১০ দফা দাবীতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি

প্রকাশিত: ১০:১২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৬, ২০২৪

১০ দফা দাবীতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি

অবিলম্বে বৃহত্তর জৈন্তিয়ার ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ প্রদান করুন-বৃহত্তর জৈন্তিয়া উন্নয়ন পরিষদ

সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা তথা বৃহত্তর জৈন্তিয়ার ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ, সকল পাথর,বালু কোয়ারী খুলে দেয়া সহ বৈষম্যের শিকার ১৭ পরগনা খ্যাত বৃহত্তর জৈন্তিয়াবাসীর ১০ দফা ন্যায্য দাবী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে বৃহত্তর জৈন্তিয়া উন্নয়ন পরিষদ।

মঙ্গলবার (২৬নভেম্বর) দুপুরে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ এর নিকট স্মারকলিপিটি হস্তান্তর করেন বৃহত্তর জৈন্তিয়া উন্নয়ন পরিষদের নেতৃবৃন্দ। স্মারকলিপি প্রদানের পূর্বে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মুখে এক সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমাদের দাবী ন্যায্য দাবী। এটি আমাদের অধিকার।তারা বলেন, বৃহত্তর জৈন্তিয়া তথা জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাধারণ জনগণের জীবনমান উন্নয়ন এবং অবহেলিত,বঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া জৈন্তিয়াবাসীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অরাজনৈতিক সংগঠন বৃহত্তর জৈন্তিয়া উন্নয়ন পরিষদের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।

সভায় বক্তারা বলেন, সিকি শতাব্দী পূর্বে গ্যাস আবিষ্কৃত হলেও জৈন্তিয়ার ঘরে ঘরে এখনো গ্যাস সরবরাহ ও সংযোগ হয়নি। বৃহত্তর জৈন্তিয়ার সাধারণ জনগণ নানাবিধ বৈষম্যের শিকার। বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে সিন্ডিকেটের কারণে পাথর কোয়ারী এখনো বন্ধ আছে। শ্রমিকরা কষ্টে দিনাতিপাত করছে। অভ্যন্তরীণ ও জাতীয় সড়কগুলোর অবস্থা ভালো নয়। সভায় বক্তারা বলেন, বৃহত্তর জৈন্তিয়ার ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ, বন্ধ পাথরকোয়ারী খোলা, এতদঅঞ্চলকে পর্যটন এলাকা ঘোষণা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সংস্কার সহ ন্যায্য দাবী না মানলে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন, বৃহত্তর জৈন্তিয়া উন্নয়ন পরিষদের আহবায়ক এডভোকেট মো: আব্দুল আহাদ, সদস্য সচিব ও সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব সভাপতি মোহাম্মদ গোলজার আহমদ, যুগ্ম আহবায়ক সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও দৈনিক সিলেট বাণীর নির্বাহী সম্পাদক এম এ হান্নান,সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক চেয়ারম্যান সাংবাদিক এম এ রহিম,যুগ্ম আহবায়ক প্রবীণ রাজনীতিবিদ ডা: মোন্তাজিম আলী, যুগ্ম আহবায়ক জৈন্তাপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ফয়েজ আহমদ,যুগ্ম আহবায়ক এডভোকেট এখলাসুর রহমান, এডভোকেট মাহবুব আহমদ চৌধুরী, যুগ্ম আহবায়ক প্রভাষক আসাদুল আলম চৌধুরী, যুগ্ম আহবায়ক হাফিজ নিজাম উদ্দিন,যুগ্ম আহবায়ক সিলেট জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা এহসান উদ্দিন, যুগ্ম আহবায়ক ব্যবসায়ী ইসমাইল আলী আশিক,গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান খোদেজা রহিম কলি, যুগ্ম সদস্য সচিব প্রভাষক মহি উদ্দিন জাকারিয়া, অর্থ সচিব কাজী আব্দুর রহমান আল মিসবাহ, শ্রমিক নেতা মাহবুব হোসেন,কানাইঘাট উপজেলা আহবায়ক মিসবাহুল ইসলাম চৌধুরী, জৈন্তাপুর উপজেলা আহবায়ক মোশাহিদ আলী,প্রবীণ রাজনীতিবিদ মৌলভী আব্দুল খালিক,মো: ইসলাম উদ্দিন মেম্বার , শফিকুর রহমান, মীর জাহান মিলন, মো: আজির উদ্দিন, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন ,সোহেল আহমদ, সিরাজ উদ্দিন, আব্দুল গণি, আজির উদ্দিন আজিজ, আজিজুর রহমান, কবির আহমদ, গোলাম মোস্তফা, নজরুল ইসলাম, আমির উদ্দিন, এডভোকেট জাহাঙ্গীর আহমদ প্রমুখ।

