মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি: রেজ্যুলেশনের কপি নিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২:৫৭ অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০২১ | আপডেট: ২:৫৭:অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০২১

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি এবং মুজিববর্ষকে অভিনন্দিত এবং বাঙালি জাতির মুক্তির জন্যে শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শীতাপূর্ণ নেতৃত্বের প্রশংসার পাশাপাশি বাংলাদেশকে সমৃদ্ধি দিতে শেখ হাসিনার বিচক্ষণতাপূর্ণ নেতৃত্বের আলোকে মার্কিন কংগ্রেসে প্রস্তাব উত্থাপন এবং ৫ স্টেটে গৃহিত রেজ্যুলেশনের কপি হস্তান্তর করা হলো পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেনের কাছে। এ উপলক্ষে ১৬ জুন বুধবার নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কন্স্যুলেটে অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠান হয়। বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম এবং যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদসহ কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, নিউ হ্যামশায়ার, জর্জিয়া, লুইজিয়ানা স্টেটে রেজ্যুলেশন পাশ হয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় কংগ্রেসের নি¤œকক্ষে একটি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। ওয়াশিংটন ডিসি থেকেও আরেকটি অভিনন্দনপত্র ইস্যু করা হয়েছে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি উপলক্ষে।
এ সময় সামগ্রিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট উপস্থাপনকালে এ কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়কারি বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার সকলকে অবহিত করেন, ‘এর আগে কয়েক বছর নিউইয়র্ক স্টেট পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রেজ্যুলেশন পাশ হলেও সেখানে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানো হয়। এবারই প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং মুক্তি সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাসে নেতৃত্ব প্রদানের সঠিক তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে উপরোক্ত সংগঠনগুলোর কারণে। শুধু তাই নয়, কংগ্রেসসহ সর্বত্র বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের সত্যিকারের তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রী এগুলো গ্রহণের সময় সেখানে ছিলেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. খন্দকার মনসুর এবং সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়া, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, সহ-সভাপতি হাজী জাফরউল্লাহ, কোষাধ্যক্ষ আলিম খান আকাশ, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়া করিম, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ইনকের আহবায়ক আশরাব আলী খান লিটন, আমেরিকা-বাংলাদেশ এলায়েন্সের প্রেসিডেন্ট এম এ সালাম, বাংলাদেশী আমেরিকান ডেমক্র্যাটিক ফ্রন্টের প্রেসিডেন্ট খোরশেদ খন্দকার, আই-গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ সহ বিশিষ্টজনেরা।
বাংলাদেশের মানুষের জন্যে মার্কিন রাজনীতিক ও নীতি-নির্দ্ধারকদের সশ্রদ্ধ অনুভ’তি সম্বলিত এসব রেজ্যুলেশনের কপি গ্রহণের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, প্রবাসীরা হলেন একেকজন রাষ্ট্রদূত। তাদের মাধ্যমেই বহুজাতিক এ সমাজে বাংলাদেশের ইমেজ মহিমান্বিত হয়। ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নেই, সমৃদ্ধির অনন্য উদাহরণে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সকলেই বাংলাদেশকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে অভিহিত করছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের এগিয়ে চলার বিস্তারিত তথ্য মার্কিন সমাজকে আরো ব্যাপকভাবে জানাতে প্রবাসীদের অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে।
ড. মোমেন আরো বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের পথে অদম্যগতিতে এগুচ্ছে বাংলাদেশ-এসবের স্বীকৃতি মিলেছে মার্কিন মুল্লুকের এসব রেজ্যুলেশনে।
বাংলাদেশে চমৎকার পরিবেশ বিরাজ করছে এবং প্রবাসীদেরকে আরো দ্বিগুণ উৎসাহে স্বদেশে বিনিয়োগের আহবান জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছি। বাংলাদেশে যা তৈরী করবেন তারই বাজার রয়েছে। অর্থাৎ বিনিয়োজিত অর্থে আপনি লাভবান হবেন একইসাথে বাংলাদেশও উপকৃত হবে। বহু বাংলাদেশীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে আপনি বিশেষ একটি ভ’মিকা পালনে সক্ষম হবেন। দেশে একশতটি ইকনোমিক জোন তৈরী করা হচ্ছে। সে সব জোনে প্রবাসীরাও কল-কারখানা করতে পারবেন। ২৮টি হাইটেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। আপনারা জেনে খুশী হবেন, ডিজিটাল সেক্টরে আমরা অভাবনীয় সাফল্য অজূনে সক্ষম হয়েছি। আপনাদেরই অংশ, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শে বাংলাদেশের হাইটেক সেক্টর অভ’তপূর্ব উন্নতি করেছে। এখন আমরা হাই টেকে বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করছি। প্রায় ৬ লাখ ফ্রিল্যান্স এক্সপার্টিজ আছে হাই টেকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী ভারত,পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ভ’টান, মিয়ানমার, নেপালের তুলনায় বাংলাদেশের বিদেশী বিনিয়োগের মাত্রা অনেক বেশী এবং উৎপাদিত পণ্য রফতানীর ক্ষেত্রেও এগিয়ে রয়েছি।
ড. মোমেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক জনমত জোরদারকল্পে ঘনঘন সভা-সেমিনারের অনুরোধ জানান প্রবাসীদের প্রতি।
ড. মোমেন জর্জিয়া স্টেট সিনেটর শেখ রহমান, নিউ হ্যামশায়ার স্টেটের রিপ্রেজেনটেটিভ আবুল খান, নিউজার্সির কাউন্সিলম্যান একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরুন্নবী, নিউ অর্লিন্স ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর ড. মোস্তফা সারোয়ারকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রক্লেমেশন ও রেজ্যুলেশন সমূহের জন্যে বিশেষ ভূমিকা পালন করায়।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসার সমন্বয়ে করোনাকালেই বিভিন্ন স্টেট ও কংগ্রেসে এসব প্রক্লেমেশন/রেজ্যুলেশনের জন্যে কাজ করেছে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখা, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদসহ কয়েকটি সংস্থা।
এ সময় কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা সংক্ষিপ্ত এক বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রবাসের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের নানা উদ্যোগে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে ‘প্রবাস-বান্ধব’ ও ‘জন-বান্ধব’ শেখ হাসিনা সরকারের প্রদত্ত একটি অঙ্গিকারের পরিপূরক দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়েছি,যার নির্দেশ সবসময় পাচ্ছি পররাষ্ট্র মন্ত্রী মহোদয়ের কাছ থেকে।’
পারিবারিক আমেজ এবং হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে সংক্ষিপ্ত এ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এবং বাংলাদেশের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এ সময় বিশিষ্টজনদের মধ্যে ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সহধর্মীনি সেলিনা মোমেন, নিউজার্সির হেল্ডন সিটির কমিশনার দেওয়ান বজলু এবং নিউ হ্যামশায়ার স্টেটের রিপ্রেজেনটেটিভ আবুল খান।
উল্লেখ্য, পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্স্যুলেট অফিসে প্রবেশের সময় বিভিন্নসেবা নিতে আসা প্রবাসীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সেই কার্যক্রম অব্যাহত রেখেই ভেতরে মুক্তিযোদ্ধা-জনতার এ পর্বটি অনুষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘের রোহিঙ্গা এবং এলডিসি সম্পর্কিত শীর্ষ বৈঠকে অংশ নিতে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।