা সংস্কৃতি সংসদের উদ্যোগে দিনভর পৃথক পৃথক আলোচনা সভা ও কামালগীতি পরিবেশন সহ নানা কর্মসুচীর আয়োজন করা হয়েছে।
বাউল সম্রাট কামাল পাশার রচিত অন্যতম গানের মধ্যে “দীন দুনিয়ার মালিক খোদা এত কষ্ঠ সয়না তোমার দিল্কি দয়া হয়না’ “চাইনা দুনিয়ার জমিদারী কঠিন বন্ধুরে”, “নৌকা আগে আগে চলেরে ঐ নৌকাটা শেখ মুজিবের”, “সাজিয়ে গুজিয়ে দে”,“কাঙ্কের কলসী জলে গিয়াছে ভাসি” ও ‘প্রেমের মরা জলে ডুবেনা’ সহ প্রায় ৬ হাজার গানের রচয়িতা ছিলেন গানের সম্রাট বাউল কামাল পাশার (কামাল উদ্দিন)। শুধু গান রচনায় নয় বাউল কামাল পাশা  ঐতিহাসিক নানকার আন্দোলন,৪৭ এর গণভোট আন্দোলন,৫২ এর ভাষা আন্দোলন,৫৪‘র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন,৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান ও ৭০ এর নির্বাচন ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অবদান রাখেন। ৭০ এর পাকিস্তান জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচন উপলক্ষে হাওরাঞ্চলে গণ সংযোগে আগত আওয়ামীলীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভামঞ্চে নৌকার পক্ষে গণসঙ্গীত পরিবেশন এবং ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে টেকেরঘাট ও ছেলা সাবসেক্টরের বিভিন্ন মুক্তিফৌজ ক্যাম্পে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে জীবনবাজী রেখে যুদ্ধ করার জন্য মুক্তিযুদ্ধাদের উৎসাহিত করে জাগরনী গান পরিবেশনের পাশাপাশি এই শিল্পী স্বাধীকার স্বাধীনতা ও স্বায়ত্বশাসনের পক্ষে নিরলস শ্রম সাধনা আমৃত্যু অব্যাহত রাখেন।
জানা যায়,গত ২৫ অক্টোবর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিব বরাবরে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী কর্তৃক বাউল কামাল পাশা কে শিল্পকলা (সংগীত)ক্ষেত্রেমরণোত্তর একুশে পদক ২০২৪ মনোনয়নের জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করেন।এর আগে ২০২০-২০১৮ইং সনে সাবেক জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ,২০১৭ইং সালে সাবিরুল ইসলাম, ২০১৪ইং সনে  শেখ রফিকুল ইসলাম এবং ২০১৩-২০১১ইং সালে মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী,বাউল কামাল পাশা (কামাল উদ্দিন) কে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করার জন্য পর পর নয়বার প্রস্তাবনা প্রেরণ করলেও  এখন পর্যন্ত এই শিল্পী মরণোত্তর স্বীকৃতি কোন স্বীকৃতি পাননি।
২০২০ইং সনে চিকিৎস্যাবিদ্যায় স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত অধ্যাপক ডাঃ উবায়দুল কবীর চৌধুরী বলেন,জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে সর্বপ্রথম গণসংগীত রচয়িতা হচ্ছেন ভাটি বাংলার বিখ্যাত বাউল শিল্পী কামাল পাশা। যিনি ১৯৫২ সালের ২৭ ফেবব্রুয়ারি দিরাই থানার রাজানগর কেপিসি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ঢাকায় ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে,“শেখ মুজিব কারাগারে আন্দোলন
কেউ নাহি ছাড়ে,সত্যাগ্রহে এক কাতারে সামনে আছেন সামাদ ভাই ঢাকার বুকে গুলি কেন ? নুরুল আমিন জবাব চাই” শীর্ষক ভাষা আন্দোলন উপলক্ষে একটি ঐতিহাসিক দেশাত্ববোধক গানে সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুর নামটি স্বগর্বে স্বমহীমায় সর্বপ্রথম উচ্চারন
করেছিলেন। হুইল চেয়ারে চলাচলকারী দেশের সর্বশেষ বেঁচে থাকা ৩ জনের অন্যতম যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম সামছুল ইসলাম বলেন,৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে “তোমরা অস্ত্র ধরোরে বীর বাঙ্গালী ভাইপাঞ্জাবী আসিলো দেশে বাঁচার উপায় নাই” ও “মুজিব বাইয়া যাওরে তোমার ৬ দফারি নাও নিপীড়িত দেশের মধ্যে জনগনের নাও মুজিব বাইয়া যাওরে” ইত্যাদি গান আমাদেরকে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে মারাত্মকভাবে উৎসাহিত করতো।তিনি বলেন,আমি মান্যবর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখতআবেদন করে বাউল কামাল পাশাকে মরণোত্তর একুশে পদক
প্রদানের দাবী জানিয়েছি।
এদিকে বাউল কামাল পাশাকে মরণোত্তর স্বীকৃতি প্রদানের জন্যপ্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বাউল কামাল পাশা সংস্কৃতি সংসদ নামের সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক সাংবাদিক বাউল আল-হেলাল। তিনি বিষয়টি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকলের  আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন ।
এদিকে বাউল কামাল পাশার (কামাল উদ্দিন) ১২২ তম জন্মবার্ষিকী উপক্ষ্যে ৬ ডিসেম্বর বুধবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমীর উদ্যোগে এক আলোচনা সভা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত দেশাত্ববোধকসহ জনপ্রিয় গান নিয়বিশেষ সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।