গোয়াইনঘাটে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

প্রকাশিত: ১২:৩১ অপরাহ্ণ, মে ১৪, ২০২৫

গোয়াইনঘাটে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং ইসিএ ভূক্ত এরিয়া সহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু এবং পাথর উত্তোলন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার( ১৩ মে) দুপুরে উপজেলার জাফলং ও বালির হাওর এলাকায় নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন গোয়াইনঘাট উপজেলা শাখার উদ্যোগে পৃথকভাবে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের গোয়াইনঘাট উপজেলা শাখার আহ্বায়ক আজমল হোসেনের সভাপতিত্বে ও যুগ্ন সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন ইমনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি ও বৃহত্তর জৈন্তিয়া উন্নয়ন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ গোলজার আহমেদ হেলাল। তিনি বলেন, জাফলং একটি ইসিএ ভূক্ত এলাকা। এই এলাকার পরিবেশ রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব এবং পরিবেশবান্ধব উপায়ে ব্যবসা করতে হবে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি, প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি অবৈধভাবে ডেজার মেশিন ব্যবহার করে বালু উত্তোলন করছে, যা পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করছে এবং ইসিএ’র নিয়ম লঙ্ঘন করছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, এই বিষয়ে জরুরি হস্তক্ষেপ করে পদক্ষেপ নেয়া হোক।

তিনি বলেন, জাফলং, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুর প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এলাকা। এখানে বালু ও পাথরের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে। কিন্তু বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে এই সম্পদ উত্তোলনের পথ বন্ধ করে দেওয়ায় লক্ষাধিক মানুষের জীবিকা সংকটে মুখে পড়ে। তারা মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়। বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের দাবি ছিল যে, পরিবেশবান্ধব উপায়ে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হোক। সরকার আমাদের এই দাবি মেনেও নিয়েছিল, কিন্তু পরে আবার তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর ফলে বহু মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে, এবং পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় অবৈধ লুটপাট, দুর্নীতি ও অন্যান্য অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে রাষ্ট্র ও সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং দুর্নীতিবাজ ও লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তিনি অবিলম্বে অবৈধভাবে পাহাড়ের মতো জমাকৃত বালুর স্তুপগুলো জব্দ করে বালুখেকোদের আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানান।

তিনি আরো বলেন, সিলেটকে ‘প্রকৃতি কন্যা’ বলা হয়।জাফলং সৌন্দর্যের রাণী।প্রকৃতির এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য রক্ষা করা সকলের কর্তব্য। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে চলা এবং নদী ও পরিবেশ বাঁচাতে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে দাবী মেনে নিতে সরকারকে আহবান জানান।

সভায় বক্তারা বলেন, প্রভাবশালী একটি চক্র সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে উপজেলার জাফলং, বাংলা বাজার, বালির হাওরসহ বিভিন্ন নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে অবৈধপন্থায় যন্ত্র দানব দিয়ে বালু ও পাথর উত্তোলন করে পরিবেশ ধ্বংস করছে। এই ধ্বংসলীলার মাধ্যমে চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

তারা বলেন, ইজারা বহির্ভূতভাবে নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে অবৈধভাবে মজুদ ও বিক্রি করায় নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙ্গনের দেখা দিয়েছে। এতে করে আসন্ন বন্যায় নদী গর্ভে বাড়িঘর সহ ফসলি জমি বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় দিন পার করছে তীরবর্তী এলাকার মানুষ। তাদের এসব কার্যক্রমের প্রতিবাদ করলে প্রাণনাশের হুমকিসহ মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এ সময় বক্তারা অনতিবিলম্বে অবৈধভাবে যন্ত্র দানব দিয়ে পাথর ও বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন গোয়াইনঘাট উপজেলা শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বয়ক আজাদ আহমদ, যুগ্ম আহ্বয়ক মামুনুর রশিদ মুন্না, সংগঠক জাবেল আহমদসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ও স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