স্মারকলিপিতে নিম্নোক্ত ১০ দফা দাবি উল্লেখ করা হয়:
০১। দেশের প্রথম গ্যাস আবিষ্কৃত হয় ১৯৫৫ইং সনে জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুরে। ১ম তৈল আবিষ্কৃত হয় ১৯৮৭ সালে এই হরিপুরে-ই। হরিপুরের এই গ্যাসের উপর ভিত্তি করে দূরবর্তী ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় সারকারখানা স্থাপন ও উৎপাদন সহ সারা দেশে অর্ধ শতাব্দীরও বেশী সময় ধরে গ্যাস সরববরাহ করা হলেও অদ্যাবধি বৃহত্তর জৈন্তিয়াবাসীরা গ্যাস পায়নি। গ্যাস সংযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে দাবী ও আন্দোলন করা সত্ত্বেও এ অঞ্চলের মানুষ অদ্যাবধি গ্যাস সংযোগ পায়নি। যে জনপদের বুকের নীচ থেকে গ্যাস তুলে পুরো জাতি সেই পঞ্চাশের দশক থেকে ব্যবহার করে আসতেছে, সেই বঞ্চিত জনপদ বৃহত্তর জৈন্তিয়াবাসী দীর্ঘ ৬৯ বৎসর পর আজও গ্যাস সংযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছে। অতীতের রাজনৈতিক সরকারগুলো তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে ও রহস্যজনক অবহেলা ও বৈষম্যের কারণে জৈন্তিয়াবাসীকে গ্যাস সংযোগ থেকে বঞ্চিত রেখেছে। এদিকে শুধু জৈন্তাপুরে বিপিএল গ্যাসফিল্ড থেকেই জাতি বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার গ্যাস নিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি গোয়াইনঘাট উপজেলায় হরিপুরের পাশে আরেকটি বিশাল গ্যাস ও তৈলকূপ আবিষ্কৃত হয়ে উত্তোলন শুরু হয়েছে। নিয়মিত আয় করে চলছে। জৈন্তাপুরের গ্যাসের এই আয়ের এক বা দুই বছরের আয় থেকে ৫%-১০% অর্থ মাত্র একবার বা দুইবার ব্যয় করলেই বৃহত্তর জৈন্তিয়ার ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। তাই অবিলম্বে বৃহত্তর জৈন্তার লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণের দাবী অবিলম্বে বৃহত্তর জৈন্তার চার উপজেলার ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ প্রদানের কার্য্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা একান্ত আবশ্যক।

০২। বৃহত্তর জৈন্তিয়ার পাথর ও বালু কোয়ারীগুলো দেশের সেরা খনিজ বালু পাথর কোয়ারী বটে।উপরোক্ত পাথর বালু কোয়ারীগুলো ২০১৩-২০১৪ সাল থেকে কিছু NGO এর স্থানীয় প্রতিনিধিদের ভুল ও অসম্পূর্ণ পর্যবেক্ষণ ও তথ্যকে পুঁজি করে পরিবেশ নষ্টের অসত্য ও অগ্রহণযোগ্য দাবীর দোহাই দিয়ে দেশের সেরা এই পাথর, বালু কোয়ারীগুলো জন আকাঙ্খা ও জনস্বার্থের বিপরীতে বন্ধ করে রাখা হয়েছে । ফলে জাফলং, শ্রীপুর বিছনাকান্দি,ভোলাগঞ্জ,লোভাছড়া,সারী,বড়গাঙ্গ প্রভৃতি কোয়ারীগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। অবিলম্বে এগুলো আইন অনুসারে খোলে দিতে হবে।

০৩। বৃহত্তর জৈন্তিয়ার সুরমা, সারী, পিয়াইন নদী সহ অপরাপর নদ- নদীগুলোর বিশাল পানির প্রবাহকে সংরক্ষণ ও সেচ ব্যবস্থা গড়ে তুলার মাধ্যমে উক্ত চার উপজেলার অনাবাদী ও অর্ধ্ব অনাবাদী হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমিকে নিয়মিত ও আধুনিক চাষাবাদের আওতায় জনস্বার্থে একান্ত আবশ্যক।

