সিলেটে ৩৩ নারী ও শিশু হত্যাকান্ডের শিকার

প্রকাশিত: ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ, |                          

করোনা মহামারির সময়েও সিলেটে ৩৩ নারী ও শিশু হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। প্রিয়তম স্বামীর হাতে স্ত্রী, স্বজনদের হাতে শিশু খুনের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি গর্ভধারিণী মাকেও খুন করেছে নরাধম পুত্র। গেল বছর হত্যাকান্ডের শিকার হওয়াদের মধ্যে ২৬ জন নারী ও বাকী ৭ জন শিশু। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১১ জানুয়ারি তাহিরপুরের চারগাঁওয়ে চাচা-ফুফুদের হাতে খুন হয় ৭ বছরের শিশু তোফাজ্জুল হোসেন। ১৮ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় প্রেম প্রত্যাখ্যান করায় বখাটের হাতে নিহত হন স্কুল ছাত্রী মদিনাতুল কুবরা জেবিন (১৬)। ১৯ জানুয়ারি মৌলভীবাজারের বড়লেখার পাল্লাথল চা বাগানে স্ত্রী জলি বুনার্জি (৩০), শাশুড়ি লক্ষ্মী বুনার্জি (৬০), প্রতিবেশী বসন্ত বক্তা (৬০) ও তার কন্যা শিউলী বক্তাকে (১৪) খুন করে ঘাতক নির্মল কর্মকার।

৮ ফেব্রুয়ারি ওসমানীনগরের ফকিরাবাদে ভাতিজাদের বিরোধ থামাতে গিয়ে আরিফুল বিবি (৬০) খুন হন। ১ জুন জকিগঞ্জের বিপকগ্রামে প্রবাস ফেরত নরপশু পুত্র আবিদের হাতে খুন হন গর্ভধারিণী মা ছয়রুন বেগম (৬৪)। ৪ জুন শ্রীমঙ্গলের পূর্ব জামসী গ্রামে রাতের আঁধারে খুন হন জায়েদা বেগম (৫৫) ও তার কন্যা ইয়াসমিন আক্তার (২৫)। ৭ জুন বিয়ানীবাজারে চাচী সুরমা বেগমকে তার পরকীয়া প্রেমিকের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় খুন হয় ৩ বছরের শিশু সায়েল আহমদ। ১ জুলাই মাধবপুরের বেলঘরে ভাসুরের ছেলের হাতে নিহত হন চাচী রশিদা বেগম (৩০)। ২ জুলাই কুলাউড়ার দক্ষিণ পাবই গ্রামে খুন হন অন্তঃসত্ত্বা নারী মাজেদা বেগম (২৫)। ১ আগস্ট নবীগঞ্জের করগাঁওয়ে ৭ সন্তানের জননী সালমা বেগমকে (৪৫) হত্যা করা হয়। ৯ আগস্ট শ্রীমঙ্গলের মির্জাপুর বৌলাছড়া চা বাগানে খুন হন অলকা আন্তা (৩০)। ২১ আগস্ট জগন্নাথপুরের তেলিকোনায় ১৮ মাসের শিশু সাদিয়া বেগমকে হত্যা করা হয়। ২২ সেপ্টেম্বর জগন্নাথপুরের ইকড়ছই পয়েন্টে স্বামীর দায়ের কোপে খুন হন স্ত্রী আফিয়া বেগম (৩৮)। ১২ অক্টোবর বিশ্বনাথের রামপাশা-বৈরাগীবাজার সড়কের বাল্লা ব্রিজের পাশের ডোবা থেকে মাদ্রাসা ছাত্র রবিউল ইসলামের (১১) ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

১৬ অক্টোবর কানাইঘাটে স্বামীর হাতে খুন হন ফাতেমা বেগম (২৩)। ২৪ অক্টোবর বানিয়াচং শুটকি ব্রিজের কাছ থেকে জোনাকী আক্তারের (২৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। ৩০ অক্টোবর জামালগঞ্জের মামুদপুরে সামিয়া আক্তারকে (২০) গলা কেটে হত্যা করে পাষন্ডরা। একই দিন সিলেট নগরের আখালিয়ায় মাদ্রাসা ছাত্রী জান্নাত আক্তার লীনার (১৪) লাশ উদ্ধার করা হয়। ৩ নভেম্বর কোম্পানীগঞ্জের টুকেরগাওয়ে স্বামীর নির্যাতনে অন্তঃসত্ত্বা নারী লাকী আক্তার (১৯) খুন হন। ১৩ নভেম্বর কমলগঞ্জের রহিমপুর চা বাগানে অজ্ঞাত নারীর (২৪) লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৫ নভেম্বর দক্ষিণ সুরমার লালারগাঁওয়ে অজ্ঞাত নারীর লাশ (৩৫) উদ্ধার করে পুলিশ। একই দিন মাধবপুরের মীরনগরে মনোয়ারা বেগমকে (৪৫) জবাই করে হত্যা করা হয়। ১৮ নভেম্বর জৈন্তাপুরের বাঘেরখালে নিজ বসতঘর থেকে সাবিয়া বেগমের (৩৫) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। ২৩ নভেম্বর নগরের কাজীটুলায় স্বামী আল-মামুনের হাতে খুন হন নববধূ সৈয়দা তামান্না বেগম (১৯)। ৫ ডিসেম্বর শ্রীমঙ্গলের পূর্বাশা এলাকায় খুন হন অনিতা রাশী দাশ (৪৫)। ১১ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার গুজাউড়ায় ৪ বছরের শিশু এনামুল হক মুন্নাকে পাথর নিক্ষেপ করে খুন করা হয়। ২২ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ সদরে দুলাভাইর হাতে খুন হন জুনেরা খাতুন (২৫)। ২৭ ডিসেম্বর দক্ষিণ সুনামগঞ্জের শিমুলবাঁক ইউনিয়নের আক্তারপাড়ায় মেয়ের হাতে খুন হন শফিকুন নেসা (৬০)।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল গনি বলেছেন, মানসিক শৃঙ্খলা ও সমস্যার কারণেই নানা ঘটনা ঘটছে। করোনাকালে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করেন। বেকার হয়ে পড়া, আর্থিক সমস্যাও একটা কারণ। সবচেয়ে বড় কথা হলো, মানুষের মতো গড়ে না ওঠা। সামাজিক ও পারিবারিকভাবেও অনেক সমস্যার সমাধান করা হয়। বিষয়গুলো সামাজিকভাবেই মোকাবেলা করলে এরকম ঘটনা কমে আসবে।