মুসলমানদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করতে জঙ্গীরা কাজ করছে-আইজিপি

প্রকাশিত: ৩:৪৭ অপরাহ্ণ, |                          

ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বিপিএম(বার),পিপিএম বলেছেন,মুসলমানদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করতে জঙ্গীরা কাজ করছে। এক্ষেত্রে কোন ধর্মীয় গোষ্ঠী জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। মুসলমানদের খাটো করতে কেউ কাজ করছে কি না তাও দেখতে হবে। মুসলমানদের জঙ্গী ও উগ্রবাদী হিসেবে চিত্রায়িত করার সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না।

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন সোমবার বাংলাদেশ পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিটের উদ্যোগে আয়োজিত ‘উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ইমাম, আলেম ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এন্টি টেররিজম ইউনিটের ডিআইজি (প্রশাসন) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ পিপিএম এর সভাপতিত্বে সিলেট জেলা পুলিশ লাইন্সে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পুলিশ সুপার এম শামসুল হক মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন,বাংলাদেশ পুলিশের আ্যডিশনাল আইজি এন্টি টেররিজম ইউনিটের প্রধান এস এম রুহুল আমিন, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ সিদ্দিকী এনডিসি ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ এসএমপি’র পুলিশ কমিশনার জাকির হোসেন খান পিপিএম। কর্মশালায় মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, সিলেট রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমান বিপিএম(বার)।এতে আরো বক্তব্য রাখেন, সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান, সিলেট জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি বলেন, পৃথিবীতে অনেক বড় বড় হত্যাকান্ড ঘটেছে। যখনই পৃথিবীর কোথাও জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটে তখন সাইট ইন্টিলিজেন্স এটি সবার আগে জানায়। সব খবর পায় রীতা খাস। তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, তারা সবার আগে তথ্য পায় কিভাবে? মুসলমান কোন দেশ থেকে নয় জঙ্গীর খবরগুলো প্রকাশ পায় অমুসলিম দেশ থেকে। তিনি বলেন বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ দমনে সরকার অনেক আগ থেকেই কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের বা জঙ্গী কার্যক্রমে সম্পৃক্তদের আমরা বুঝানোর চেষ্টা করছি জিহাদের নামে মুসলমানদের হত্যা করা ঠিক নয়। জঙ্গীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসার কার্যক্রম তুলে ধরে তিনি বলেন, শুধু আর্থিক, সামাজিক, ধর্মীয় কোন বিষয় জঙ্গীবাদের একক কারণ নয়। এটি মুসলমানদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র।একজন লোক সমাজে জঙ্গী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া কি কোনো সম্মানের এই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, পুলিশ বিপথগামীদের আলোর পথে নিয়ে আসার কাজ করছে।

আইজিপি আরো বলেন, তরুণদের জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নত হতে হবে। অপরাধ, কিশোর অপরাধ সম্পর্কে আমরা বুঝিয়েছে। এরপর কেউ সংশোধন না হলে, সুপথে না আসলে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য হব। তিনি বলেন, অপরাধ দমনে বাংলাদেশ আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব সামর্থ্য আছে। এখন আর লুকিয়ে লুকিয়ে কেউ কিছু করতে পারবে না। তিনি সাইট ইন্টিলিজেন্স এর কথা পুনরাবৃত্তি করে বলেন, মুসলমান ও মুসলমান দেশ কেউ জানে না। তারা জেনে ফেলে। পুলিশ প্রধানবলেন,উগ্রবাদী,জঙ্গীবাদী,সন্ত্রাসী,নাশকতা,অস্থিতিশীল সৃষ্টিকারী সব দমন করা হবে।২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে সমাজের সব মানুষকে একযোগে কাজ করতে তিনি আহবান জানান।

আ্যডিশনাল আইজিপি রুহুল আমিন বলেন, ইউরোপের লোকেরা বলে সন্ত্রাসবাদ মানে ইসলাম। এটি ঠিক নয়। এটি ইসলামের উপর প্রোপাগান্ডা। মুলত ইহুদীরা সন্ত্রাসবাদের সূচনা করে। ইসলামের নামে সন্ত্রাস শুরু হয় ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা:)কে ছুরিকাঘাত করার মধ্য দিয়ে।সন্ত্রাসীরা বলেছিল আলী নাকি খারিজ হয়ে গেছেন ইসলাম থেকে। তিনি বলেন, ১৯৯২ সালে জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদার জন্ম হয় আফগানিস্তানে।তারা তথাকথিত জিহাদ রপ্তানী করে দেশে দেশে। ১৯৯২ সালে এদেশে হরকাতুল জিহাদ নামক জঙ্গী সংগঠন তৈরি করেন মুফতি হান্নান। হুজির সাথে জিহাদের প্রক্রিয়া নিয়ে মতবিরোধ হলে আরেকটি জঙ্গী সংগঠন জেএমবি তৈরী হয় ১৯৯৮ সালে। তারা যশোরে উদীচির অনুষ্ঠানে হামলা করে।

মুল প্রবন্ধে ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমান বলেন, আগে মাদরাসা ছাত্ররা সন্ত্রাস করতো নব্বইয়ের দশকে। এখন ডাইভার্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে ইংলিশ মিডিয়াম পড়ুয়ারা সন্ত্রাসের সাথে সম্পৃক্ত।তিনি বলেন, ইসলামে সন্ত্রাসবাদের স্থান নেই। রাসুল (সাঃ) ও চার খলিফা সন্রাসবাদের মোকাবেলা করেছেন। তিনি মহানবীর আদর্শ ও জীবনী থেকে শিক্ষা গ্রহণের আহবান জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলায় সন্ত্রাসবাদের ঠাঁই হবে না।

কর্মশালায় এসএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সদর ও প্রশাসন) মোঃ জোবায়েদুর রহমান পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মুঃ মাসুদ রানা, উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর ও প্রশাসন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) তোফায়েল আহমেদ, উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাঃ সোহেল রেজা, পিপিএম-বার, (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত), উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মোঃ আজবাহার আলী শেখ, পিপিএম, (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত), উপ-পুলিশ কমিশনার (পিওএম) মোঃ জাবেদুর রহমান, উপ-পুলিশ কমিশনার (ইএন্ডডি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব, উপ-পুলিশ কমিশনার (সিটিএসবি) ইমাম মোহাম্মদ শাদিদ, উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) তাহিয়াত আহমেদ চৌধুরী, উপ-পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) বি.এম. আশরাফ উল্যাহ তাহের, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি, সিটি এন্ড সিসি,পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) অতিরিক্ত দায়িত্বে এডিসি (সদর ও প্রশাসন) শাহরিয়ার আলম, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সিটিএসবি এবং মিডিয়া, সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সিলেট রেঞ্জের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং আলেমগণসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।