০৪। বৃহত্তর জৈন্তিয়ার এই চার উপজেলার কৃষি ভূমিকে খরস্রোতা সারী, পিয়াইন, সুরমা নদী সহ বিভিন্ন নদীর বন্যা ও প্লাবন থেকে রক্ষার জন্য নদী খনন সহ ব্যাপক ও সমন্নিত ডাইক নির্মাণ ও বেড়িবাধ প্রকল্প গ্রহণ, বৃহত্তর জৈন্তিয়ার সকল হাওর বিল, জলাশয় গুলোকে মহাল সামিল জলকর আইনের আওতায় বিনি মোতাবেক জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া আবশ্যক বটে।

০৫। জাফলং, লালাখাল, সাদাপাথর, রাতারগুল, শ্রীপুর জৈন্তিয়া রাজবাড়ী বিছনাকান্দি সমৃদ্ধ বৃহত্তর জৈন্তিয়াকে “পর্যটন এলাকা” ঘোষণাপূর্বক প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ সহ পর্যটন উপযোগী সামগ্রীক কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা আবশ্যক।

০৬। জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরকে পৌরসভা ঘোষণা করা আবশ্যক।

০৭। ঢাকা-সিলেট-তামাবিল ও (ছয়) লেন মহাসড়ক প্রকল্প জনস্বার্থকে প্রধান্য দিয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন করা এবং এই প্রকল্পের অধীনে জনগণ থেকে অধিগ্রহণকৃত ও ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি ও স্থাপনা ইত্যাদির বিষয় জনসাধারণকে দ্রুত, হয়রানীমুক্ত বিনিময় ও ক্ষতিপূরণ প্রদান করে দ্রুত জনগণের পাওনা ও পরিশোধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত আবশ্যক।

০৮। এছাড়া বিগত সরকারের স্থানীয় ও ঢাকার কতিপয় সংসদ সদস্য সহ সুবিধাভোগী কিছু ব্যক্তিবর্গ অবৈধ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে একটি প্রাইভেট সংস্থা/কোম্পানী নামে “জাফলং ভ্যালি বোডিং স্কুল” নাম দিয়ে একটি ব্যক্তিগত প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান খুলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের নামে জৈন্তাপুর উপজেলার ২নং জৈন্তাপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য মন্ডিত কয়েকশত বিঘা/একর সরকারী খাস ভূমি রাতারাতি অবৈধ ও যোগাযোগী মূলক বিশেষ পন্থায় লীজ গ্রহণের নামে জৈন্তিয়াবাসীর মূল্যবান সরকারী বিশাল খাস ভূমি জবর দখল করে আছে। অনতিবিলম্বে উক্ত স্কুলের নামে অবৈধ লীজ গ্রহণ করা কয়েকশত বিঘা/একর জায়গা লীজ বাতিল করে স্কুলে স্থাপনা অধিগ্রহণ করে সরকারীভাবে বৃহত্তর জৈন্তিয়াবাসী তথা সমগ্র জাতির জন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত পরিবেশে ‘জৈন্তিয়া বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া সময়ের দাবী।

০৯। বৃহত্তর জৈন্তিয়ার কেন্দ্রস্থলে সিলেট তামাবিল মহাসড়ক সংলগ্ন সারীঘাট দরবস্ত অঞ্চলে কমপক্ষে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ সহ একটি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন এবং উক্ত চার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো আধুনিকায়ণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক বটে।

১০। এছাড়া বৃহত্তর জৈন্তিয়া থেকে আহরিত প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল,পাথর, বালু থেকে আয়ের ন্যূনতম ১০%-১৫% আয় বৃহত্তর জৈন্তিয়ার উপজেলাগুলোর অবকাঠামো নির্মাণ সহ জনগণের জীবনমানের সার্বিক উন্নয়নে ব্যয় করার জন্য বরাদ্ধ করা এবং বিপিএল সহ খনিজ ও স্থানীয় সরকারী-বেসরকারী বাগান ও শিল্প প্রকল্পগুলোতে ৩০% স্থানীয়দের থেকে নিয়োগ দেওয়ার বিধান সহ এই চার উপজেলায় প্রতিটি গ্রাম জনপদকে পাকা সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা এবং বৃহত্তর জৈন্তায়াবাসীর উন্নয়নের সার্বিক লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করে সামগ্রীক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা একান্ত আবশ্যক বটে।

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