সিলেটের ১১৫ জন লন্ডনি ফিরলেন বাড়িতে, নতুন আসলেন ৬৭ জন

Jaber Jaber

Ahmed

প্রকাশিত: ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ, |                          

সিলেটে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন শেষে বাড়ি ফিরলেন ১১৫ প্রবাসী। নতুন করে কোয়ারেন্টিনে গেছেন লন্ডন থেকে আসা আরও ৬৭ জন প্রবাসী। তারা সোমবার লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন। তবে তারা ১৪ দিন নয়, কোয়ারেন্টিনে থাকবেন মাত্র চার দিন।

এই চারদিনের মধ্যে সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হবে প্রবাসী লন্ডনিদের। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় করোনার কোনো লক্ষণ ধরা না পড়লে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হবে। কারো শরীরে করোনার সংক্রমণ লক্ষ্য করা গেলে তাকে আইসোলেশনে পাঠানো হবে। তবে শুরুতে ১৪ দিন ও পরে চার দিনের কোয়ারেন্টিনের নির্দেশনা নিয়ে সিলেটে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল জানান, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন শেষে বাড়ি ফিরেছেন দেশে ফেরা ১১৫ জন প্রবাসী। তারা চলতি মাসের ৪, ৭ ও ১১ তারিখ সিলেটে এসেছিলেন। সরকারের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী ৪ তারিখ আসা প্রবাসীদের ১৪ দিন এবং ৭ ও ১১ তারিখে আগতদের চারদিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ শেষে গত রোববার রাত ও সোমবার বাড়ি ফেরেন মোট ১১৫ জন প্রবাসী। সিলেটে ৪ তারিখে আসা প্রবাসীরা ১৪ দিন পূর্ণ করলেও নতুন নীতিমালার আলোকে ৪ ও ১১ তারিখে আসা প্রবাসীরা চারদিন পূর্ণ করে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন।

এছাড়াও সোমবার সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফের অবতরণ করে লন্ডনের ফ্লাইট। ৯৯ জন যাত্রী নিয়ে আসা ফ্লাইটে ৬৭ জন যাত্রী ছিলেন সিলেটের। বাকি ৩২ জন ঢাকার। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২০২ ফ্লাইটটি সিলেট বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

ওসমানী বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ বিমান অবতরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিমানবন্দরে সিলেটের ৬৭ জন যাত্রী নামার পরপরই কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চার দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন পালনের জন্য সরকারের নির্ধারিত বাসে করে হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়।

প্রবাসীদের কোয়ারেন্টিন কখনো ১৪ আবার কখনো চার দিন এনিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে সিলেটে। সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতি ও সিলেট স্টেশন ক্লাবের সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন যুগান্তরকে বলেন, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের যথাযথ পরামর্শ নিয়েই কোয়ারেন্টিনের সময়সীমা নির্ধারণ করা উচিত। এমন হলে চার দিনের কোয়ারেন্টিনের স্থলে ১৪ আবার কখনো নির্দেশনা আসার কথা ছিলো না।

তিনি বলেন, ১৪ বা ৪ বড় নয়, ‘সেফটি ফাস্ট’ এটাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় বৃহত্তর মানব সমাজের জন্য। সর্বপ্রথম প্রবাসী পরিবার ও স্বজনরা আছেন সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে। এই মুহূর্তে প্রবাসী ও তাদের পরিবার-স্বজন ও বৃহৎ সমাজের সুরক্ষায় যা করণীয় তা-ই করা উচিত।

সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমদ চৌধুরী মিশু বলেন, গোটা বিশ্বের সঙ্গে এখন বিলেতের যোগাযোগ নেই বললেই চলে। শুধু সিলেটের সঙ্গেই আছে। এই দুর্দিনে মানবিক কারণে বাড়ি ফিরছেন অনেকেই। তাদের এই বাড়ি ফেরাকে ঘিরে কেউ কেউ ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন। কোয়ারেন্টিনের জন্য নির্ধারিত হোটেলের ভাড়া দ্বিগুণ হারে আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দেশের বাড়ি ফিরে টানা ১৪ দিন যদি চড়া ভাড়ায় হোটেল কোয়ারেন্টিনে থাকছেন। এটা প্রবাসী ভাইদের নয়, আমাদের চরম দুর্ভাগ্যের ও লজ্জার। মহান মুক্তিযুদ্ধে, স্বাধীনতা পরবর্তী দেশ বিনির্মাণে প্রবাসীরা কী করে যাচ্ছেন তা ভুলে গেলে চলবে না।

তিনি বলেন, করোনা এক্সপার্ট ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যম থেকে কোয়ারেন্টিনের সময়সীমা নির্ধারণ মোটেও ঠিক নয়।

প্রবাসীদের কোয়ারেন্টিনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও আটাব সিলেট অঞ্চলের সাবেক সভাপতি আব্দুল জলিল বলেন, তিন সন্তানই প্রবাসে, ঘুম আসে না। তারপরও প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ প্রবাসীদের সেবায় নিয়োজিত আছি।

হোটেলের ভাড়া দ্বিগুণ নেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে হোটেল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তারা দ্বিগুণ নয়, নির্ধারিত ভাড়ার অর্ধেক নিচ্ছেন। এটা হয়তো অনেকেই জানেন না। তবে যারা স্বেচ্ছায় উচ্চ মানের হোটেলে যেতে চান তাদেরকে সেসব হোটেলেই রাখা হচ্ছে। হোটেল উন্নত হলে ভাড়াও উন্নত হবে স্বাভাবিক।

সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদ বলেন, আমার অসংখ্য স্বজন প্রবাসে। তারপরও করোনার শুরুতে কারো কোয়ারেন্টিন লাগবে, কারো লাগবে না এমন ঘোষণা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করে তোপের মুখে পড়েছিলাম। যদিও সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার হোক এমন উদ্দেশ্য থেকেই মন্তব্যটি করেছিলাম। তাই এসব নিয়ে আর মন্তব্য নয়। তবে, গোটা সমাজ যাতে মহামারী থেকে রক্ষা পায় এমন যথাযথ উদ্যোগ সব সময়ই কাম্য।