শবে বরাতের ফজিলত এবং আমাদের করণীয় ও বর্জনীয় -বেলাল বদরুল

প্রকাশিত: ৭:২৪ অপরাহ্ণ, |                          

শবে বরাত বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ রাত। এ রাতে আল্লাহ পাপী বান্দাদের মুক্তি দেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যখন শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত আসবে, তখন তোমরা এ রাতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবে এবং দিনে রোজা পালন করবে। কেননা এই দিন সূর্যাস্তের পরই আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, ‘কে আছো ক্ষমাপ্রার্থনাকারী, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কে আছো রিজিকপ্রার্থী, আমি তাকে রিজিক দেব। কে আছো বিপদগ্রস্ত, আমি তাকে বিপদমুক্ত করব। ফজর হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা এ কথা বলতে থাকেন।’ (ইবন মাজাহ: ১৩৮৮)

এই রাত্রি সম্পর্কে হযরত মুহাম্মদ (সা:) বলেন, এই রাত্রিতে এবাদত-কারিদের গুনাহরাশি আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দেন। তবে কেবল আল্লাহর সাথে শিরককারী, সুদখোর,গণক, যাদুকর, কৃপণ, মদপানকারী, যিনাকারী এবং পিতা-মাতাকে কষ্টদানকারীকে আল্লাহ মাফ করবেন না।
শবে বরাতে করণীয় আমল
শবে বরাতে যেসব আমল করা উচিত তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে:
এক. নফল নামাজ। নফল নামাজের ভেতরে তাহিয়্যাতুল অজু, দুখুলিল মাসজিদ, আউওয়াবিন, তাহাজ্জুদ, ছলাতুত তাসবিহ, তাওবার নামাজ, ছলাতুল হাজাত, ছলাতুশ শোকরসহ অন্যান্য নফল নামাজ পড়া যেতে পারে।
দুই. নামাজে কিরাআত ও রুকু সিজদাহ দীর্ঘ করা।
তিন. পরের দিন নফল রোজা রাখা।
চার. বেশি পরিমানে কুরআন শরিফ তিলাওয়াত করা।
পাঁচ. সাইয়্যিদুল মুরছালীন রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর বেশি বেশি দরূদ ও সালাম প্রেরণ করা।
ছয়. অধিক পরিমানে তাওবা-ইস্তিগফার করা। আল্লাহ পাকের নিকট রোনাজারি করা।
সাত. তাসবিহ তাহলিল, জিকির আজকার এবং দুআর আমল অধিক পরিমানে করা।
আট. কবরবাসী মাতা পিতা এবং মৃত আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করা। কোনো কারণে সম্ভব না হলে দূরে থেকে কবর জিয়ারতের নিয়্যাতে তাদের রূহের উদ্দেশ্যে ঈসালে সাওয়াব তথা সাওয়াব রেছানী করা।
নয়. নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সকল মুমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে দুআ করা। বিশ্ববাসী সকল মানুষের শান্তি-সমৃদ্ধি, কল্যান কামনা করে তাদের হেদায়েতের জন্য, সুপথপ্রাপ্তির জন্য বিনীত অন্তরে আল্লাহ পাকের নিকট কায়োমনোবাক্যে প্রার্থনা করা।

শবে বরাতে বর্জনীয় আমল
পবিত্র শবে বরাতের প্রচলিত আমলে আমাদের সমাজে কিছু অনর্থক কাজ যুক্ত হয়েছে, যেগুলো করা উচিত নয়। যেগুলো থেকে প্রত্যেকের বিরত থাকা একান্তই উচিত। যেমন:
এক. আতশবাজি, পটকা ফোটানো।
দুই. অপ্রয়োজনে রাতের অধিক সময় ধরে মাইক বাজিয়ে অন্য কারও ইবাদত কিংবা ঘুমের বিঘ্ন ঘটানো।
তিন. ইবাদত আমল বাদ দিয়ে অনর্থক ঘোরাফেরা করে এই রাতের মূল্যবান সময় অতিবাহিত করা।
চার. অনাকাঙ্ক্ষিত আনন্দ উল্লাসে লিপ্ত হওয়া।
পাঁচ. অযথা কথাবার্তা ও বেপরোয়া আচরণ করা।
ছয়. হালুয়া রুটি বা খাওয়া দাওয়ার পেছনে অনেক বেশি সময় নষ্ট করে ইবাদত থেকে গাফিল থাকা।

( মহান আল্লাহতালা আমাদের সবাইকে পবিত্র শবে বরাতের রাতে অধিক পরিমাণে এবাদত বন্দি করার তৌফিক দিন। আমি গুনাগারকে আপনাদের দোয়াতে ইয়াদ রাখবেন প্লিজ। )
লেখকঃ কলামিষ্ট ও সাংবাদিক,