সুনামগঞ্জের ছাতক সুরমা ব্রীজটি কিংবদন্তি বাউল শিল্পী দূর্বিন শাহ’র নামে নামকরণ করার দাবী

Jaber Jaber

Ahmed

প্রকাশিত: ৬:৪৮ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৬, ২০২০ | আপডেট: ৬:৪৮:পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৬, ২০২০

এইচ এম,দবির তালুকদার
বাংলাদেশের স্বনামধন্য বাউল শিল্পী, মরমী কবি জাতীয় মানের কালজয়ী বাংলা গানের রচয়িতা ও সুরকার সুফি সাধক দুর্বিন শাহ l জন্ম ১৩২৭ বঙ্গাব্দের ১৫ কার্তিক (১৯২০ খ্রিস্টাব্দ এর ২ নভেম্বর) বর্তমান সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক, সুরমা নদীর উত্তর পারে নোয়ারাই গ্রামের তারামনি টিলায়,বর্তমান প্রচলিত নাম দুর্বিন টিলা l
স্বনামধন্য বাউল শিল্পী দুর্বিন শাহ’র জন্মস্থান সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার কূল ঘেঁষে বয়ে গেছে সুরমা নদী,নদীর উপর নির্মিত ব্রিজ এর নাম দূরবীন শাহ ব্রিজ করণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী l বাংলাদেশের জন্ম হয়নি তখনো বাংলা ভাষায় রচিত গান বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে গাইতেন বাউল শিল্পীরা,মরমী কবি দুর্বিন শাহ,তাদের অন্যতম একজন l তৎকালীন সম্রাজ্যবাদী শাসকগোষ্ঠী বাঙালির ওপর বিভিন্নভাবে শাসন-শোষণ জুলুম-নির্যাতন নিপীড়ন করত যা ছিল বাঙালির উপর প্রতিদিনের নিয়ম নিয়তী l তখন বাউল শিল্পীরা তাদের নিজের প্রচেষ্টায়,ধর্মান্ধ বর্ণবাদ, জাত গোত্র বিবাদ ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে, গানের মাধ্যমে প্রতিবাদ করে বাঙালি জাতিকে অক্ষ বদ্ধ ও সচেতনতায় উদ্বুদ্ধ করতেন l বাঙালির কৃষ্টি-কালচার শিল্প-সংস্কৃতি ষোল আনায় পরিপূর্ণ হয়, যখন তাতে যোগ হয় জারি সারি ভাটিয়ালি জাদুকরী বাউল গানের সুর l
বাঙালি জাতি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব একটি দেশ পেল,বাংলা ভাষা আর বাংলা গানের অস্তিত্ব স্থায়িত্ব হল,এখন দেশের গান মুক্ত বাতাসে সুর মিশিয়ে রাজত্ব করে l
কিন্তু এখনো এদেশে বদলাইনি স্বনামধন্য মরমী বাউল গানের রচয়িতা,কবি সাহিত্যিক, সাধক বাউল শিল্পীদের ভাগ্য l এখনো এদেশের কৃষক মাঠে কাটে মুক্ত বাতাসে বাংলা গানের সুর মিলায়,পদ্মা মেঘনা যমুনায় মাঝি মনের সুখে ভাটির গানে পাল উড়াই l
মরমী সাধক বাউল শিল্পীর বাংলা গান মিশে গেছে আমাদের প্রাণে,আমাদের সংস্কৃতিতে আর প্রতিটি বাঙালির অস্তিত্বে প্রাণের সাথে l
তাইতো বাউল গানের মাঝে বলে গেছেন তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল,আমি সব ভুলে যাই তবু ভুলিনা বাংলা মায়ের কোল l কিন্তু আমার প্রশ্ন? আমরা কি মনে রাখতে পেরেছি আমাদের বাংলা সংস্কৃতিতে যাদের অবদান ভুলার মত নয় তাদেরকে l
কিন্তু আমরা আজ প্রায় ভুলতে বসেছি,এদেশের স্বনামধন্য মরমী বাউল গানের সাধক শিল্পীদেরকে,যারা সব ভুলে যায় বাংলা মা’কে ভুলেনি l
বাংলা গানের ভুবনে যারা একদিন রাজত্ব করেছেন তারা অনেকেই আজ নেই,স্মৃতি হয়ে আছে গানগুলি আমাদের কাছে,তাদেরকে স্মরণ করি শুধু গানে গানে l
তেমনি একজন বাংলাদেশের স্বনামধন্য মরমী বাউল শিল্পী দুর্বিন শাহ, আমাদের কাছে স্মৃতি হয়ে আছে তার রচিত সুর করা গান গুলি l
