মশার যন্ত্রণায় ঢাকার মানুষ ঘুমোতে পারছে না

প্রকাশিত: ৭:৫৩ পূর্বাহ্ণ, |                          

মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রাজধানীর মানুষ। মহামারি করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার ভেতরে উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে মশার দাপট। উত্তর-দক্ষিণের দুই মেয়রের নানান আশ্বাসও মশা নিয়ন্ত্রনে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না মশা। যন্ত্রণায় নাকাল রাজধানীর বাসিন্দারা।

এদিকে ঘরের মশা তাড়াতে কেউ ব্যবহার করছে কয়েল, কেউবা অ্যারোসোল। এসব সহনীয় মাত্রার কীটনাশকে তৈরি হলেও অনেকেই এগুলোর গন্ধ সহ্য করতে পারেন না। শুরু হয়ে যায় হাঁচি-কাঁশি। আবার বাংলাদেশে অনেক ব্র্যান্ডই রাসায়নিক উপকরণ ব্যবহারের মাত্রাসীমা মানছে না, সেটাও উঠে এসেছে অনেক সময়।

ঘরে ঘরে মশক নিধনে বর্তমানে কয়েল-অ্যারোসোলের চেয়েও বেশি জনপ্রিয় রিচার্জেবল ব্যাট। কেউ কেউতো বাসায় বসে মশা মারার ব্যাট চালাতেই ব্যস্ত সময় পার করছেন। মশক নিধনের সবরকম উপকরণের চাহিদা যে বেড়েছে, তা জানা যায় রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে।

মিরপুরের বাসিন্দা ডেইজি আখতার জানালেন, তার বাসায় প্রতিদিন অ্যারোসোল দিতে হচ্ছে। সন্ধ্যা হলে জ্বালাতে হয় কয়েল। এমনকি মশা মারার ব্যাটও রেখেছেন ঘরে। তার অভিযোগ, আগে একটা অ্যারোসোলেই মাস চলে যেতো। এখন প্রতি সপ্তাহে কিনতে হচ্ছে। তারপরও রাতে ঘুমোতে পারছে না তার পরিবার

তেজগাঁওয়ের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, মশার ওষুধ দিয়ে যাওয়ার এক ঘণ্টা পরও ভরপুর মশা দেখা যায়। এই যদি হবে অবস্থা, তাহলে আর ওষুধ দিয়ে কি লাভ?

শেওড়াপারার বাসিন্দা আইরিন হেনা উদ্বেগ নিয়ে জানান, ঘরে বাঁচ্চা আছে। ওর সবদিকেই খেয়াল রাখি। তবে এখন মশার অত্যাচার এত বেড়েছে তাতে আমরা সবাই মশা মারতে হিমশিম খাচ্ছি। এদিকে অ্যারোসোলে বাচ্চার ক্ষতি হবে বলে ব্যবহার করতেও পারি না।

‘চলতি বছর ঢাকা শহরে মশা বেশি’- এটা জানা গেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা থেকে।

তারা জানিয়েছে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার মশার ঘনত্ব চার গুণ বেশি। তবে এগুলো এডিস মশা নয়। শুধুই কিউলেক্স মশা। এ থেকে হতে পারে ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগ।

তবে স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, ঢাকা শহরে যে প্রজাতির কিউলেক্স আছে, সেগুলো থেকে ফাইলেরিয়া হওয়ার ঝুঁকি কম। এ তথ্য এসেছে গবেষণা থেকেই। আর এসব মসা মারতে সাধারণ মানুষের ব্যয়ও বেড়েছে তিনগুণ।

কিন্তু মশার কামড়ের চুলকানি কম যন্ত্রণার নয়। কানের কাছে ঘ্যানঘ্যানও অসহনীয়। আর এডিস মশা যদি চলে আসে, তবে তো ডেঙ্গু জ্বরের ভয়ে থাকতে হবে নগরবাসীকে। করোনাকালে প্রকোপ কম থাকলেও তার আগের বছর কিন্তু এডিসের যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়েছিলো দেশজুড়ে। ২০১৯ সালে শুধু ঢাকা শহরেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। এর মধ্যে মারা যায় শতাধিক।

সেই সময়ে পরিবারের এক সদস্য আক্রান্ত হওয়ায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে (ডিএসসিসি) আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম।

তিনি জানালেন, এই নোটিশের মূল লক্ষ্য ছিলো মশা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের তৎপরতা বাড়ানো।

তবে এবার ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ নগর প্রশাসনের তৎপরতা থাকলেও মশা কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এ বিষয়ে তানজিম আল ইসলাম বলেন, শুধু ঋতুভিত্তিক কাজ করলে হবে না। মশক নিধন কার্যক্রমে সারা বছর ধারাবাহিক প্রক্রিয়া থাকতে হবে।

অন্যদিকে ঢাকা শহরে এবার কিউলেক্স মশা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে অনাবৃষ্টিও একটি কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বৃষ্টি হলেই এ জাতীয় মশা কমে আসবে। তার আগে পর্যন্ত নর্দমা সচল রাখতে হবে। ডোবানালা রাখতে হবে পরিচ্ছন্ন। কারণ, নোংরা ও আবদ্ধ পানি কিউলেক্স মশা প্রজননের প্রধান স্থান।তাই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে মেয়র-কাউন্সিলরদের নজরদারি অনেক বেশি প্রয়োজন। তারা অবশ্য নগরবাসীকেও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। কখনো কখনো নাগরিক দায়িত্বশীলতার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন কঠোর কায়দায়।

সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম রাস্তায় পড়ে থাকা বাসাবাড়ির বর্জ্য সংশ্লিষ্ট ভবনে ফেরত পাঠান। তারপর বলেন, যারা রাস্তায় ময়লা ফেলে দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে, উত্তর সিটি সেই ময়লা তাদের বাড়িতে ফেলে আসবে।

নগর পরিচ্ছন্ন থাকলে, বৃষ্টি এলেই কমে আসবে কিউলেক্স মশা। কিন্তু সেই সময়ে আবার ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কারণ, জমে থাকা পরিচ্ছন্ন পানি হচ্ছে এডিস মশার প্রজনন স্থল। সেই মৌসুম থেকে খুব বেশি দূরে নেই ঢাকা শহর। তাই ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধে প্রস্তুতি নিতে হবে এখনি। নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এডিস মশা।

এর উপায়ও জানিয়ে দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। তার মতে, এডিস মশা জন্মায় পাত্রে জমে থাকা পানিতে। এই মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বৃষ্টির পূর্বেই অকেজো পাত্র সরিয়ে ফেলতে হবে।