সিলেটে ধর্মীয় নানা আয়োজনে পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (সাঃ) পালিত

প্রকাশিত: ৫:২৬ অপরাহ্ণ, |                          
  1. সিলেটেও ভাবগম্ভীর পরিবেশ ও ধর্মীয় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (সাঃ) পালিত হয়েছে।

প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ৫৭০ সালের এই দিনে (১২ রবিউল আউয়াল) আরবের মক্কা নগরীর কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোলে জন্মনেন বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ)।
পবিত্র এদিবসটি উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সিলেটের বিভিন্ন স্থানে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে মসজিদ,মাদ্রাসা, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, বিপণী বিতানে খতমে কোরআন, দিবসের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা,মোবারক র‌্যালী, ওয়াজ ও দোয়া মাহফিল ও শিরণী বিতরণের আয়োজন করা হয়।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, মহানবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) ছিলেন বিশ্বমানবতার জন্য আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার। তাঁর জীবনদর্শনে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনের সর্বোত্তম ও পরিপূর্ণ আদর্শ নিহিত রয়েছে। সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠায় প্রিয়নবীর প্রতি যেমন সর্বোচ্চ ভালোবাসা লালন করতে হবে তেমনি তাঁর সুমহান আদর্শ অনুসরণ, চর্চা ও প্রচার-প্রসারে সবাইকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তারা বলেন,হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সঃ) তাঁর জীবনাদর্শে ন্যায়ভিত্তিক শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে অনুসরনীয় নজীর স্থাপন করে গেছেন,যাহা সর্বকালের মানুষের জন্য মডেল হয়ে থাকবে, তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের যথাযথ অধিকার নিশ্চিত করে গেছেন। তাঁর জীবনের প্রতিটি দিকই তাই সকলের জন্য অনুসরণীয়। ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনা পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে তিনি সারা দুনিয়ার জন্য শ্রেষ্ঠতম আদর্শ ছিলেন। সর্বত্রে রাসুলের (সাঃ) এর আদর্শ অনুসরণই সকল সমস্যার সমাধান নিহিত রয়েছে বলে তারা মন্তব্য করেন।
এদিকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ সিলেট জেলার উদ্যোগে সিলেটে ওলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজালাল (রঃ) এর দরগাহ প্রাঙ্গণ থেকে এক বিরাট জশনে জুলুস র‌্যালী বের হয়। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ লেখা ব্যানার,ফেস্টুন শোভা পাচ্ছিলো র‍্যালীটিতে। এসময় সুললিত কন্ঠে মহানবীর শানে নাতে রাসুল ও ইসলামি সঙ্গিত পেশ করেন শিল্পিরা। বিশাল র‍্যালীটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শিলেট মহানগরীর মইয়ারচরস্থ মাদরাসা-এ-তৈয়বিয়া তাহেরিয়া হেলিমিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়,পরে সেখানে জুলুসত্তর ঈদে মিলাদুন্নবী তাৎপর্য নিয়ে এক আলোচনা,মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
গাউসিয়া কমিটির সিলেট জেলার সভাপতি হাফেজ মিসবাহ উদ্দিন চৌধুরীর  সভাপতিত্বে র‍্যালী পুর্ব আলোচনায় বক্তব্য রাখেন সাবকে সংসদ সদস্য সিলেট জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী,দরগাহে হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজার পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি সামুন মাহমুদ খান,সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ আরমান আহমদ শিপলু প্রমুখ। জুলুসোত্তর আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন গাউসিয়া কমিটি সিলেটের উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ জালালুদ্দিন আল ক্বাদেরী,গাউসিয়া কমিটি সিলেট জেলার সাধারন সম্পাদক শাহ মোঃ গিয়াস উদ্দিন, সিনিয়র সভাপতি মুহাম্মদ মোক্তার মিয়ার, সহ-সভাপতি আলা উদ্দিন,সাবেক সিভিল সার্জন ডা.ওয়ালী মাহমুদ খান, ফজিলাতুন্নেছা মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা আহমদ আলী হেলালী, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র সেনার সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ নুরুল হক চিশতী, এসএমপি’র জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সায়ফুল ইসলাম প্রমুখ। পরিশেষে খতমে গাউসিয়া ও মিলাদ শরীফ শেষে বাংলাদেশসহ সমস্ত মুসলিম উম্মার শান্তি সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনায়  করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
অন্যদিকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবছরও সিলেটে প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মরহুম হযরত মাওলানা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলীর অনুসারীদের সংগঠন বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার উদ্যোগে সিলেট নগরীর সোবহানীঘাটসহ হযরত শাহজালাল দারুচ্ছুন্নাহ ইয়াকুবিয়া কামিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ থেকে সিলেটের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ মোবারক র‌্যালি বের করা হয়। এর দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় এক কিলোমিটারের চেয়ে বোশি। এতে হাজার হাজার নবী প্রেমিক ছাত্র জনতা অংশনেন। মহানবী (সাঃ)-এর শানে রচিত কালজয়ী নানা কবিতার শ্নোক অঙ্কিত নানা রঙের ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড র‌্যালিতে শোভাবর্ধন করে। র‍্যালীতে ছাত্রজনতার সুরে সুরে ধ্বনিত হয় প্রিয়নবীর প্রশংসাগীতি। র‌্যালীতে বালাগাল উলা-বি কামালিহি,শামছুদ্দুহা আসসালাম… এরকম নাতে রাসুল পরিবেশন করা হয়। র‌্যালীটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আবার সোবহানীঘাট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। র‌্যালী বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ হোসাইনের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব আতিকুর রহমান সাকেরের পরিচালনায় র‌্যালিপূর্ব আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আনজুমানে আল ইসলাহ’র কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহবুবুর রহমান ফরহাদ, র‌্যালি বাস্তবায়ন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম মনোয়ার হোসেন প্রমুখ। এ সময় নেতারা বলেন, হযরত মুহাম্মদ (সা.) জগতের রহমতের উৎস। তাঁর আগমনে পৃথিবী অন্ধকার থেকে আলোর পথ পেয়েছিল। তিনি দুনিয়া ও আখিরাতের সরদার। আলোচনায় বক্তারা মহানবী (সাঃ) এর সুমহান আদর্শকে বুকে ধারন করে সর্বত্রে সার্বজনীন শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।
র‌্যালীতে শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- আনজুমানে আল ইসলাহর মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা একেএম মনোওর আলী, ভারতের উজানডিহির সৈয়দ শামীম আহমদ আল মাদানী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাওলানা আব্দুর রকিব, আল ইসলাহর সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল মুনঈম মনজলালী, সাংগঠনিক সম্পাদক ড. মাওলানা মঈনুল ইসলাম পারভেজ, মাওলানা মাহমুদ হাসান চৌধুরী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা শেহাব উদ্দিন আলীপুরী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা নজমুল হুদা খান, অর্থ সম্পাদক মাওলানা গুফরান আহমদ চৌধুরী, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা আবু ছালেহ মো. কুতবুল আলম ও শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক মাওলানা সিরাজুল ইসলাম ফারুকী প্রমুখ।