বাংলার ইতিহাসে মিলন হয়েছে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী ধর্ম বর্ণ উপগোত্র আঞ্চলিকতার সাম্য,আদি বাংলার সৃষ্টি বিভিন্ন ভাষার সংমিশ্রণে সংস্কৃত বাংলা ভাষা l
তাই তৎকালীন বাংলা সাম্রাজ্যের জাতীয় আঞ্চলিক উজান ভাটি ভিনদেশী শ্রুতিমধুর কথা ও সুরের সংমিশ্রণ ও দিক বিবেচনা করে, গানের শ্রেণী বিভাজন করে গেছেন মরমী কবি সুফি সাধক বাউল শিল্পী দুর্বিন শাহ l
মরমী কবি বাউল শিল্পী দুর্বিন শাহ’র গান, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়, যেমন বাউল সঙ্গীত, লোকসংগীত,বিচ্ছেদ, আঞ্চলিক গণসংগীত , মালজোড়া, জারি, সারি, ভাটিয়ালি, গোষ্ঠ মিলন, রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক পদাবলী, হামদ-নাত, মারফতি, পীর-মুর্শিদ, আলা স্মরণ, নবি স্মরণ, ওলি স্মরণ, ভক্তিগীতি, মনঃশিক্ষা, সুফিতত্ত্ব, দেহতত্ত্ব, কামতত্ত্ব, নিগূঢ়তত্ত্ব, পারঘাটাতত্ত্ব, গানগুলিকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন শিরোনাম ও পদাবলীকে চিহ্নিতl
মরমী কবি বাউল দুর্বিন শাহ’র রচিত কিছু গান তার মধ্যে রয়েছে, নির্জন যমুনার কূলে বসিয়া কদম্বতলে * আমার অন্তরায় আমার কলিজায় * ছাড়িয়া যাইও না বন্ধু রে* পরদেশীরে দূর বিদেশে ঘর * নব যৌবন আষাঢ় মাসে * তোমার মতো দরদী কেউ নাই * বন্ধু যদি হইতো নদীর জল * বেলা গেল সন্ধ্যা হল * আর কি বাকি আছে বল * আমি জন্মে জন্মে অপরাধী * তোমারই চরণে রে * সুখের নিশি প্রভাত হলো* উদয় দিনমণি * শমন লইয়া পিয়ন খাড়া আর কত দিন দেরি * কৃপাসিন্ধু দীনবন্ধু নামটি তোমার সংসারে l
দেশের গন্ডি পার করেছে বাংলা গানের সুর,কিংবদন্তি মরমী বাউল শিল্পী দুর্বিন শাহ জীবন দশায় দেশের গান গাইতে লন্ডনে গিয়েছিলেন ১৯৬৭ সালে l
তার সফরসঙ্গী হয়েছিলেন বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম,গানের সুরে বিমোহিত হয়ে সঙ্গীত প্রেমীরা তাঁকে ‘জ্ঞানের সাগর’ উপাধিতে ভূষিত করেন l
১৯৭৪ সালে কলকাতার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটক তাঁর যুক্তি তক্কো আর গপ্পো চলচ্চিত্রে ব্যবহার করেছিলেন বাউলসাধক দুর্বিন শাহের লেখা ‘নমাজ আমার হইল না আদায়’ শীর্ষক গানটি l
ঢাকার উৎস প্রকাশন থেকে লোকসাহিত্যের গবেষক সুমন কুমার দাশ সম্পাদিত ‘দুর্বিন শাহ সমগ্র’ বই দুর্বিনের সমস্ত রচনা সম্ভার স্থান পেয়েছে l
কিন্ত বর্তমান বাংলাদেশের প্রচলিত নিয়ম হয়ে গেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয় শিল্পপতি এবং রাজনীতিবীদদের নামে l
অতীতের মতই এখনো অবহেলিত বাংলাদেশের মরমী কবি সাহিত্যিক বাউল শিল্পীরা,তাঁরা কথায় সুর দিয়ে এবং লেখনীর মাধ্যমে বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য প্রতিবাদ করে গেছেন আমৃত্যু l
সুতরাং বাংলাদেশের গণমানুষের সময়ের দাবি,অতীতের প্রচলিত নিয়ম বদলে দিয়ে,বাংলাদেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলে, কবি সাহিত্যিক বাউল গানের গুণী শিল্পীদের নামে সরকারি প্রতিষ্ঠান রাস্তাঘাট ব্রিজ এর নামকরণ করা হোক l বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতিতে বেঁচে থাকুক, বাংলার হাজার বছরের অতীত ইতিহাসের সৃষ্টিশীল সেরা মানুষ গুলির নাম l সুনামগঞ্জ বাসীর দাবি বাংলাদেশের স্বনামধন্য বাউল গানের গুণী শিল্পী দুর্বিন শাহ’র নামে নামকরণ করা হোক ছাতকের সুরমা ব্রিজ!